চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নেপাল ভ্রমণ : পর্ব- ১

নেপালের হাতছানি

হাফেজা আক্তার

৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ৬:২২ অপরাহ্ণ

যখন থেকে বিদেশ ভ্রমণ বা আরো স্পষ্ট করলে আকাশ ভ্রমণের পোকা মাথায় ঢুকেছে তখন থেকেই আকাশ ভ্রমণের গন্তব্য ঠিক করেছিলাম নেপাল-ভূটান-সিকিম-হিমালয়ের পাদদেশ। কারণ হলো সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সমগ্র। যত কাহিনী বা গন্ডগোল সব এই জায়গাগুলোতেই কেন্দ্রীভুত ছিল। কিশোরী বয়সে আমার মনে হত এগুলোতে যাওয়া দরকার। এত গন্ডগোল চলছে সেখানে। সব শুধু ফেলুদাকেই কেন সামলাতে হবে। বুদ্ধির জোড়ে দুই একটার সমাধান তো আমিও দিতে পারি। সমাধানগুলো সোজা, ব্যাপার না। অভিজ্ঞতা বলে স্বপ্ন বুনা মানে পূরণ না হওয়ার চান্স। সৃষ্টিকর্তা মনে হয় ইচ্ছা করেই স্বপ্নগুলোকে অপূর্ণ রেখে দেন যাতে আমরা একটা কল্পলোকে থাকি। স্বপ্নকে ঘিরে একটা চার্মিং কাজ করে জীবনে। স্বপ্নঘোর যেটা জীবনকে-জীবনিশক্তিকে চনমনে রাখে।

যথারীতি আমার প্রথম আকাশ ভ্রমণের গন্তব্য নেপাল হয়নি, হয়েছিল থাইল্যান্ড। তারপর গেল দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম……তারপরও না। পরিকল্পনা করি, অপেক্ষা করি, এইদিন সেইদিন করি আকাশ ভ্রমণের গন্তব্য নেপাল আর হয় না। এর মধ্যে ইউএস বাংলার দুর্ঘটনার সাথে সাথে আমার স্বপ্নেরও সমাধি দেই।

খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব পড়ি। কী হয়েছিল, কেন হয়েছিল, তারপর কি হবে সব।

একেবারে আদ্যপান্ত, কে ড্রাইভিং সিটে ছিল, কারা ছিল, পাইলটদের জেন্ডার, পছন্দ-অপছন্দ থেকে শুরু করে তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পর্যন্ত।

নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দর নাকি সুবিধার নয়। নানা কারণে। যা হোক, স্বপ্নের সমাধির পর স্বস্তিতে ছিলাম। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার লীলা বোঝা দায়। স্বপ্নটাকে অসময়ে এনে দাঁড় করালেন সামনে। গেল রোজায় অনেকটা সংশয় বা দ্বিধায় নেপাল ভ্রমণের প্রস্তুতি নিলাম। তেমন একটা গাঁ লাগাতে মন চাচ্ছিল না। এত স্বল্প সময়ের প্রস্তুতি ছিল যে মনে হচ্ছিল যাওয়া হবে না। খুব কম মানুষকে জানালাম। কারণ যাকেই বলি না কেন, সেই বলে হায় হায় নেপাল যাচ্ছ। আমার মনেও ভর করেছে হায় হায় নেপাল যাচ্ছি। আমি এবং আমার সহযাত্রী খুব একটা আলোচনা করি না আকাশ ভ্রমণ নিয়ে। আলোচনায় রাখি শুধু নেপাল। তবে আলোচনা সাপেক্ষে আকাশ ভ্রমণের যান ঠিক করলাম বলাকা। কারণ পাইলটদের দক্ষতা নাকি আকাশ সমান।দুইজনই দুজনার বাসা থেকে একই গাড়িতে রওনা দিলাম বিমানবন্দরের উদ্দেশে। আলোচনা শুধু নেপাল, আকাশ ভ্রমণ বাদ। বিমানে চড়ে দুজনই কান পাতলাম বিমানের ঘোষনা শোনার আশায়। ঘোষণায় শুতে পাচ্ছি, “ক্যাপটেন তানিয়া এবং তাঁর ক্রুরা আপনাদের BG071 Airship-এ স্বাগত জানাচ্ছি।

আমি চোখ বন্ধ করলাম আর আমার সহযাত্রী বাইরে উদাসী দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইল। মোটামুটি চোখ বন্ধ অবস্থায় পড়ে রইলাম শেষ ঘোষণার আগ পর্যন্ত। আবার ক্যাপটেন তানিয়া মিষ্টি স্বরে ঘোষণা দিচ্ছেন, “আমার আর কিছুক্ষণের মধ্যে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে যাচ্ছ।” আমার চোখ সাট করে খুলে গেল। বন্ধ হয় না। কী জ্বালা। পরে মনে পরল অগস্ত যাত্রার শেষ মুহুর্তটা রেকর্ডিং করা দরকার। জাতি দেখতে চাইতে পারে। মোবাইলের ভিডিও অন করলাম এবং ভাবনায় ছিল Take on-এর কিছুক্ষণ আগে ঘোষণা শুনে video off করে দিব। কিন্তু Take on-টা টেরই পাইনি। জীবনের প্রথম বলাকা ভ্রমণ এবং প্রথম Smooth landing। বিশ্ময়কর Take on। মালয়েশিয়ান শিপ Air Asia-তে চড়েছি। মনে হলো উষ্টা মের আকাশে উঠালো আবার উষ্টা মেরে আকাশ থেকে নামালো। অন্যগুলোও কাছাকাছি।মাঝেমাঝে কিছু Airship-এ উড্ডয়নকালে ঝড়ো বাতাসের ধাক্কায় ঝনঝন শব্দও পেয়েছি। মনে মনে উৎকন্ঠিত হয়েছি, “মাবুদ, মাঝ আকাশে ভেঙ্গে পরবে না তো!!” এত ভালো Take off এবং Take on আর সেবা তারপরও বলাকা দেশ এবং বিদেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। কেন? বিশ্ময়কর ব্যাপার। যাহোক নেমে ধন্যবাদ দিলাম আল্লাহককে আর Salute to ক্যাপটেন তানিয়া এবং তাঁর ক্রুদেরকে।বিমান থেকে নেমে হেঁটে বিমান বন্দরের দিকে পা রাখা মাত্র আমার সহযাত্রী মিজ ফারহানার হাস্যজ্জ্বোল মুখে প্রথম কথা ছিল, ‘হাফিজা, আপনি তো পুরো যাত্রায় ঘুমিয়েছেন। আমি এক ফোঁটা ঘুমাতে পারিনি। ভয়ে শুধু দোয়া-দুরুদ পড়েছি।’ আমি যে মটকা মেরে চোখ বন্ধ করে পড়ে ছিলাম উনি টেরই পাননি।তাতে কি যায় আসে!! আমরা দুজনই এখন Exciting Mood-এ আছি। কারণ এটা দুজনেরই প্রথম নেপাল ভ্রমণ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট