চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চরম তাপমাত্রা চট্টগ্রামে

বহিরাঙ্গন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি

শরিফা জাহান নূন

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

জলবায়ু শ্রেণি বিভাগ অনুযায়ী চট্টগ্রাম ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত। যা কিনা মানব সৃষ্ট এবং প্রাকৃতিক কারণে এখন অনেকটাই বিপর্যস্ত। বিশ্বের জলবায়ু বিপন্ন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম এবং সমুদ্র নিকটবর্তী হওয়ায় চট্টগ্রাম বাংলাদেশের জলবায়ু বিপন্ন এলাকাগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে।

যেসব প্রাকৃতিক ঘটনা বা দুর্যোগ সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করে সেগুলোকে চরম ঘটনা বলে। হারিকেন, টাইফুন, টর্নেডো, বন্যা, অতিগরম, অতিঠা-া, ভূমিকম্প, সুনামি, আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণ ইত্যাদি চরম ঘটনার উদাহরণ। এসকল ঘটনা কয়েক ঘণ্টা অথবা দুই থেকে তিন দিন স্থায়ী থাকে এবং এতে বিপুল পরিমাণ মানুষ মারা যায়। ক্ষতি হয় বিপুল পরিমাণ সম্পদের। ধ্বংস হয়ে যায় অবকাঠামো। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
চরম তাপমাত্রা বর্তমান সময়ের চরম ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। চরম তাপমাত্রায় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, এছাড়া আর্থ-সামাজিক প্রভাবও রয়েছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং বহিরঙ্গনের কর্মজীবী মানুষ যেমন : রিকশাচালক, নির্মাণ শ্রমিক, ফেরিওয়ালা চরম তাপমাত্রায় সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। গরমের তীব্রতা বেশি থাকে এপ্রিল, মে, জুন মাসে এবং নিম্নআয়ের মানুষগুলোকে তীব্র গরমে জীবিকা নির্বাহের জন্য সরাসরি প্রখর তাপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর অনুযায়ী গত ২৪/০৪/২০১৯ ইংরেজিতে তারিখে চট্টগ্রাম শহরের দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এপ্রিল মাসের শেষের দিকে এবং মে মাসের পুরোটা জুড়ে চট্টগ্রাম শহরের দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজমান ছিল ৩৪ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নিকট ভবিষ্যতে বিরাজমান এই তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে আর ও বাড়বে এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হবে। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে নি¤œআয়ের মানুষ। যার সামাজিক এবং আর্থিক প্রভাব অনেক বেশি।

বহদ্দারহাট, নিউ মার্কেট, চকবাজার, জিইসি, ওয়াসা, পাহাড়তলীসহ চট্টগ্রাম শহর এবং শহরের বাইরের রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা এবং নির্মাণ শ্রমিকরা অতি গরমে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। গরমের রোগের মধ্যে অন্যতম হল ফুসকুড়ি, ভাইরাস জ্বর, হিটস্ট্রোক, অ্যাজমা, জন্ডিস, ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি। অতিগরমে শ্রমজীবী মানুষেরা বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি পান করে যা বেশির ভাগ সময় বিশুদ্ধ থাকে না। শরীর থেকে ঘাম নিঃসৃত হয় বলে শার্ট ভেজা থাকে এবং গরমে খাবার সহজে নষ্ট হয়ে যায়, এসকল কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। গরমের প্রখরতা থেকে নিজেদের বাঁচাতে শ্রমজীবী মানুষর দৈনিক ৪-৬ লিটার পানি পান করে। মাঝে মাঝে স্যালাইন এবং শরবতও পান করে। তাঁদেরকে প্রতিদিন ৭-১০ ঘণ্টার মত কাজ করতে হয়। বেশির ভাগ সময় রোদের প্রখরতা যখন বেশি থাকে তখন তাঁরা ক্লান্ত হয়ে গাছের নিচে অথবা বিল্ডিংয়ের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়। কেউ কেউ গরম থেকে বাঁচার জন্য মাথায় গামছা অথবা টুপি রাখে। মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্লান্তিভাব কাজের প্রতি মনোযোগ কমিয়ে দেয় যা তাঁদের উপার্জন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বেশির ভাগ শ্রমজীবীদের মতে চরম তাপমাত্রার চেয়ে ভাল একটা আবহাওয়ায় বেশি সময় ধরে কাজ করা যায় এবং উপার্জনও বেশি হয়। অতিরিক্ত গরমে মেজাজ খুব রুক্ষ্ম থাকে এবং শীতের তুলনায় উপার্জন কম হয়।

চরম তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে চট্টগ্রাম শহরের বহিরাঙ্গন শ্রমজীবীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। চরম তাপমাত্রায় সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর জন্য নগর কর্তৃপক্ষ সর্বাপেক্ষা সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। একটি সুন্দর নগরের পরিকল্পনা অতিতাপমাত্রায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা শ্রমজীবী মানুষদের জীবনকে আরও সহজ করে দিতে পারে।
করণীয় পদক্ষেপ :
১. বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা
২. বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ছাউনির ব্যবস্থা করা
৩. নগরে বৃক্ষরোপণ অভিযান চালানো এবং সবুজ ছাদ বাগান গড়ে তোলা। এতে করে নগরের অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়বে এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রা অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে।
লেখক ঁ পরিবেশক লেখক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট