চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

খাদ্য মজুদ নয়, যথাসাধ্য সাহায্য করুন

আমিনুল ইসলাম হুসাইনী

২৩ মার্চ, ২০২০ | ৬:৪২ অপরাহ্ণ

প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাসের আতঙ্কে স্থবির পুরো বিশ্ব। থমকে আছে মানুষের জীবনযাত্রা। মাসখানেক আগেও যে রাষ্ট্রগুলোতে দিন-রাতের পার্থক্য বোঝা যেত না সেই রাষ্ট্রগুলোর চিত্র এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানকার রাস্তাঘাটগুলো এখন খাঁ খাঁ করছে জনশূন্যতায়। বিশ্বের প্রায় সব কটি দেশ আজ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অন্যান্য দেশ থেকে। দেশে দেশে মানুষ আজ গৃহবন্দি। এই বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে উত্তরণের পথ বের করা বুদ্ধিমানের কাজ।

আল্লাহতায়ালা মাঝে মধ্যে তার বান্দাদের এ রকম পরিস্থিতিতে ফেলে ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। পবিত্র কোরআনেও আল্লাহ তায়ালা এমনই বলেছেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫)

বর্তমানে এমনই একটি সময় অতিক্রম করছি আমরা। তাই আমাদের উচিত, মুসলিম-অমুসলিম পার্থক্য না করে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জায়গা থেকে সবার জন্য কল্যাণের চেষ্টা ও প্রার্থনা করা। রাসুল (সা.) বা তার সাহাবাদের সময় এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, তারা তা-ই করতেন। সবাইকে সতর্ক করতেন। পরামর্শ দিতেন। আর আমরা নবীর উম্মত হয়ে করোনাভাইরাসের মতো মহামারীকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকারা করছি, যা বনি ইসরাইলের কাফেরদের চরিত্রের শামিল। বনি ইসরাইলদের গজবের কথা জানানো হলে ওরাও হাসাহাসি করত। ফলে আল্লাহতায়ালা তাদের প্রতি আরও বেশি রাগান্বিত হয়ে কঠিন গজব পাঠাতেন।

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখন চরম হুমকির মধ্যে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকটও। দিন যত যাচ্ছে, সমস্যা ততই প্রকট হচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ খবর যেন অপেক্ষা করছে আমাদের বাংলাদেশের জন্য। কেননা, আমাদের অধিকাংশই শ্রমজীবী মানুষ। দিনে এনে দিনে খায়। আল্লাহ না করুন যদি আমাদেরও গৃহবন্দি হতে হয়, তাহলে করোনাভাইরাসে না হলেও খাদ্য সংকটে দেশে হাহাকার লেগে যাবে। এই বিপদসংকুল সময়ে আমাদের উচিত রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করা। এ রকম মহামারী দেখা দিলে নবীজি সবাইকে তাওবার আহ্বান করার পাশাপাশি দান-সদকা করারও তাগিদ দিতেন। হাদিসে এসেছে দান-সদকার দ্বারা বিপদ দূর হয়। হায়াতে বরকত বাড়ে। নবীজি বলেছেন, ‘তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি সদয় হও, তাহলে আসমানের মালিক তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৪৭)

আফসোসের বিষয়, আমরা মানুষের প্রতি সদয় না হয়ে তাদের আরও কঠিন বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছি। আমাদের মনমানসিকতা এতটাই অসুস্থ যে, আমরা সব সময় নিজেদের স্বার্থটাই আগে দেখি। এতে অন্যের ক্ষতি হচ্ছে কি না তা দেখার সময়ও যেন নেই আমাদের। বর্তমান বাজার পরিস্থিতির দিকে তাকালে এই অপ্রিয় সত্যটিই ফুটে ওঠে।

সমাজে যারা বিত্তবান, যাদের টাকার অভাব নেই তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্যসামগ্রী কিনে সংকট সৃষ্টি করছে। যার ফলে ব্যবসায়ীরাও সুযোগ পেয়ে লাগাম ছেড়ে দিচ্ছে দ্রব্যমূল্যের। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। আমরা যারা এভাবে খাদ্য গুদামজাত করছি, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে করোনার চেয়েও ভয়াবহ কঠিন কিছু। কেননা, খাদ্য মজুদ করা বা তা বাজার থেকে তুলে নিয়ে দাম বাড়ানো হারাম। যারা এমন করে বড়লোক হওয়ার কথা ভাবছেন, তাদের আশায় গুড়েবালি। বরং তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক কঠিন শাস্তি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য গুদামজাত করে, আল্লাহ তার ওপর দরিদ্রতা চাপিয়ে দেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৫)

অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিনের খাবার মজুদ রাখে, সে আল্লাহতায়ালার জিম্মাদারি থেকে বেরিয়ে যায়।’ (মুসান্নায়ে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ২০৩৯৬)

করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের যখন বেশি বেশি দান-সদকা করা দরকার। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। অথচ আমরা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে পড়ে আছি। আমাদের শ্রেষ্ঠ জাতি করা হয়েছে পরোপকারের জন্য। একে অন্যের কল্যাণে এগিয়ে আসার জন্য। নিজের সুখের জন্য ব্যস্ত না হয়ে অপরের মুখে হাসি ফোটানোর নামই তো মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমরাই হলে শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের নির্দেশ দান করবে এবং মন্দকাজে বাধা দেবে।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত : ১১০)

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট