চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পর্ব-৩০ঃ অবশেষে বাংলাদেশে

মো. ফারুক ইসলাম

১২ জুলাই, ২০২০ | ১২:০৫ অপরাহ্ণ

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে প্রবেশ করে ইমিগ্রেশনের কাজ সম্পন্ন করলাম। বিমান থেকে ব্যাগ আসার পর বেল্ট থেকে ব্যাগ নিলাম। এরপর সবাই এক জায়গায় এসে জড়ো হলাম। একটু পর জানতে পারলাম সবার ব্যাগ আর লাগেজ আসলেও রাজশাহীর শহিদুল ভাইয়ের ব্যাগ খুঁজে পাচ্ছেন না। রাত তখন ২টা কেউ কেউ এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন। ভেবেছিলাম সবাই বের হয়ে যাবেন। তাই সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমিও বের হবার জন্য হাঁটতে লাগলাম। মনি আপাও আমার সাথে ছিলেন। ওনাকে নিতে গাড়ি আসবে। সমস্যা হলো আমার। এতো রাতে কোথায় যাবো। বাইরে গিয়ে কি করবো। নানা চিন্তা মাথায় ভর করলো। মনি আপা অনেক জোর করেছিলেন ওনার সাথে বাসায় যেতে। আমি রাজি হইনি। বলে রাখা ভালো, মনি আপা হলেন ঢাকা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শোভনের আপন ফুফু। কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গমারী উপজেলা চেয়ারম্যান ওনার বড় ভাই। ওনার বাবা ছিলেন নামকরা রাজনীতিবিদ এবং মুক্তিযোদ্ধা। ফিলিপাইন ট্যুরে আপা সার্বক্ষণিক আমাকে সাহায্য করে গেছেন। এয়ারপোর্টের বাইরে এসে আমি আর মনি আপা দাঁড়ালাম। মনি আপাকে নিতে তখনো গাড়ি আসেনি। তাই গাড়ির জন্য অপেক্ষা। কিছুক্ষণ পর ওনাকে নিতে ওনার মেয়ে এবং আরো কয়েকজন আত্মীয় আসলেন। বিদায় নেবার সময়ও আপা বার বার বলেছিলেন ওনার সাথে বাসায় যেতে। কিন্তু আমি না গিয়ে আপাকে বিদায় দিলাম। মনি আপা যতক্ষণ ছিলেন কিছুটা সাহস ছিল মনে। এবার সত্যি সত্যি নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। কারণ যে যার মতো চলে যাচ্ছেন। এয়ারপোর্টের বাইরে মশার কামড় খেয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়! তাছাড়া ঢাকায় আমার পরিচিত কোন আত্মীয় স্বজন নেই। এতো রাতে কোন হোটেলে ওঠাও সম্ভব না। ফিলিপাইন থেকে আসার সময় পেকুয়ার নাছির ভাইকে বলেছিলাম ওনারা যদি কোন হোটেলে উঠেন আমাকে সহ নিয়ে যেতে। কিন্তু পরবর্তীতে ওনি কোন এক আত্মীয়ের বাসায় চলে গিয়েছিলেন। এখন অসহায় হয়ে সময় কাটানো ছাড়া উপায় নাই। তাছাড়া বাইরে প্রচুর বৃষ্টি। এই বৃষ্টির মধ্যে যাবোই বা কোথায়! এয়ারপোর্টের বাইরে এককোণে বসে পড়লাম। এবার ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষা। মশার কামড়ে অবস্থা খারাপ। ঘুমে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছিল। এই পরিস্থিতিতে ঘুমানো সম্ভব না। কারণ যত টাউট-বাটপার চারপাশে ঘোরা ফেরা করছে। সাথে যদি ব্যাগ আর টাকা পয়সা না থাকতো তাহলে চোখ বন্ধ করার সাহস পেতাম। ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে। আমি ভোরের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। তবে জানতাম না আমাদের অনেক সহকর্মী এয়ারপোর্টের ভেতরে ছিলেন। ওনারা বের হননি। এমনকি আমাদের বাহারুল ইসলাম স্যারও নাকি ভেতরেই ছিলেন।

আসলে কপালে দুঃখ থাকলে যা হয় আর কি! সারারাত নির্ঘুম কাটানোর পর ভোরের আলোর দেখা মিললো। বাইরে এসে একটা সিএনজি নিয়ে শ্যামলী বাস কাউন্টারে গেলাম। তাদের প্রথম গাড়ি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছাড়বে সকাল নয়টায়। শুনে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। কারণ শরীর এতোটাই ক্লান্ত ছিলো যে নড়াচড়া করতে ইচ্ছে করছিল না। শেষমেষ সিদ্ধান্ত নিলাম নয়টার গাড়িতেই যাবো। অন্তত কাউন্টারে বসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিতে পারবো। একটু পর কাউন্টারের দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘুম ভাঙ্গলো ম্যানেজারের ডাকে। ওয়াশরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলাম। একটু পর গাড়ি কাউন্টারের সামনে আসলো। গাড়িতে উঠে রওনা দিলাম প্রিয় চট্টগ্রামের দিকে। দুঃখ পেছনে লেগেই ছিলো। যে গাড়িতে উঠেছি গাড়ি কেমন জানি চলেই না। সবাই ড্রাইভারকে বকা দিচ্ছিলেন। কারণ তিনি যে গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাতে চট্টগ্রাম পৌঁছতে রাত হবার সম্ভাবনা ছিলো। পুরো গাড়ি ফাঁকা। তেমন প্যাসেঞ্জার নেই। আমি ঘুমের মধ্যেই বাস জার্নি করছি। গাড়ি কোথায় যাচ্ছে খবর নেই। চট্টগ্রাম যেতে পারলেই হলো। কয়েক ঘণ্টার জার্নি শেষে বিকেল চারটায় চট্টগ্রামের জিইসি এসে পৌঁছলাম। গাড়ি থেকে নেমে বন্ধু কাসেমকে কল দিলাম। কারণ সে তখনও অফিসে ছিলো। যেহেতু বোয়ালখালী যাবো দুজন একসাথেই চলে যেতে পারবো। কাসেমের সাথে কথা বলে, তার চট্টগ্রাম ওয়াশার অফিসে গিয়ে হাজির হলাম। পাঁচটায় অফিস ছুটি হলে দুজনে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাড়ি এসে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে সোজা বিছানায় চলে গেলাম। মনে হচ্ছিল রাজ্যের ঘুম আমাকে আঁকড়ে ধরেছে। তাই জেগে থাকা সম্ভব না।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট