চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

টাকারও মৃত্যু হয়… এভাবে

আবদুল মুহিদ

৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:২২ পূর্বাহ্ণ

টাকা কিংবা মুদ্রা ইস্যু করার একচ্ছত্র অধিকার যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের, তেমনি প্রচলনের অযোগ্য নোটের মৃত্যু ঘটে তাদেরই হাতে। টাকার মৃত্যু হয় অনেকটা ফাঁসির আসামির মতো। জারি করা হয় মৃত্যু পরোয়ানা!

বাণিজ্যিক ব্যাংক বা কোনো ব্যক্তি পুরনো নোট বদলে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কোনো শাখায় জমা দেয়ার পর ওই নোটগুলোর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাপ্য মূল্য মিটিয়ে দেয়া হয়। এরপর পুরনো নোটগুলোর মধ্যে কোনোটি পুনরায় চালানো যাবে কিনা বাছাইয়ের জন্য পরীক্ষা করা হয়। তখন যদি কোনো নোট প্রচলনযোগ্য মনে হয়, তাহলে সেটি আলাদা করে রাখা হয়। যে নোটগুলো আর চলবে না সেগুলো বাতিল বলে বিবেচনা করা হয়। মনে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে প্রতিটি নোট গণনা করে হিসাব রাখা হয়। এখানেই শেষ নয়। এরপর নোটগুলো পাঠিয়ে দেয়া হয় ভেরিফিকেশন ডিপার্টমেন্টে। তারা ওই বাতিল নোটগুলোর মধ্য থেকে শতকরা হিসাবে কিছু নোট নিয়ে পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন এর মধ্যে কোনো প্রচলনযোগ্য নোট আছে কি না। সাধারণত ভেরিফিকেশন ডিপার্টমেন্ট এমন নোট খুঁজে পায় না। এরপর ধাপে ধাপে বাতিল নোটগুলো পাঞ্চ মেশিন দিয়ে ছিদ্র করা হয়। বিশেষ করে নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলো ছিদ্র করে নষ্ট করা হয়। এরপর সেগুলো বস্তায় ভরে পুড়িয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে চুল্লিতে দেয়া হয়।

এখানেও পালন করা হয় বিশেষ সতর্কতা। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইস্যু বিভাগের কর্মকর্তা ছাড়াও কারেন্সি অফিসারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন। এই পর্যায়ে কারেন্সি অফিস থেকে নোটগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করার জন্য পরোয়ানা জারি করে। ওই পরোয়ানা ছাড়া কোনো অবস্থাতেই বাতিল নোট পুড়িয়ে ফেলার নিয়ম নেই। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে নোটগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করেন। ধ্বংসের পর আরেকটি পরোয়ানায় স্বাক্ষর করে নোটগুলোর ধ্বংস নিশ্চিত করা হয়। এ যেন ফাঁসির আসামির মৃত্যু নিশ্চিত করা! প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে হচ্ছে কি না দেখার জন্য হঠাৎ হঠাৎ এক বা একাধিক নিরীক্ষকও পাঠানো হয়। জানা যায়, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে প্রতি কর্মদিবসে সাত থেকে আট লাখ পিস বাতিল নোট পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।’ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে জমা পড়া ছেঁড়াফাটা নোটের শেষ গন্তব্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিদিন জমা পড়া পুরনো নোটগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রচলনের অযোগ্য নোটগুলো বাতিল ঘোষণা করা হয়। এরপর সেগুলো পুড়িয়ে অথবা শ্রেডিং মেশিনে (কাগজ কাটার যন্ত্র) টুকরো টুকরো করে কেটে ধ্বংস করা হয়।’
টাকা পোড়ানো চুল্লির হালচাল

একসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সব অফিসেই বৃহদাকার চুল্লিতে বাতিল নোট পোড়ানো হতো। কিন্তু চুল্লির ধোঁয়া পরিবেশ দূষণ করে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছয়টি অফিসে শ্রেডিং মেশিন চালু করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০টি শাখা অফিসের মধ্যে দুটি অফিসের (মতিঝিল ও রাজশাহী) চুল্লিতে এখনো বাতিল নোট পোড়ানো হয়। ছয়টি অফিসে (চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট) শ্রেডিং মেশিন রয়েছে। ঢাকার মতিঝিল অফিসের চুল্লিটি বর্তমানে খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এক্ষেত্রে চুল্লি বন্ধ করে শ্রেডিং মেশিন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে মেশিন ক্রয়ের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। জানা যায়, অন্য অফিসগুলোর তুলনায় মতিঝিল অফিসে বাতিল নোট বেশি আসে। এগুলো ধ্বংস করতে সময় বেশি লাগে।

শ্রেডিং মেশিনে কাটা বাতিল নোটের টুকরো নিলামে বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই টুকরো দিয়ে প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত পেপার বোর্ড, খাতার মলাটসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে। অন্যান্য কাগজের তুলনায় টাকায় ব্যবহৃত কাগজ উন্নত বলে এ থেকে উন্নতমানের বোর্ড তৈরি করা সম্ভব বলে অনেকে মনে করেন। তবে আগে প্রতি কেজি টুকরা তিন থেকে চার টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে নিলামে বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট