চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ঈমানের সাথে তারাবির নামাজ আদায় আগের গুনাহ নেবে বিদায়

২৫ মার্চ, ২০২৩ | ৪:৫৪ অপরাহ্ণ

রমজান মাস হলো সিয়াম সাধনার মাস, ইবাদতের মাস। প্রতিটি দিন যেমনি আমাদের কাছে দামি, ঠিক তেমনি প্রতিটি রাতকেও আল্লাহ মর্যাদা দিয়েছেন। তাই রমজান মাসে ইবাদতের মূল্য বেশি। দিনের বেলায় রোজা রাখা ফরজ। রাতজেগে ইবাদত সুন্নত। দিনে রোজা রাতের বেলায় সুন্নত আদায়ের জন্য তারাবির নামাজ দিয়েছেন আল্লাহ।

মুহাম্মদ (সা.) ৪ রাকায়াত তারাবির নামাজ পড়ে আরাম করতেন। সেই কারণে এই নামাজের নাম হলো তারাবি বা আরামের নামাজ। তাই তারাবির নামাজের মধ্যে প্রতি ৪রাকায়াত পর কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নেয়া উত্তম। সারাদিন রোজা ও কাজ শেষে সাহাবায়ে কেরাম ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। তাই এভাবে ধীরে ধীরে বিশ্রাম নিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করতেন।

হাদীসের মধ্যে রাসুল (সা) ইরশাদ করেন, রমজান মাসে যারা কিয়ামে রমজান করবে, অর্থাৎ রমজানের রাতে ইবাদত করবে,আল্লাহপাক তাদের পূর্বের সব গুণাহ ক্ষমা করবেন। রমজানে অতিরিক্ত নফল নামাজ এশার নামাজের পরেও হতে পারে আবার ফজরের আগেও হতে পারে । রাতের প্রথম অংশের নাম হলো তারাবি এবং শেষের অংশ হলে নাম দেয়া হয়েছে তাহাজ্জুদ বা কিয়ামুল লাইল। তারাবি শুধু রমজানে হয় আর তাহাজ্জুদ সারা বছর পড়তে হয়।
মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়ত লাভের ৩ বছরের মাথায় নবীর জন্য তাহাজ্জুদের নামাজ ফরজ ছিল। এক বছর পর ফরজ বাতিল হয়। এরপর থেকে নফল হিসেবে সাহাবায়ে কেরাম তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। নবুয়তের ১১বছরে মে’রাজ রাতের মধ্যে ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন আল্লাহপাক। তখন থেকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ উম্মতের জন্য ফরজ হয়ে গেল। তাহাজ্জুদের নামাজ ইসলামের শুরু থেকে ছিল। তারাবির নামাজ ইসলামের শুরু থেকে ছিল না। তারাবির নামাজ এসেছে নবুয়তের ২২ বছর পর। যে বছর রাসুল (সা.) ইন্তেকাল করেন। সে বছর তারাবির নামাজ সুন্নত করে দেয়া হয়। অর্থাৎ ১০ম হিজরীতে।

তারাবির নামাজ প্রথম থেকে সুন্নত। তাহাজ্জুদের নামাজ নবুয়তের ৩য় বছর ফরজ ছিল। পরবর্তীতে ১ বছর পর নফল হলো। ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হবার পর আবার সুন্নত হিসেবে স্থির হলো। আল্লাহ কোরআন শরীফে তাহাজ্জুদের নামাজের অনেক মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। মুমিনরা আল্লার কাছে ক্ষমা চায় তাহাজ্জুদের সময়। মুমিনরা শেষ রাতে উঠে আল্লাহপাকের জিকির করে। শেষ রাতের দিক আল্লাহপাকের নিকট বেশি প্রিয়। সবচেয়ে বেশি দোয়া কবুল হয় এই সময়ে।

আল্লাহ বলেন, “আমার কোন বান্দা আছে কি, আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার। আমি তাকে ক্ষমা করবো। রিজিক তালাশ করলে তাকে রিজিক দেব। বিপদগ্রস্থ ব্যাক্তিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবো”।

মুহাম্মদ (সা.)বলেন, ৬টি সময়ে বেশি দোয়া কবুল হয়। ৫টি হলো ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর আর ৬ষ্ঠটি হলো শেষ রাতের মধ্যে তাহাজ্জুদের সময়। সেই দোয়া আল্লাহ বেশি বেশি কবুল করেন। তাই এই তাহাজ্জুদের নামাজ উম্মতের জন্য সুন্নত হলেও নবীর জন্য ওয়াজিব ছিল। আল্লাহপাক বলেন, হে আমার হাবীব শেষ রাতের মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করুন। আল্লাহ আপনাকে মাকামে মাহমুদে পৌঁছে দেবেন। সুবহানাল্লাহ। তাই নবীজি প্রতিরাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন।

মক্কা শরীফে তারাবির ৪ রাকায়াত শেষে বিরতির সময় কাবা শরীফ নফল তওয়াফ করা হতো। মদীনা শরীফে সে সুযোগ নেই। বিরতির সময় তাই তারা নফল নামাজ পড়ে নিতেন ৪ রাকায়াত। হযরত ঈমাম মালেক (রহ.) মদীনা শরীফে থাকতেন। সেই কারণে ৪ রাকায়াত করে ১৬ রাকায়াত নফলসহ ৩৬ রাকায়াত পড়তেন।

সবাই একমত কমপক্ষে ২০ রাকায়াত তারাবির নামাজ পড়া সুন্নত। এখন রাসূল (সা) কয় রাকায়াত পড়েছেনে তা স্পষ্ট নয়। ১টি হাদীসে এসেছে রাসূল (সা) তারাবির নামাজ ৮ রাকায়াত পড়েছেন। অপরটিতে এসেছে তিনি ২০ রাকায়াত পড়েছেন। দুটি হাদীসই দূর্বল। কোন সহীহ হাদীস দ্বারা রাসূল (সা) কয় রাকায়াত পড়েছেন তা স্পষ্ট নয়।

আহলে হাদীসরা একটি বোখারী শরীফের হাদীস দিয়ে বললেন, আয়েশা (রা) বলেছেন, রাসূল (সা.) গায়েবে রমজানে ৮ রাকায়াতের বেশি পড়তেন না, ৪ রাকায়াত করে পড়তেন। গায়রে রমজান মানে রমজান ছাড়া বাকী ১১মাস। এটা তারাবি নয়,তাহাজ্জুদের নামাজ। তারাবি গায়বে রমজানে হয়না। শুধু রমজানে হয়। আয়েশা (রা)এমন নামাজের কথা বলেছেন, যার সারবস্তু হলো, তাহাজ্জুদের নামাজ।

ঈমাম বোখারী (রহ.)-এর জীবনীতে এসেছে, তিনি রমজানে কোরআন ৪১ খতম করতেন। কিভাবে করতেন? প্রত্যেকদিন দিনের বেলায় এক খতম। ছাত্রদের নিয়ে তিনি এশার নামাজের পর ৩০ রমজানে এক খতম করতেন। একাকি তাহাজ্জুদের সময় তিনদিন মিলে এক খতম করতেন। ৮ রাকায়াত তাহাজ্জুদের নামাজে। তিনদিনে এক খতম ৩০দিনে ১০ খতম। এতে সহজেই বুঝা যায়, ৮রাকায়াত তারাবির ব্যাপার নয়, তা ছিল তাহাজ্জুদের ব্যাপারে।
দুই রাকাআত করে তারাবীহ নামাজ আদায় করতে হয়। দুই দুই রাকাআত করে প্রতি ৪রাকাআত পরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হয়। বিশ্রামের এ সময়টিতে তাসবিহ, তাহলিল ও আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়। অনেককে দেখা যায় ৭দিনে খতমে তারাবি শেষ করেন। আর অংশগ্রহণ করেন না, এটা উত্তম নয়। এখানে খতম উদ্দেশ্য নয়, প্রতিদিন তারাবি পড়া উদ্দেশ্য। প্রত্যেকদিন তারাবি পড়তে হবে। আগে শেষ করে শেষের দিকে গুরুত্ব কম দেয়া হয়। অথচ উচিত শেষের ১০দিনকে বেশি গুরুত্ব দেয়া।
তারাবির নামাজ কমপক্ষে ২০ রাকায়াত পড়া সুন্নত। ওযর থাকলে কম পড়তে পারেন। রমজানে একটি নফলে আল্লাহ ফরজের সওয়াব দান করেন। ১টি ফরজকে ৭০টি ফরজের মর্যাদা দান করেন। যত বেশি ইবাদত করবো ততবেশি আমাদের জন্য উত্তম। তারাবি ছোট করা রাসূল (সা)এবং সাহাবীদের সুন্নাহ বিরোধী। সেই কারণে কম পড়ার চেষ্টা করবো না।

তারাবির নামাজ ১০ম হিজরীতে অনুমোদিত। নবুয়তের প্রথম থেকে ছিল তাহাজ্জুদের নামাজ। তাহাজ্জুদের নামাজ কোরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। আর তারাবির নামাজ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাহাজ্জুদের নামাজ একাকি পড়া সুন্নত। তারাবির নামাজ জামায়াতে পড়া সুন্নত।

হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বির্ণত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে রমজান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি রমজানে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় তারাবীর নামাজ আদায় করবে , তার আগের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বোখারী:১৭৩৩)

তারাবির বহু প্রচলিত দোয়া : “সুবহানাজিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানাজিল ইয্যাতি ওয়ালআঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানালমালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুতু আবাদান আবাদান সুব্বুহুনকুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।”

আল্লাহ আমাদের সকলকে খতমে তারাবির নামাজের গুরুত্ব বুঝার এবং নেক আমল করার তৌফিক দিন। আমিন।

লেখক: ব্যুরোচিফ, বাংলাভিশন, চট্টগ্রাম

 

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট