চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

মুশরিক আর হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করবেন আল্লাহ

৬ মার্চ, ২০২৩ | ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ

নাসির উদ্দিন
শাবান অত্যন্ত মহিমান্বিত এবং বরকতের মাস। নবীজি বলেন, শাবান আমার এবং রমজান আল্লাহর মাস। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে (মাগরিবের পর দিন শুরু) আমাদের পরিভাষায় বলা হয় শবে বরাত। হাদিসের পরিভাষায় শাবানের মধ্যরাত্রী, লাইলাতুল বরাত। বাংলা, উর্দু, ফার্সিতে আমরা শবে বরাত বলি। শব অর্থ রাত্রি। বরাত অর্থ মুক্তি। আরবিতে লাইলাতুল বরাত এর অর্থ মুক্তির রাত।

সহীহ হাদিসে আছে: শাবানের মধ্যরাতে আল্লাহপাক বান্দা-বান্দিকে বিশেষভাবে পুরস্কার দান করেন। সেটা কি? আল্লাহপাক নিজের পক্ষ থেকে বান্দা-বান্দিদের তাদের গুনাহ, বিভিন্ন নাফরমানি থেকে গড়ে ক্ষমা করে দেন। ক্ষমার পুরস্কার দান করেন। কিন্তু দুই ব্যাক্তিকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। ১. মুশরিক-আল্লার সাথে শরিককারী। ২. যার অন্তরে অন্যের জন্য হিংসা থাকে। মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া সবাইকে আল্লাহ ক্ষমার পুরস্কার দান করেন। আল্লাহ পাকের ক্ষমা থেকে বাঁচতে হলে শিরিক মুক্ত ঈমান এবং হিংসামুক্ত অন্তর অর্জন করতে হবে।

হযরত আয়েশা (রা:) ফরমান: নবীজি আমার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুম ভাঙ্গলে দেখি তিনি নেই। তখন নবীজিকে তালাশ কারার জন্য বের হই। অন্য বিবির ঘর, মসজিদে নববী কোথাও পেলাম না। যখন পেলাম তখন তিনি মদীনা শরীফের বিখ্যাত কবরস্থান জান্নাতুল বাকীতে মোনাজাতে ব্যস্ত। নবীজি জীবিত-মৃত সকল উম্মতের জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। আয়েশা (রা:) আবার দ্রুত ঘরে ফিরলেন।

নবীজি ঘরে ফিরে আয়েশা (রা:)-কে বললেন, তুমি কি আমার ব্যাপারে অন্য ধারণা করছ। আজ তোমার ঘরে থাকার পালা অন্য বিবির ঘরে যাবো? তখন আয়েশা (রা:) বলেন, ইয়া রাসুল্লাহ আপনাকে না দেখে ঘর থেকে বের হয়েছিলাম। তখন নবী বলেন, আল্লার রাসুল কারো সাথে খেয়ানত করবে এটা হতে পারে না।

হযরত জিবরাঈল (আ:) আমাকে (নবীজি) বললেন, আজকের রাত হলো শাবানের মাঝের রাত। এই রাতে আল্লাহ বান্দা-বান্দিদের গড়ে ক্ষমা করবেন। এই কথা শোনার পর আমি ঘুম থেকে উঠে জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে মোনাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আরবের ‘বনিকান’ গোত্রের লোকেরা বেশি ছাগল পালত। এসব ছাগলের পশমের চাইতে বেশি সংখ্যক লোককে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। নবীজি বলেন, একথা শোনার পর আমি ক্ষমা চাইতে চলে যাই জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে। উম্মতের গুনাহর মাফ চাই।

ওইরাতে নবীজি কবরস্থানে গেছেন। কিন্তু সারাজীবনে মাত্র একবারই গেছেন। কাউকে বিষয়টি বলেননি। কাউকে সাথে নেননিও। কিন্তু প্রতিবছর কবরস্থানে যাওয়া, দলবলে যাওয়া, যত কবরস্থান আছে সবগুলোতে যাওয়া, এটা আনুষ্ঠানিকতা হয়ে গেছে। আনুষ্ঠানিকতা করেননি নবীজি। কোন সহীহ হাদিসের মধ্যে নেই সবাই একসাথে একত্রিত হয়ে কবরস্থানে গেছেন। সবাই মিলে একসাথে এবাদত করেছেন। অবশ্যই এই রাতের ফজিলত আছে, যে মাফ চাইবে তাকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন। যিনি চাইবেন না তাকেও ক্ষমা করবেন। শর্ত হলো: শিরিকমুক্ত ঈমান এবং হিংসামুক্ত অন্তর থাকতে হবে।

শবে বরাত থেকে সবার বার্ষিক বাজেট লিখা শুরু হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শবে কদর রাতে তা ফেরেশেতাদের হাতে তুলে দেন। এরপর দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ তা বণ্টন করেন। আল্লাহ এক রাতের মধ্যে সারা বছরের ফয়সালা করেন। কে কি খাবে, কি আয় করবে, খরচ করবে, কে জন্ম নেবে, কার মৃত্যু হবে, ভাল আমল, মন্দ আমল, এবং রিজিক বণ্টন সবই।

হযরত আয়েশা (রা:) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে জোরে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে আয়েশা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা?

নবীজি (সা.) বললেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করে দেন, অন্রগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।

হজরত আলী (রা.) ফরমান: শাবানের মধ্যরাত্রিতে আল্লাহপাক রহমতের ভাণ্ডার নিয়ে নীচের আসমানে আসেন। আল্লার পক্ষ থেকে এ কথা ঘোষণা করা হয়: কেউ গুণাহ মাফ চাইলে বলো, আমি গুণাহ মাফ করে দেব। ভোর পর্যন্ত আল্লার এ ঘোষণা আসতে থাকে। রাতে এবাদত এবং পরদিন নফল রোজা রাখার কথা বলেছেন নবীজি।

এই রাতে গুরুত্বপূর্ণ আমল আল্লাহর দরবারে গুণাহর ক্ষমা চাওয়া। আমল করলে সওয়াব পাবেন, না করলে গুনাহ নেই। হালুয়া রুটি খেলে কোন সওয়াব নেই্। অন্যাদিন খেলে যে অবস্থা এইদিনও একই অবস্থা। আতশবাজি, ফটকাবাজি, লাইটিং এসব অপব্যয় ও অপচয়। কোরআন-হাদীসে এসবের ভিত্তি নেই। এসব কুসংস্কার হিসেবে প্রচলিত। গুণাহ হওয়ার আশংকা আছে। নবীর রিসালতের বিরোধী। নতুন আবিস্কারে দুনিয়ার ক্ষেত্রে গুণাহ নেই। কিন্তু ইবাদতের ক্ষেত্রে নতুন কিছু সংযোজনের সুযোগ নেই। নবী বলেছেন, ‘দিনে রোজা রাখ, রাতে ইবাদত কর’ তাই করা উচিত সবার।

এ মাসজুড়ে বিশ্বনবী একটি দোয়া বেশি বেশি পড়তেন। আর তাহলো-
اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’

অর্থ : হে আল্লাহ! শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করুন আর আমাদের রমজানে পৌঁছে দিন।’
আল্লাহ আমাদের শিরিক ও হিংসা থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ব্যুরোচিফ, বাংলাভিশন চট্টগ্রাম

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট