চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

রোজাদারকে ইফতার করানো সওয়াবের কাজ

রায়হান আজাদ

৫ মে, ২০২০ | ৭:৪০ অপরাহ্ণ

ইফতার নিজে করার সাথে সাথে হাদিস শরীফে অন্য রোজাদার ভাইকেও ইফতার করানোর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে উম্মতকে উৎসাহিত করার জন্য বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে আল্লাহ তা’য়ালা তার বিনিময়ে তার অতীত অপরাধ মাফ করে দেবেন এবং দোজখের কঠিন শাস্তি থেকে তার নাজাতের ব্যবস্থা করবেন। রোজাদার ব্যক্তি রোজা রেখে যে পরিমাণ সাওয়াবের ভাগীদার হবে, যে ব্যক্তি অপরকে ইফতার করাবে সেও সমপরিমাণ নেকী পাবে। এজন্য রোজাদারের নিজস্ব সাওয়াবের মাঝে কমানো হবে না। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য আমাদের সকলের নেই। তদোত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমালেন, যে ব্যক্তি একটি খেজুর কিংবা একটু দুধের শরবত বা সামান্য পানি দ্বারা কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে আল্লাহ পাক তাকেও এ রোজার সাওয়াবের ভাগীদার করবেন। আর যে ব্যক্তি পেট ভরে রোজাদারকে খাওয়াবে তাকে আল্লাহ তা’য়ালা কিয়ামতের সংকট মুহূর্তে হাউজে কাওসার হতে পানি পান করাবেন। এ বরকতে সে ব্যক্তি আর পিপাসার্ত হবে না যে পর্যন্ত সে বেহেশতে প্রবেশ করবে না’।
ইফতার জমজমাট খাওয়ার আয়োজন নয়। পরিমিত ভোজনই ইসলামের বিধান। সুতরাং ইফতার গ্রহণের সময় আমাদেরকে অতিরিক্ত ভোজন পরিহার করতে হবে। মাগরিবের জামায়াত পাওয়া যায় মত সময়ে ইফতারের সমাপ্তি টানতে হবে। এ সম্বন্ধে ইসলামের বিশিষ্ট দার্শনিক ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, সকল ছাতুরি শক্তি, কাম প্রবৃত্তিকে নিশ্চল, নিস্তেজ ও নির্মূল করার জন্য আমরা রোজা রেখে থাকি, কিন্তু ইফতারির ভুরি ভোজনে হিতে বিপরীত হয়। সারাদিনের পানাহার ও খাবার পরিবর্জন করে ইফতারিতে তা আবার পূর্ণ করে পরিতুষ্ট হই। যা প্রকৃত রোজার পরিপন্থী।
বর্তমানে করোনাভাইরাসের মহাপ্রকোপে দেশ কঠিন সময় অতিক্রম করছে। গত দেড়মাস যাবৎ লকডাউন চলছে। এতে গরীব-মজুর শ্রেণি ভীষণ বিপদে আছে। তাদের আয়-উপার্জনের সকল পথ বন্ধ রয়েছে। তারা না পারছে খাবার যোগাতে, না পারছে ভিক্ষা করতে। তদুপরি ভিক্ষাদাতারাও তো ঘরে আবদ্ধ। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তাই স্বচ্ছল ভাইবোনদের উচিত ইফতার নিজেরা কম খেয়ে হলেও প্রতিবেশী দরিদ্র-মজুরের ঘরে খাবার সামগ্রী পৌঁছানোর সুব্যবস্থা করা। রমজান মাসে দান করার ফজিলত অনেক বেশি। রমজানের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, গরীবের পেটের ক্ষুধার মর্মজ্বালা উপলব্দি করা। ইসলামের আসল শিক্ষা হলো সুখে-দুখে সবাই মিলেমিশে থাকা। এখন আমাদের কাছে এ শিক্ষা কাজে লাগানোর উপযুক্ত সময় এসে গেছে।
সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা মোস্তাহাব। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থাকলে দু’চার মিনিট দেরীতে করা উচিত। রোজা রেখে ইফতার না করা মাকরূহ। ইফতারের সময় হয়ে গেলে দেরী করা সমীচীন নয়। ইফতারের গুরুত্ব, নিয়ম-শৃঙ্খলা ও ফজিলতের প্রতি নজর রেখে আমাদের রোজাকে অর্থবহ করে তুলতে হবে। অপরকে ইফতার করানোর মূল্যবান পুরস্কার লাভে সচেষ্ট হতে হবে। যার যতটুকু সামর্থ্য আছে সে ততটুকু ইফতার ও সাহরী সামগ্রী নিয়ে গরীব-অসহায়-বস্তিবাসীদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করবে। হে আল্লাহ পরওয়ারদেগার! মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এ মাসকে অসংখ্য সাওয়াব কুড়ানোর মাস হিসেবে আমরা যেন গ্রহণ করতে পারি সে তৌফিক দান করুন। আমীন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট