চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পুদিনা’র এত গুন!

পূর্বকোণ ডেস্ক

৯ মে, ২০২০ | ৩:৩৭ অপরাহ্ণ

জনপ্রিয় সুগন্ধি মসলাজাতীয় বিরুৎ প্রকৃতির গাছ পুদিনা । সুগন্ধির কারণে বিভিন্ন মুখরোচক কাবাব, সলাদ, বোরহানি ও চাটনি তৈরিতে ব্যবহার হয়। কাঁচা পুদিনা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় চাটনি ও সালাদে।  ইদানিং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে টক দই এবং বোরহানি তৈরির জন্য পুদিনার ব্যবহার বাড়ছে।  ইউরোপের দেশগুলোতে ভেড়ার মাংসের রোস্ট ও মিন্ট জেলি তৈরিতে পুদিনা পাতা ব্যবহার হয়। বিভিন্ন দেশে পুদিনার বেশি ব্যবহার হচ্ছে তেল তৈরিতে। পুদিনার গাছ থেকে পাওয়া এ তেলের নাম পিপারমেন্ট অয়েল। এ তেল বেশ মূল্যবান। বিভিন্ন শিল্প বিশেষ করে ওষুধ, টুথপেস্ট, মিন্ট চকোলেট, ক্যান্ডি, চুইয়িংগাম ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এসবে এটি ব্যবহার হয়। কোনো কোনো ব্র্যান্ডের সিগারেটেও  মেন্থল ব্যবহার হয়। তাই পুদিনা গাছের শিল্প মূল্য অনেক বেশি। পুদিনা পাতার তীব্র ঘ্রানের জন্য দায়ী উপাদান  মেন্থল ও মেন্থোন। প্রতি বছর আমাদের বাংলাদেশে ১৮ টন কাঁচা পুদিনা পাতার চাহিদা রয়েছে।

পুদিনার ভেষজ গুন : 
অরুচিতে : সাধারণত কিছুদিন রোগে ভোগার এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে পুদিনার শরবত (পুদিনার রস) ২ চা-চামচ, সামান্য লবণ মরিচ চূর্ণ এক টিপ, কাগজিলেবুর রস ৮ থেকে ১০ ফোটা ও হালকা গরম পানি ২৫০ গ্রাম একত্রে মিশিয়ে সকালে একবার ও বিকালে একবার; এভাবে ৫ থেকে ৭ দিন খেলে অরুচি চলে যাবে। এছাড়া পুদিনা পাতা বেটে পানিতে গুলেও শরবত করা যায়। সে ক্ষেত্রে কাঁচা পাতা ৮ থেকে ১০ গ্রাম নিতে হবে। পুদিনা পাতার চাটনি একাধারে ৮ থেকে ১০ দিন খেলেও অরুচি কমে যাবে।
পেট ফাঁপায় : এক্ষেত্রে পুদিনার শরবত  সারা দিনে ২-৩ বার করে কয়েক দিন খেলে পেটে বায়ু জমা বন্ধ হবে এবং খাদ্য রুচিও ফিরে আসবে এবং হজম শক্তিও বাড়বে।
বমিতে : পিত্ত, শ্লেষ্মাজ্বর, অম্লপিত্ত, আমাশয়, অজীর্ণ, উদরশূল প্রভৃতিতে বমি হতে পরে, আবার রোদে ঘোরাফেরা করে ঠা-া পানি খেলে এবং খালি পেটে থেকে পরিশ্রম করলে বমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব ক্ষেত্রে পুদিনার শরবত (পুদিনার পাতা ৮ থেকে ১০ গ্রাম বেটে তাতে পুরনো তেঁতুল ১ চা চামচ, সামান্য একটু চিনি ও লবণ এবং পানি ২৫০ গ্রাম একত্রে মিশিয়ে) দিনে ২ থেকে ৩ বার করে কয়েক দিন খেলে বমি সেরে যাবে।
মূত্রাল্পতায় : যে ক্ষেত্রে গরমের ফলে অল্প অল্প করে প্রস্রাব হতে থাকে, কোনো কোনো সময় সে সাথে জ্বালাও থাকে, সেক্ষেত্রে পুদিনার পাতা ৮ থেকে ১০ গ্রাম ভালোভাবে বেটে তাতে সামান্য লবণ ও কাগজিলেবুর রস এবং পোয়াখানিক ঠা-া পানি মিশিয়ে শরবতের মতো করে দিনে ২ থেকে ৩ বার খেতে হবে। এর ফলে প্রস্রাব সরল হবে। তারপর এ সমস্যার জন্য মাঝে মাঝে খেলেও প্রস্রাব স্বাভাবিক থাকবে।
মুখের বিস্বাদে : টাটকা পুদিনা পাতা, শুকনো খেজুর, গোলমরিচ, লবণ, জিরা ও কালো আঙুর পরিমাণ মতো মিশিয়ে একসাথে পিষে চাটনি তৈরি করুন। এতে লেবুর টাটকা রস মিশান। এ চাটনি খেলে মুখে রুচি আসবে, মুখের বিস্বাদ দূর হয়ে খাওয়ার ইচ্ছা হবে, বায়ুজনিত অস্বস্তি দূর হবে, হজম শক্তি বাড়বে, শরীরের নিস্তেজ ভাব দূর হবে।
পেটের বায়ু দূর করতে : পুদিনাপাতা, তুলসীপাতা, গোলমরিচ ও আদা পরিমাণ মতো একসাথে মিশিয়ে পিষে নিয়ে পানিতে জল সেদ্ধ করে, একটা ঘন ক্বাথ তৈরি করুন। এ ক্বাথ চামচে নিয়ে অল্প একটু জিহ্বা দিয়ে চেটে অন্তত ৪ বার করে ৩ দিন খেলে পেটের বায়ু দূর হবে ও খুব ক্ষিদে পাবে।
সাইনাসে : টাটকা পুদিনা পাতা পিষে বা থেঁতো করে রস বের করে নিন।  এ রস কফ, সর্দি, কপালে সাইনাসের কারণে জমে যাওয়া ঘন সর্দিও বের করে আনবে। প্রতিদিন ১ চামচ করে ২ বার এবং ১৫ থেকে ২০ দিন খাবেন।
পুরনো সবিরাম জ্বরে :  টাটকা পুদিনাপাতা ও তুলসীপাতা একসঙ্গে পিষে পানিতে জল মিশিয়ে পাত্র ঢাকা দিয়ে, ঘন ঝোল বা ক্বাথ  তৈরি করুন। প্রতিদিন যে জ্বর কোনো একটা বিশেষ সময়ে একটানা বহু দিন ধরে আসে এ ক্বাথ প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার করে অন্তত সপ্তাহখানেক খেলে জ্বর সারবে।
টাইফয়েডে : পুদিনাপাতা, সবুজ তুলসী ও তুলসীর রস এক সাথে মিশিয়ে থেঁতো করে নিন। এতে স্বল্প চিনি মিশিয়ে অল্প করে দিনে ৪ বার খাবেন। কিছুদিন খেলেই জ্বর চলে যাবে।
নিউমোনিয়াতে : পুদিনাপাতা, টাটকা রস অল্প মধুর সাথে মিশিয়ে, প্রতি ২ ঘণ্টা পরপর ১ চা চামচ করে খাওয়ালে ত্রিদোষ জ্বর অর্থাৎ নিউমোনিয়া রোগীর অনেক বিকার দূর হবে এবং জ্বরও তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
অন্ত্রের দুবর্লতায় : পুদিনা পাতায় টাটকা রস মধু মিশিয়ে খাওয়ালে অন্ত্রের দুবর্লতা ও পেটের অসুখ সারে। যারা বহু দিন ধরে আন্ত্রিক গোলযোগে ভুগছেন তাদের পক্ষে টাটকা পুদিনা পাতার রস খাওয়া অমৃতের মতো উপকারী।
সংক্রমণ প্রতিরোধে : যখন কলেরা ও আন্ত্রিক রোগ প্রবলভাবে ছড়িয়ে মহামারীর রূপ নেয়, তখন টাটকা পুদিনা পাতার রসে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে শরবত তৈরি করে খেলে সংক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
তীব্র পেটের ব্যথায় : পুদিনা পাতার রস ১ চা চামচ ও আদার রস ১ চা চামচ একসাথে মিশিয়ে তাতে অল্প লবণ দিয়ে এ রস দিনে ২-৩ বার খেলে তীব্র পেটের ব্যথা (উদরশূল) সেরে যাবে।

 

 

 

পূর্বকোণ/- আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট