চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

রমজানে রোজা রাখার ফজিলত

অনলাইন ডেস্ক

২৪ মার্চ, ২০২৩ | ১২:৪০ অপরাহ্ণ

আজ শুক্রবার। জুমার দিন। ১৭ মার্চ ২০২৩ ইংরেজি, ০৩ চৈত্র ১৪২৯ বাংলা, ২৪ শাবান ১৪৪৪ হিজরি। শাবান মাসের শেষ জুমা আজ। আজকের জুমার আলোচ্য বিষয়- রমজান ও রোজার ফজিলত।

সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই। যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক। যার পরে আর কোনো নবি নেই। রমজান মাসজুড়ে রোজা পালন করা ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে রমজান ও রোজা সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন-
شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡکُمُ الشَّهۡرَ فَلۡیَصُمۡهُ ؕ وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰهُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَ لِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَ لِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا هَدٰىکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন তাতে রোজা পালন করে। আর যে অসুস্থ অথবা মুসাফির থাকে, তাকে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের (জন্য যা) সহজ (তা) করতে চান, তিনি তোমাদের কষ্ট চান না। যেন তোমরা (রোজার) নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করে নিতে পার এবং তোমাদের যে সুপথ দেখিয়েছেন, তার জন্য তোমরা আল্লাহর তকবীর পাঠ (মহিমা বর্ণনা) কর এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

প্রিয় মুসল্লিগণ!
রমজান ও এ মাসে রোজা পালন ফরজ ইবাদত। যেখানে নফল ইবাদত-বন্দেগি করলেই ফজিলত আর ফজিলত। সেখানে ফরজ ইবাদতের ফজিলত তো সীমাহীন। কোরআন-সুন্নায় রমজান ও রোজার অসংখ্য ফজিলত ঘোষিত হয়েছে। যার কিছু আপনাদের সামনে পেশ করছি-
রমজানের ফজিলত
ইবাদতের মহৎ মৌসুম মহিমান্বিত রমজান মাস সমাগত। যে বরকতময় মাসে মহান আল্লাহ তাআলা নেক আমলের সওয়াব সীমাহীনভাবে বাড়িয়ে দেন এবং অফুরন্ত কল্যাণ দান করেন। নেক আমলে উৎসাহী ব্যক্তিদের জন্য কল্যাণের সকল দরজা উন্মুক্ত করে দেন। এটি মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিলের মাস। কল্যাণ ও বরকতের মাস। পুরস্কার ও দানের মাস। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ
‘রমজান মাস, যাতে নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন; যা বিশ্ব মানবের জন্য হেদায়েত, সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৫)

রমজান রহমত, মাগফেরাত এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। যার প্রথমে রহমত, মাঝে মাগফেরাত এবং শেষে রয়েছে জাহান্নাম হতে মুক্তি। এ মহিমান্বিত মাসের ফজিলতের সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনা এসেছে-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
وَمَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
‘… আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা পালন করবে, তারও অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ১৯০১)

রমজানে অধিকহারে নেক আমল করার জন্য এবং আমলকারীদের উৎসাহ প্রদানের জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। আর ঈমানদারদের গুনাহ কম হওয়ার কারণে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।রমজানের এ মোবারক মাসে মানুষকে যেন পথ ভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যেতে না পারে সে জন্য শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। হাদিসে পাকে এসেছে-
২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِين
‘যখন রমজান মাস আগমন করে, তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়।’ (বুখারি ১৮৯৯; মুসলিম ১০৭৯)

রমজানের মূল্যবান পাঁচটি বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে দান করেছেন। যা অন্য কোনো উম্মতকে দান করা হয়নি। আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির প্রতি নেয়ামাত পূর্ণ করে বিশেষ ইহসান করেছেন। এভাবে আল্লাহর কতই না নেয়ামত ও অনুগ্রহ এ উম্মতের উপর ছায়া হয়ে আছে; কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِۗ
‘তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানুষের কল্যাণের জন্যই তোমাদের বের করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। আর আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান রাখবে।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১১০)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
أُعْطِيَتْ أُمَّتِي خَمْسَ خِصَالٍ فِي رَمَضَانَ، لَمْ تُعْطَهَا أُمَّةٌ قَبْلَهُمْ: خُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ، وَتَسْتَغْفِرُ لَهُمُ الْمَلَائِكَةُ حَتَّى يُفْطِرُوا، وَيُزَيِّنُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ كُلَّ يَوْمٍ جَنَّتَهُ، ثُمَّ يَقُولُ: يُوشِكُ عِبَادِي الصَّالِحُونَ أَنْ يُلْقُوا عَنْهُمُ الْمَئُونَةَ وَالْأَذَى وَيَصِيرُوا إِلَيْكِ، وَيُصَفَّدُ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ، فَلَا يَخْلُصُوا فِيهِ إِلَى مَا كَانُوا يَخْلُصُونَ إِلَيْهِ فِي غَيْرِهِ، وَيُغْفَرُ لَهُمْ فِي آخِرِ لَيْلَةٍ ” قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَهِيَ لَيْلَةُ الْقَدْرِ؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنَّ الْعَامِلَ إِنَّمَا يُوَفَّى أَجْرَهُ إِذَا قَضَى عَمَلَهُ
‘আমার উম্মতকে রমজানে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়েছে, যা আগের কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি-
১. রোজা পালনকারীর মুখের না খাওয়াজনিত গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুঘ্রাণ থেকেও উত্তম।
২. ইফতারের আগ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ রোজা পালনকারীর জন্য মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকে।
৩. আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন তাঁর জান্নাতকে সুসজ্জিত করে বলেন, আমার নেককার বান্দাগণ কষ্ট স্বীকার করে অতিশীঘ্রই তোমাদের কাছে আসছে।
৪. দুষ্ট প্রকৃতির শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, ফলে তারা অন্য মাসের ন্যায় এ মাসে মানুষকে গোমরাহীর পথে নিতে সক্ষম হয় না।
৫. রমজানের শেষ রাতে রোজা পালনকারীদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়। বলা হলো- হে আল্লাহর রাসুল! এ ক্ষমা কি কদরের রাতে করা হয়? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘না’, বরং কোনো শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক তখনই দেওয়া হয়, যখন সে কাজ শেষ করে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

রমজানে রোজা রাখার ফজিলত
রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে সব নবি-রাসুলদের ধারাবাহিকতায় উম্মতে মুহাম্মাদির উপরও রোজা রাখার বিধান দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ
হে বিশ্বাসিগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের (রোজার) বিধান দেওয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববতীদের (নবি-রাসুলদের) দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সংযমশীল হতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই দশগুণ থেকে সাতশত গুণ বৃদ্ধি করা হয়। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, কিন্তু রোজা ছাড়া। কেননা তা আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেবো। সে আমার সন্তুষ্টির জন্য কামাচার ও পানাহার পরিত্যাগ করে। রোজা পালনকারীর জন্য রয়েছে দুটি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন রোজার বিনিময়ে আনন্দিত হবে। রোজা পালনকারীর মুখের (না খাওয়াজনিত) ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়েও উত্তম।’ (বুখারি ১৯০৪, মুসলিম ১১৫১)

অন্য বর্ণনায় এসেছে,
لِكُلِّ عَمَلٍ كَفَّارَةٌ، وَالصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ
‘প্রত্যেক আমলেরই কাফফারা আছে। রোজা আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেবো।’ (বুখারি ৭৫৩৮, মুসনাদে আহমাদ ১০৫৫৪)

হাদিসের বর্ণনায় রোজাকে অন্যান্য আমলের বর্ধিত সওয়াব থেকে আলাদা করা হয়েছে। অন্যান্য আমলের সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশত গুণ করার কথা বলা হলেও রোজার ব্যাপারটি আলাদা। কেননা এর সওয়াব সীমাবদ্ধ নয়; বরং আল্লাহ তাআলা রোজার সওয়াব বহু গুণে দান করবেন। কেননা রোজা সবর তথা ধৈর্য থেকে এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّٰبِرُونَ أَجۡرَهُم بِغَيۡرِ حِسَابٖ
‘কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে, কোনো হিসাব ছাড়াই।’ (সুরা যুমার: আয়াত ১০)

ধৈর্য তিন ধরনের। এ তিন ধরণের ধৈর্য রোজার মধ্যে একত্রিত হয়। আল্লাহর আনুগত্যের ওপর ধৈর্যধারণ করা, আল্লাহর হারাম জিনিস থেকে বিরত থাকতে ধৈর্যধারণ করা এবং আল্লাহর ফয়সালাকৃত কষ্টের উপর ধৈর্যধারণ করা। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ، وَالصَّبْرُ ثَوَابُهُ الْجَنَّةُ
‘রমযান মাস ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত।’ (ইবন খুযাইমা ১৮৮৭)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
َالصِّيَامُ جُنَّةٌ، وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ، فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ، فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ
‘ রোজা ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন রোজা পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজা পালনকারী।’ (বুখারি ১৯০৪, মুসলিম ১১৫১)

হজরত আবু উবাইদাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন-
الصَّوْمُ جُنَّةٌ مَا لَمْ يَخْرِقْهَا
‘রোজা ঢালস্বরুপ যতক্ষণ পর্যন্ত তা ভেঙ্গে না ফেলে।’ (নাসাঈ ২২৩৫, মুসনাদে আহমাদ ১৬৯০)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
ثَلَاثَةٌ لَا تُرَدُّ دَعْوَتُهُمْ: الصَّائِمُ حَتَّى يُفْطِرَ
‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। রোজা পালনকারী যতক্ষণ না ইফতার করে।’ (তিরমিজি ৩৪৯৮)

রোজা পালনকারী যদি রাতে নামাজ আদায় করে এবং দিনের বেলায় রোজা পালনের উদ্দেশ্যে শরীরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য পানাহার করে তাহলে তা তার জন্য সাওয়াব হিসেবে ধর্তব্য হবে যেমনিভাবে সে রাতে ও দিনে কাজের জন্য শক্তি বৃদ্ধি করতে ঘুমালে সেটি তার জন্য ইবাদত হবে।

হজরত আবু আলিয়াহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, রোজা পালনকারী গিবত না করা পর্যন্ত ইবাদতে থাকে, যদিও সে বিছানায় ঘুমায়। অতএব, রোজাদার রাত-দিন সব সময়ই ইবাদতে থাকে এবং রোজা অবস্থায় ও ইফতারির সময় তার দোয়া কবুল করা হয়। সে দিনের বেলায় রোজা পালনকারী ও ধৈর্যশীল এবং রাতের বেলায় আহার গ্রহণকারী ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারী। ইমাম তিরমিজি ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেন-
الطَّاعِمُ الشَّاكِرُ بِمَنْزِلَةِ الصَّائِمِ الصَّابِر
‘আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারী, আহারকারীর মর্যাদা হলো ধৈর্যশীল রোজা পালনকারীর মতো।’ (তিরমিজি ২৪৮৬)

রোজা পালনকারীগণ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত
১. যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার ও কামভাব ত্যাগ করেছে বিনিময়ে জান্নাত পাওয়ার আশায়। এ শ্রেণির লোকেরা আল্লাহর সঙ্গে ব্যবসা করেছে। আর যারা উত্তম কাজ করেন তাদের প্রতিদান আল্লাহ নষ্ট করেন না। যারা আল্লাহর সঙ্গে ব্যবসা করবে তারা বিফল হবে না, বরং তারা বিরাট লাভবান হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِنَّكَ لَنْ تَدَعَ شَيْئًا اتِّقَاءَ اللهِ إِلَّا أَعْطَاكَ اللهُ خَيْرًا مِنْه
‘আল্লাহর তাকওয়ার উদ্দেশ্যে যা কিছুই তুমি পরিহার করো, তিনি তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দেবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ ২০৭৩৯)
এসব রোজা পালনকারীকে জান্নাতে তাদের ইচ্ছামত খাদ্য, পানীয় ও নারী দান করা হবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِيٓ‍َٔۢا بِمَآ أَسۡلَفۡتُمۡ فِي ٱلۡأَيَّامِ ٱلۡخَالِيَةِ

‘(তাদেরকে বলা হবে) বিগত দিনসমূহে তোমরা যা আগে প্রেরণ করেছ তার বিনিময়ে তোমরা তৃপ্তি সহকারে খাও ও পান করো।’ (সুরা হাক্কাহ: আয়াত ২৪)
হজরত মুজাহিদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, এ আয়াতটি রোজা পালনকারীদের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে।

হজরত ইয়াকুব ইবন ইউসুফ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার কাছে এ মর্মে সংবাদ পৌঁছেছে যে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিনে তার অলিদের (বন্ধুদের) বলবেন, হে আমার বন্ধুগণ! আমি যখনই তোমাদের দিকে তাকাতাম তখনই তোমাদের ঠোঁট খাদ্যাভাবে শুষ্ক (কুঁচকানো) দেখতাম, তোমাদের চোখ বিনিদ্র দেখতাম, পেট ক্ষুধায় কাঁপত, আজকের দিনে তোমরা তোমাদের নেয়ামতে থাকো, তোমরা পরস্পরে পেয়ালা ভরা শরাব পান করো, তোমরা তোমাদের জন্য যা আগে প্রেরণ করেছ তার বিনিময়ে তৃপ্তি সহকারে খাও ও পান করো।

হজরত হাসান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নারী হুর মধুর নদীতে তার সঙ্গে হেলান দিয়ে বসা আল্লাহর বন্ধুকে বলবেন, তুমি পান পেয়ালার পানীয় গ্রহণ করো। আল্লাহ তোমার প্রতি কঠিন গরমের দিনে তাকাতেন, তুমি প্রচণ্ড তৃষ্ণা থাকা সত্ত্বেও পিপাসিত ছিলে। তখন আল্লাহ তোমাকে নিয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ববোধ করতেন। তিনি বলতেন, হে ফেরেশতাগণ! তোমরা আমার বান্দাকে দেখো, সে তার স্ত্রী, কামভাব, খাদ্য ও পানীয় আমার সন্তুষ্টির জন্য আমার কাছে যা কিছু আছে তার বিনিময়ে ত্যাগ করেছে। তোমরা সাক্ষ্য থাকো, আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তিনি সেদিনই তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমাকে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিয়েছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ فِي الجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، يُقَالُ: أَيْنَ الصَّائِمُونَ؟ فَيَقُومُونَ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ
‘জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কেয়ামতের দিন রোজা পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাঁদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাঁদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।’ (বুখারি ১৮৯৬)

রমজান মাসে রোজা পালনকারীদের জান্নাতে বিয়ে দেওয়া হয়। জান্নাতের হুরদের মহর হলো দীর্ঘ সময় ধরে তাহাজ্জুদের নামাজ। আর এ নামাজ রমজান মাসে অধিক হারে আদায় করা হয়।

২. কিছু রোজা পালনকারী দুনিয়াতে আল্লাহ ছাড়া সবকিছু থেকেই রোজা পালন তথা বিরত থাকে। তারা তাদের মস্তিষ্ক ও এর চিন্তাধারাকে হেফাজত করে, পেট ও পেটে যা কিছু ধরে সবকিছু সংরক্ষণ করে, মৃত্যু ও মৃত্যুপরবর্তী পরীক্ষাকে স্মরণ করে, তারা আখেরাত কামনা করে এবং দুনিয়ার সমস্ত চাকচিক্য বর্জন করে। এ ধরণের লোকদের ঈদুল ফিতর হবে তাদের রবের সাথে সাক্ষাতের দিন। তাঁকে দেখা হবে তাদের আনন্দ-উল্লাস।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
ولَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ
‘রোজা পালনকারীর মুখের (না খাওয়াজনিত) ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়েও উত্তম।’ (বুখারি ১৯০৪, সহীহ মুসলিম ১১৫১)

হজরত মাকহূল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, জান্নাতিগণ জান্নাতে সুঘ্রাণ পাবে। তখন তারা বলবেন, হে আমাদের রব! জান্নাতে প্রবেশের পর থেকে এত সুন্দর সুঘ্রাণ আর কখনও পাইনি। তখন তাদেরকে বলা হবে- এ হলো রোজা পালনকারীদের মুখের সুঘ্রাণ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন। রোজা ফজিলত ও মর্যাদা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট