চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রতিদিন তরলবর্জ্য পড়ছে নদীতে হালদা ও কর্ণফুলীর পানিদূষণ

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:৪২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহরের দৈনিক ৩৩ কোটি ১০ লাখ লিটার তরল বর্জ্য হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। এছাড়াও প্রতিদিন কয়েক হাজার মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য এ দুটি নদীতে যাচ্ছে। এতে চরম দূষণের শিকার হচ্ছে নগরীর সুপেয় পানির উৎস হিসেবে পরিচিত হালদা ও কর্ণফুলী নদী। দূষণ প্রক্রিয়া বন্ধ করা না হলে নগরীতে পানি সংকট দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রণীত মাস্টার প্ল্যানে দূষণের এ চিত্র ফুটে উঠেছে।
ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজের ওপর চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রণীত মাস্টার প্ল্যানের তথ্য অনুযায়ী নগরীতে প্রতিদিন তরল বর্জ্য হয় ৩৩ কোটি ১০ লাখ লিটার। নালা-খাল হয়ে এসব বর্জ্য হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। এতে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। অথচ এ দুটি নদী ওয়াসার সুপেয় পানির প্রধান উৎস।
চট্টগ্রাম শহরের সুপেয় পানির চাহিদা মেটানো হয় এ দুটি নদী থেকে। নগরীর মোহরা এবং হাটহাজারীর মদুনাঘাট এলাকার শেখ রাসেল পানি শোধনাগারের মাধ্যমে হালদা থেকে দৈনিক ১৮ কোটি লিটার এবং রাঙ্গুনিয়ার পোমরা এলাকা থেকে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ এর ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার’-এর মাধ্যমে কর্ণফুলী নদী থেকে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করে চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করে ওয়াসা। চলতি বছর কর্ণফুলী নদী থেকে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে আরো ১৪ কোটি লিটার এবং আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে বোয়ালখালী ভা-ালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে আরো ৬ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হবে। এ কারণে চট্টগ্রামের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে এ দুইটি নদীর গুরুত্ব অত্যধিক। কিন্তু তরল ও কঠিন বর্জ্যরে দূষণের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে হালদা ও কর্ণফুলী নদী। মূলত ওয়াসার স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা না থাকায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
তাছাড়া চট্টগ্রামের বেশিভাগ শিল্প কারখানার ইটিপি’র ব্যবস্থা নেই। এতে কারখানার সব তরল বর্জ্য সরাসরি নালা ও খাল হয়ে হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। এতে এ দুটি নদী ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে মাছসহ নদীর জীববৈচিত্র।
ভুক্তভোগীরা জানায়, দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে হালদা। নগরীর বায়েজিদ থেকে কুলগাঁও এলাকার শিল্প কারখানা এবং আবাসিকের বর্জ্য হাটহাজারীর শিকারপুর ও মাদার্শা ইউনিয়নের সাতটি খাল দিয়ে প্রতিদিন হালদায় পড়ছে। বর্জ্যে খালগুলোর স্বচ্ছ পানি কালো হয়ে গেছে। কালোর পানির গন্ধে খাল পাড় দিয়ে হাঁটা যাচ্ছে না। দূষণের শিকার খালগুলো হচ্ছে মাদার্শা ইউনিয়নের খন্দকিয়া, কাটাখালি ও মাদারি এবং শিকারপুর ইউনিয়নের কুয়াইশ, বাথুয়া, হামিদিয়া ও কৃষ্ণখালি খাল। এতে দূষণের মারাত্মক প্রভাব পড়ছে হালদায়। এতে দূষণের মারাত্মক প্রভাব পড়ছে হালদায়।
মাদার্শা এলাকার বাসিন্দা ও সচেতন নাগরিক সমাজের সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘শিল্প বর্জ্যে হাটহাজারীর শিকারপুর ও মাদার্শা ইউনিয়নের সাতটি খালের পানি কালো কুচকুচে হয়ে গেছে। এসব খালে এখন কোনো মাছ পাওয়া যায় না। জেলেরা বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে গেছে। খালের সাথে যুক্ত পুকুরগুলোর পানিও দূষিত হয়ে গেছে। দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে ওজু-গোসল করা যায় না।

পুকুর-বিলে এসব পানি ছড়ানোয় চর্মরোগেও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এছাড়া খালের দূষিত কুচকুচে পানি হালদা নদীতে ছড়িয়ে পড়ার কারণে রুইজাতীয় মাছের প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীও হুমকির মুখে রয়েছে।হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘শিল্প কারখানার বর্জ্যে কালো হয়ে যাচ্ছে নদীর বিভিন্ন শাখা খাল। এসব খালের কালো পানি পড়ছে হালদায়। এতে দূষেল শিকার হচ্ছে হালদা।’
নদীর পানি দূষণ প্রসঙ্গে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘এতদিন ধরে ওয়াসার স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা না থাকায় নগরীর সব রকমের বর্জ্য সরাসরি নালা ও খাল হয়ে হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। এতে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। অথচ এ দুটি নদী ওয়াসার সুপেয় পানির প্রধান উৎস। বর্তমানে কর্ণফুলী ও হালদা নদী থেকে দৈনিক ৩২ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলনকৃত পানির মধ্যে হালদা থেকে মদুনাঘাট প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি লিটার ও মোহরা পানি শোধনাগারের জন্য ৯ কোটি লিটার এবং কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ এর শেখ হাসিনা পানি শোধনাগারের অধীনে ১৪ কোটি লিটার। এছাড়া ২০২০ সালে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ এর জন্য দৈনিক আরো ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হবে। পরবর্তীতে বোয়ালখালীর ভা-ালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে আরো ৬ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হবে। তাই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ওয়াসা স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর পানি দূষণ অনেকখানি হ্রাস পাবে।

লেখক ঁ নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট