চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নামাজবিহীন রোজা উপবাসের নামান্তর

রায়হান আজাদ

১৬ মে, ২০২০ | ৮:২১ অপরাহ্ণ

ঈমান আনার পর একজন মুসলমানের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল নামাজ কায়েম করা। পুরুষদের জন্য নামাজ সর্বাবস্থায় ফরজ। আর মহিলাগণ কয়েকটি বিশেষ অবস্থা ছাড়া অন্যসময় নামাজ আদায় করে। নামাজ ছাড়া মুসলমানের ঈমানের দাবি অমূলক। নামাজ সবসময় বান্দাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। নামাজ ছাড়া শুধু রোজা কেন কোন ইবাদতই গ্রহণযোগ্য হবে না। তাকওয়া বা খোদাভীতির ভিত্তিমূল হল নামাজ। আর রোজা মুমিনদের অন্তরে তাকওয়া পয়দা করে। রোজা সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর যেন তোমরা পরহেযগারি অর্জন করতে পারো’।
রাসুলে আকরাম (সা.) হাদীস শরীফে বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর স্থাপিত। প্রথম-সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ তা’য়ালা ছাড়া কোন মাবুদ নাই, মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও রাসুল। দ্বিতীয়-নামাজ কায়েম করা, তৃতীয়-যাকাত আদায় করা, চতুর্থ-হজ্জ করা, পঞ্চম- রোজা রাখা।
নামাজ ইসলাম ধর্মের মৌলিক ইবাদাত। নামাজের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। কোন মুসলমান নামাজ আদায় না করে রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ ছুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় নামাজ মুমিনদের উপর ওয়াক্ত মোতাবেক ফরজ করা হয়েছে’। আল্লাহর পথে জীবন গড়া ও কর্ম পরিচালনার জন্য নামাজ মু’মিনদের প্রাত্যহিক প্রশিক্ষণ স্বরূপ। বেনামাজীদের সম্পর্কে হাদীস শরীফে কড়া হুঁশিয়ারী ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিল, সে যেন কুফ্রী করল’।
এ বাধ্যতামূলক ইবাদাত-নামাজ আদায় না করে সিয়াম সাধনা করা উপবাসের নামান্তর। রোজা একটি বিশেষ মাস রমজানুল মোবারকে ফরজ। আর পানজাগানা নামাজ স্থায়ীভাবে সকল মু’মিনের উপর ফরজ। শরীয়তের অন্যান্য আরকান-আহকাম পালন না করে নিছক সামাজিকতা রক্ষা ও আনুষ্ঠানিকতা দেখানোর জন্য রোজা রাখা সমীচীন নয়।
রমজানুল মোবারক তাকওয়া হাসিলের মাস। মিথ্যা, কুকর্ম ও অসামাজিক কাজ থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা করে তাকওয়া অর্জনই সিয়াম সাধনার লক্ষ্য। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নামাজ সকল অশ্লীলতা, অন্যায় ও অসামাজিক কাজ থেকে বান্দাকে বিরত রাখে। যাবতীয় শরীয়ত বিরোধী কাজকর্ম থেকে বিরত থাকার লক্ষ্য বাস্তবায়ন না হলে রোজা রাখা দিনব্যাপী উপবাসের নামান্তর। রাসুলে পাক (সা.) বুখারী শরীফে বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বা কুকর্ম ত্যাগ করে না সে পানাহার পরিত্যাগ করেছে কি করেনি, উপবাস থেকেছে কি থাকেনি আল্লাহ তার খবর রাখার প্রয়োজন মনে করেন না’।
অতএব, আজ এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে দৈনন্দিন ফরজ নামাজ আমাদেরকে অবশ্যই পড়তে হবে। নামাজবিহীন শরীয়তের কোন আমলই কবুল হয় না। তাই নামাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে – নামাজ দ্বীন ইসলামের ভিত্তি স্বরূপ। এ ভিত্তি ঠিক রেখেই আমাদেরকে রোজাসহ অন্যান্য সৎকাজ করতে হবে। যেহেতু রোজা পালনের প্রকৃত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন সেহেতু অন্যায়, গর্হিত ও অসৎ কাজ থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। আর তাই হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানদারির সঙ্গে ছাওয়াবের আশায় রমজান মাসে নামাজ আদায় করে তার অতীত গুনাহ মার্জনা করা হয়’।
দেখা যায়, অনেকে সাহরী খাওয়ার পর ফজর নামায জামায়াতের সাথে আদায় করলেও অন্যান্য ফরজ নামাজের বেলায় বেখবর থাকেন যা কিনা সম্পূর্ণ সুবিধাবাদী হিসাব-নিকাশ। আবার অনেকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে খতমে তারাবীহতে শরীক হলেও দিনের বেলার নামাজে যথারীতি অনুপস্থিত থাকেন যার ফলে মনে হয় এ লোক ইসলামের আগা-মাথা কিছু বুঝেননি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়, অনেকে ব্যস্ততার কারণে যোহর-আসর নামাজ পড়েন না। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কোরআনে ফরমায়েছেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা নামাজের প্রতি যতœশীল হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের প্রতি”। এখানে অধিকাংশ মোফাসসিরে কেরাম মধ্যবর্তী নামাজ বলতে আসর ওয়াক্তের নামাজকে বুঝিয়েছেন। আল্লাহ পাক আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায়ের গুরুত্ব অনুধাবন এবং তাকওয়াভিত্তিক আমলের মাধ্যমে রমজানের ফরজ রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট