চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রজব মাসের গুরুত্ব ও আমল

মুফতী জুবায়ের রশীদ

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১১:১৭ অপরাহ্ণ

বছর ঘুরে আবারও এলো রজব মাস। রজব একটি মহিমান্বিত মাস। একটি বরকত পরশিত মাস। আরবি যে কয়েকটি মাসের সঙ্গে ইসলামের বিভিন্ন আমলের সম্পৃক্ততা রয়েছে তন্মধ্যে রজব একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। আরবি ১২ মাসের চারটি মাসকে ‘আশহুরুল হুরুম’ তথা সম্মানিত মাস ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে গণনায় মাস ১২টি, তন্মধ্যে চারটি (সম্মানিত হওয়ার কারণে যুদ্ধবিগ্রহ) নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।’ (সুরা তাওবা : ৩৬)।

রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘১২ মাসে এক বছর। তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক জিলকদ, জিলহজ, মহররম এবং চতুর্থটি হলো রজব, যা জমাদিউস সানি ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস।’ (বুখারি : ২/৬৭২)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও হজরত কাতাদা (রহ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে ‘এ মাসগুলোতে আমল করলে অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক সওয়াব লাভ হয় এবং এ মাসগুলোতে কোনো গুনাহের কাজ করলে অন্য মাসের তুলনায় অধিক গুনাহ হয়।’ (তাফসিরে তাবারি : ৬/১৪৯-১৫০)।

সম্মানিত চারটি মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে হজরত আবু বকর জাসসাস (রহ.) বলেন, ‘এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যতœবান হলে বাকি মাসগুলোতে ইবাদত করা সহজ হয় এবং এ মাসগুলোতে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকলে অন্য মাসেও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়।’ (আহকামুল কোরআন : ৩/১৬৩)। হজরত আবু বকর বলখী (রহ.) বলেন, ‘রজব হচ্ছে ফসল রোপণের মাস, শাবান ফসলে পানি সেচ দেওয়ার মাস আর রমজান হলো ফসল তোলার মাস।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘রজব মাস ঠান্ডা বাতাসের মতো, শাবান মাস হলো মেঘমালার ন্যায়। আর রমজান মাস হলো বৃষ্টিতুল্য।’ (লাতায়েফুল মাআরেফ : পৃষ্ঠা ১৪৩)

রজব মাসের একটি বরকত ও ফজিলতময় বিশেষ আমল রয়েছে যা সুন্নাহসম্মত। হাদিসে এর উল্লেখ রয়েছে। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘রজব মাস শুরু হলে রাসুল (সা.) এই দোয়া পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রাজাবা ও ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।’ অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (নাসায়ি : ৬৫৯; মুসনাদে আহমাদ : ২৩৪৬)।

রজব মাসের চাঁদ আকাশে উদিত হওয়ার পর থেকেই নবীজি (সা.) অব্যাহতভাবে এই দোয়া পাঠ করতেন। নবীজিকে দেখে সাহাবায়ে কেরামও এই দোয়া পাঠে অত্যধিক মনোযোগ আরোপ করেন। তারপর তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ীগণ থেকে ধারাবাহিক বর্তমান পর্যন্ত চলে আসছে। তাই রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে উল্লেখিত দোয়া বেশি বেশি পড়ার চেষ্টা করা। হাদিসে রজবের আরও একটি আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে। এ সময় অধিক পরিমাণে দোয়া করা। নিজের জন্য, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করা।

রজবের প্রথম রাতে মহান আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন। হাদিসে রজবের প্রথম রাতে দোয়া কবুলের সুসংবাদ এসেছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন রয়েছে, যে রাতে বান্দার দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। রাতগুলো হলো, জুমার রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৭৯২৭)

তবে এ কথা অবশ্যই স্মরণ রাখা উচিত, আমল করতে গিয়ে যেন কোনো প্রকার কুসংস্কারে জড়িয়ে না পড়ি। রজব মাসে নির্দিষ্ট কোনো নামাজ বা রোজা নেই, যা একমাত্র রজব মাসে আদায় করতে হয়। নফল নামাজ এবং নফল রোজা নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত বছরের যেকোনো সময় আদায় করা যায়। আর রজব যেহেতু সম্মানে মাসের অন্তর্ভুক্ত, এ সময় আমল করলে অধিক সওয়াবের আশা করা যায়, তাই অধিক পরিমাণে নফল নামাজ ও রোজা পালনে সচেষ্ট থাকবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রজব মাসের ফজিলত অর্জনের তওফিক দান করুন; সুন্নাহভিত্তিক আমল করে কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন। আমিন।

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট