চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সফল মুমিনের বৈশিষ্ট্য

অনলাইন ডেস্ক

৭ ডিসেম্বর, ২০২২ | ৭:২১ অপরাহ্ণ

প্রত্যেকে সফল হতে চায়। ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি পেতে চায়। পবিত্র কোরআনের সুরা মুমিনুনে মহান আল্লাহ সফল মুমিনদের কিছু বৈশিষ্ট্য বাতলে দিয়েছেন। যারা সফল মুমিন হওয়ার আশা রাখে তাদের সেই বৈশিষ্ট্য অর্জনে সচেষ্ট হওয়া উচিত—

এক: পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, অবশ্যই মুমিনরা সফল হয়েছে, যারা তাদের নামাজে আন্তরিকভাবে বিনীত।

আয়াতে শুধু নামাজ পড়ার কথা বলা হয়নি; বরং ‘খুশু’-এর সঙ্গে নামাজ আদায়ের কথা বলা হয়েছে। ‘খুশু’র অর্থ হলো, বিনয়ের সঙ্গে অন্তরকে আল্লাহর অভিমুখী করা। (তাফসিরে কাবির)

 

নামাজে ইচ্ছাকৃত অন্তরে অন্য কোনো খেয়াল না আনা। অন্য কোনো খেয়াল এসে গেলে সঙ্গে সঙ্গে মন নামাজের অভিমুখী করা। ‘খুশু’ অর্জনের একটা সহজ পদ্ধতি হলো নামাজে যা পড়া হয় তার দিকে ধ্যান রাখা। অর্থ জানা থাকলে অর্থের দিকে খেয়াল করা। দিলের মধ্যে এই অনুভূতি রাখা যে আমি সর্বক্ষমতাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি আমাকে দেখছেন।

যেটাকে আমরা ‘খুঁজু’ বলে থাকি। এর সারকথা হলো, নামাজের মধ্যে প্রতিটি অঙ্গ সুন্নাহসম্মত পন্থায় রাখা। এ জন্য প্রত্যেকের জন্য জরুরি হলো, নামাজে কোন অবস্থায় কোন অঙ্গ কিভাবে রাখতে হয় তার সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি জানা এবং সে অনুযায়ী আমল করা।

 

দুই: পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে। ’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৩) মুমিনের বিশেষ একটি গুণ হলো সে অহেতুক বিষয় থেকে বেঁচে থাকা।

হাদিস শরিফে এসেছে : ‘সুন্দর মুসলিম হওয়ার একটি নিদর্শন হলো, অর্থহীন কাজ ত্যাগ করা। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৮) অহেতুক বিষয় থেকে বেঁচে থাকার সর্বপ্রথম ক্ষেত্র হলো, সব ধরনের গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা। তেমনি এমন কথা, কাজ, লেখা ও চিন্তা থেকে বেঁচে থাকা, যাতে না দ্বিনি কোনো ফায়দা আছে, না দুনিয়াবি কোনো ফায়দা আছে।

তিন: পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যারা জাকাত সম্পাদনকারী। ’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৪) তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হলো, মুমিন সঠিকভাবে জাকাত আদায় করে। জাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। হাদিসের ভাষায় ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। তাই ঈমানের অপরিহার্য দাবি, জাকাত ফরজ হলে জাকাত আদায় করা।

 

চার: পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজ লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। ’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৫)

চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হলো, মুমিন তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। নিজের চাহিদা পূরণের জন্য সে কোনো অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে না। নিজের স্ত্রী ও শরিয়তসম্মত দাসী ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে তার চাহিদা পূরণ করে না। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে আমাকে তার দুই চোয়ালের মধ্যে অঙ্গ অর্থাৎ, জবান এবং দুই পায়ের মধ্যে অঙ্গের (সঠিক ব্যবহারের) জামানত দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হবো। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭৪)

পাঁচ ও ছয়: পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। ’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৮)

এই আয়াতে মুমিনের দুটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে : এক. মুমিন আমানতের হেফাজত করে। আমানতের হেফাজত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। ইসলামে ‘আমানতের হেফাজত’ কথাটার মধ্যে যে ব্যাপকতা আছে এবং এ ক্ষেত্রে মুসলমানদের যে ইতিহাস সংরক্ষিত আছে তা ইসলামের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। হিজরতের প্রসিদ্ধ ঘটনা অনেকেরই জানা আছে। রাসুল (সা.) সেই কঠিন মুহূর্তেও নিজের কাছে গচ্ছিত আমানত আদায়ের জন্য আলী (রা.)-কে মক্কায় রেখে যান। (দ্র. সুনানে কুবরা, বায়হাকি ৬/২৮৯)

 

দুই. মুমিনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, সে কৃত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। এটিও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর (আহদ) অঙ্গীকার পূরণ করো। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৪)

অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা অঙ্গীকার পূরণ করো। ’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ১) কোরআন ও হাদিসে ব্যবহৃত ‘আহদ’ শব্দের ব্যাপক অর্থে অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত। আমাদের পারস্পরিক চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি এই ‘আহদ’-এর অন্তর্ভুক্ত। এটি দুই ব্যক্তির মধ্যে হতে পারে, কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হতে পারে অথবা কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গেও হতে পারে।

 

সাত: ‘যারা নিজেদের নামাজের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করে। ’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৯)

সফল মুমিনের সপ্তম বৈশিষ্ট্য হলো, মুমিন নামাজের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করে। ‘নামাজের রক্ষণাবেক্ষণ করে’ কথাটা ব্যাপক। এর মধ্যে অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত। যেমন—পাবন্দির সঙ্গে নামাজ আদায় করা, কখনো পড়বে কখনো পড়বে না—এমন নয়। সময়মতো নামাজ আদায় করা। জামাতের সঙ্গে আদায় করা। নামাজের অন্য সব শর্ত, আদব ও নিয়ামাবলি রক্ষা করে সুন্দর ও সুচারুরূপে আদায় করা। (তাফসিরে কাবির : ২৩/২৬৩)

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট