চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নেপাল ভ্রমণ: পর্ব- ০৭

১৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ৫:২৬ অপরাহ্ণ

তারপর সকাল ৮টায় হোটেলে অবস্থানরত সকল দেশের প্রতিনিধিগণ গেলাম ICIMOD (ICIMOD is a regional learning and knowledge sharing centre of the Hindu Kush Himalayas serving Afghanistan, Bangladesh, Bhutan, China, India, Myanmar, Nepal, and Pakistan – based in Kathmandu) Headquarter-এ নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত “Leveraging the world Heritage Convention for Transboundary Conservation in the Hindu Kush Himalayas” Workshop-এ যোগ দিতে। বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম Bangladesh National Commission for UNESCO-থেকে আমি এবং আরো একজন সহকর্মীসহ দু’জন। যথারীতি অনুষ্ঠানসূচী ধরে শুরু হলো। ডায়াসে কিছুক্ষণের জন্য বসে কিছু মূল্যবান এবং সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিলেন ইউনেস্কো প্যারিস থেকে আগত দুজন Heritage বিশেষজ্ঞ, দু’জন ICIMOD থেকে আর দু’জন নেপাল সরকারের পক্ষে। তাদের মধ্যে একজন নেপাল সরকারের কোন এক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আরেকজন হচ্ছেন নেপালের কোন এক হেরিটেজ সাইটের অধিবাসী এবং সেই অঞ্চলের নির্বাচিত MP।

MP সাহেবের পোষাক-আশাক-চেহারা কোন কিছুতেই জৌলুস নেই। আরো কি কি যেন নেই মনে করতে পারছিলাম না। একা একা হাঁটে। কেউ আগায়াও নাই পাছেও নেই। একাই ডায়াসে উঠলো আবার নামলোও একাই। আজিব। কেউ এগিয়ে এসে খাতির করে দু’কথা বলতে দেখলাম না। ডায়াসে কোন সিটও সংরক্ষিত নেই তার জন্য। মনে হলো আগে আসলে দেখে শুনে পরে আসলে যেটা বাকি সেটাতেই বসার নিয়ম। সব দেখে শুনে MP সাহেবকে নিয়ে আমার কৌতুহল চরমে। উনি কি বক্তব্য দিবেন শোনার জন্য উসখুস করছি। লিখে এনেছেন নাকি কেউ লিখে দিয়েছে বুঝতে পারছি না। বক্তব্য কোন ভাষায় হবে নেপালীজ নাকি ইংরেজী। প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে MP উঠে বক্তব্য প্রদানের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে চোস্ত ইংরেজীতে অলিখিত বক্তব্য শরু করলেন, “সম্মানীত…ব্লা..ব্লা…নেপাল প্রকৃতির লীলাভূমির দেশ। প্রকৃতি ভিন্ন তো সেখানকার অধিবাসী ভিন্ন। ভিন্নতা সর্বক্ষেত্রে যেমনঃ পোষাক-আশাক-খাদ্য-জীবন যাপন-ভাষা-বিয়ে-আচরন সব সব। প্রতি এক কিলোমিটার বা এরও কম দূরত্বে এই পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। আমিও এ রকমই একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আধিবাসী এবং নেপালের একটি হেরিটেজ সাইটের নির্বাচিত MP।

সম্মানীত অতিথীবৃন্দ এবং সকলে, পৃথিবীতে দুটো প্রুপ আছে-একটি হচ্ছে Have Group আর আরেকটি হচ্ছে Have not group। আমি Have not group-এর একজন। কারণ আমার এলাকা যেহেতু World Heritage Site-এ অবব্থিত তাই আমার এলাকার লোক তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য এদিক ওদিক যেতে পারবে না। কারণ পায়ের দলায় উদ্ভীদ/প্রাণী প্রজাতি নষ্ট হবে। ঠিক আছে শিল্প গড়ে দাও আমরা কাজ করে খাই। না, শিল্প বর্জে পরিবেশ দূষিত হবে। রাস্তা বানিয়ে দাও। আমার যেখান সেখান দিয়ে যাবো না। সৌকর্য নষ্ট হবে। সংস্কৃতি নষ্ট হবে। কারণ যুগ যুগ ধরে এখানের মানুষ পায়ে হেটেঁ যাতায়াত করে এটাই এখানকার নৃতত্ত্ব। স্কুল দাও, শিক্ষা দাও। না এগুলো গড়া যাবে না এই হবে সেই হবে। এগুলো পেতে হলে তোমাদের শহরে আসতে হবে বা দূরে যেতে হবে। আমার প্রশ্ন আমরা কি চিড়িয়াখানার চিড়িয়া নাকি আমরা তোমাদের তামসা দেখার বস্তু।

তোমরা যে এত এত নিয়ম কানুনে আমাদের জীবন বাঁধছো আমরা কি তোমাদের বেঁধিছি যে তোমরা এই করতে পারবে না বা ওই করতে পারবে না আমাদের ইচ্ছামত। তোমরা সবাই Have group-এর। তোমাদের সব আছে। জীবনকে সহজ আর সুন্দর করতে তোমরা সব গড়ে নিয়েছ। তার উপর তোমরা শিক্ষিত আর সভ্য মানব। আর আমরা প্রচীন আকড়ে থাকা অশিক্ষিত আর বর্বর। তবে তোমরা কেন আমাদের সাথে বর্বর আচরণ করবে। বর্বর আচরণ তো আমরা করবো তোমাদের সাথে। কিন্তু আমরা উল্টো তোমাদের কাছ থেকে পাচ্ছি। প্রকৃতি সংরক্ষণের ধোঁয়া তুলে আমাদের জীবনকে অতীষ্ট করে তুলো না। আমাদেরকে আমাদের মত থাকতে দাও প্লিজ। আমরা World Heritage-এর বিরোধী নই। কিন্তু আমাদের space-দিতে হবে। আমাদের জীবনের স্বস্থি চাই। বর্বর নয় সভ্য জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার সঠিক রসদ চাই”। ব্যক্তব্য শেষ কিন্তু কিছুই বুঝলাম না সে কোন পক্ষের-সরকার না বিরোধী। আজিব। তারপর চা বিরতি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট