চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পর্ব-২৫ঃ ম্যানিলা ওশান পার্কে বেড়ানো

মো. ফারুক ইসলাম

৭ জুলাই, ২০২০ | ১২:০৪ অপরাহ্ণ

পোর্ট সান্টিয়াগো থেকে বের হয়ে আমরা ১০/১৫ মিনিট পর একটা শপিংমলের সামনে গাড়ি দাঁড় করালাম। কারণ দুপরের খাবার খেতে হবে। সময়ও হয়েছে লাঞ্চের। তাই মার্কেটে ঢুকে ইন্ডিয়ান একটা রেস্টুরেন্টে সবাই খাবার খেতে ঢুকলাম। অবস্থা দেখে মনে হলো খাবার পরিবেশন করতে আধ ঘণ্টার বেশি লাগবে। পূর্বের পর্বগুলোতে এই বিড়ম্বনার কথা বলেছি। এখানেও এর ব্যতিক্রম হবে না, সেটা এক প্রকার নিশ্চিত। জানি একবেলা না খেলে মরবো না। কিন্তু যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা ছিলো তাদের তো অবশ্যই খেতে হবে। আমি আর আমার রুমমেট রকিব ভাই খাবারের অর্ডার দিলাম না। বাকিরা খাবারের অর্ডার দিয়ে অপেক্ষায় আছেন। আমি আর রকিব ভাই মার্কেটের বিভিন্ন ফ্লোর ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। সুবিশাল মার্কেট। লোকজনে পরিপূর্ণ। নিচের ফ্লোরে প্রচুর মানুষ। উচ্চস্বরে সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে নিচের ফ্লোরে অনুষ্ঠান হচ্ছিল। প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে নিচের ফ্লোরে। অনেকেই ২য় ও ৩য় ফ্লোরে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলেন। আমরাও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ দেখলাম। কারণ সময় তো কাটাতে হবে। এদিকে, খাবারের টেবিলে এখনো খাবার পরিবেশন করা হয়নি। বুঝতে পারলাম বেড়ানোর মজাটা আজ মাটি হবে। অনেক স্থান দেখা থেকে বিরত হবো। পরবর্তীতে ঠিকই আমার অনুমান সত্যি হয়েছিল। অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত ইন্ডিয়ান খাবার পরিবেশন করা হলো। সবার খাওয়া শেষে পুনরায় যাত্রা আরম্ভ করলাম। এবার আমাদের গাড়ি ছুটছে ম্যানিলা উপসাগরে নির্মিত ম্যানিলা ওশান পার্কের দিকে। আমরা যখন ওশান পার্কের সামনে পৌঁছলাম তখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। ওশান পার্কে প্রবেশের টিকিটের মূল্য ছিলো জনপ্রতি ৬০০ পেসো। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫০০ টাকা। হাতে ব্রেসলেটের মতো করে টিকিটটা লাগিয়ে প্রবেশ করলাম ফিলিপাইনের বিখ্যাত সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের পার্কে। আলো-আঁধারি পরিবেশে হাঁটছি। আর ঘুরে ঘুরে দেখছি একুরিয়ামে রাখা বিশাল আকৃতির সামুদ্রিক মাছ আর বিভিন্ন প্রাণী। ফিলিপাইন মহাসাগরের বুকে নির্মিত এই ওশান পার্ক না দেখলে অনেকটা আফসোসই থেকে যেতো। অসাধারণ একটা জায়গা। আমাদের বাংলাদেশের কক্সবাজারের ঝাউতলার কাছাকাছি এমন একটি ফিস ওয়ার্ল্ড তৈরি করা হয়েছে। তবে ফিলিপাইনের ওশান পার্কের মতো না। এতো সুবিশাল সামুদ্রিক জীবের পার্ক প্রথম দর্শন। খুব মজা পাচ্ছিলাম। আমরা হাঁটছি আর ছবি তুলছি।

মাঝে মাঝে আমাদের প্রিয় টিম লিডার বাহারুল ইসলাম ও ফারুক আলম স্যারের ছবি তুলছিলাম। সবাই কেমন জানি দলছুট হয়ে গিয়েছিলাম। ওশান পার্ক নিয়ে যতটুক জানা যায় তা হলো-এটি ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অবস্থিত একটি সামুদ্রিক ঘর। যেটি ম্যানিলা উপসাগরের বুকে নির্মিত। এটি চীন ওশানিস ফিলিপাইন ইনকের মালিকানাধীন সিঙ্গাপুরীয় নিবন্ধিত সংস্থা চীন ওশানিস ইনক এর একটি সহায়ক সংস্থা। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে ম্যানিলা ওশান পার্কটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল। প্রথম দিকে এটি চালু করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০০৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর। তবে তারিখটি পরিবর্তন করে পরে ২০০৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। সবশেষে ২০০৮ সালের মার্চ মাসে ওশান পার্কটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল। ম্যানিলা ওশান পার্কের প্রধান আকর্ষণ হলো ওশেনারিয়াম, যেখানে প্রায় ২৭৭ প্রজাতির ১৪ হাজার সামুদ্রিক প্রাণী রয়েছে। এসব সামুদ্রিক প্রাণীগুলো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। ওশেনারিয়ামের সাতটি বিভাগ রয়েছে এবং এতে ৩ হাজার ঘনমিটার সমুদ্রের জল রয়েছে। এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো ওশেনারিয়ামের অভ্যন্তরে বাঁকা ওয়াকওয়ে টানেল। মনে হবে সমুদ্রের পানির নিচ দিয়ে হাঁটছি। এতো সুন্দর টানেল আর আঁকা-বাঁকা পথ দেখে মনে হচ্ছিল আস্তে আস্তে গভীর সমুদ্রে প্রবেশ করছি। ওশেনারিয়ামে ব্যবহৃত পানি ম্যানিলা উপসাগর থেকে প্রাপ্ত। যা সামুদ্রিক জীবনের উপযোগী করে ফিল্টার করা হয়। এটিতে সামুদ্রিক হাঙ্গর থেকে শুরু করে অনেক হিংস্র প্রাণী দেখার সুযোগ রয়েছে। এটি ফিলিপাইনের প্রথম পেঙ্গুইন পার্ক, যেখানে হাম্বল্ট পেঙ্গুইন রয়েছে। ২০১৭ সালের মে পর্যন্ত ওশান পার্কের অভ্যন্তরে মোট ১৩টি পেঙ্গুইনের বাচ্চা ছিলো। এখানে সাঁতার শেখার ব্যবস্থাও আছে। আবার নৌকায় করে ঘুরার ব্যবস্থাও বিদ্যমান। হাঁটতে হাঁটতে আমরা সবাই অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমি, বাহারুল ইসলাম স্যার এবং ফারুক আলম স্যারসহ অনেকেই বিশাল এক একুরিয়ামের সামনে এসে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিলাম। বিশ্রাম নিচ্ছি ঠিক আছে, কিন্তু সেখানেও চলছে ফটোসেশন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা ওশান পার্ক থেকে বের হবার প্রস্তুতি নিলাম। উপরে এসে ওশান পার্কে দাঁড়িয়ে ম্যানিলা উপসাগর দেখছিলাম। শান্ত, কোন ঢেউ নেই। যতদূর চোখ যায় পানি আর পানি। তবে প্রচুর বাতাস ছিলো। চলে আসতে মন চাইছিলো না। কিন্তু সময় বলে দিচ্ছিল এখন ফিরতে হবে। তাই সবাই পার্ক থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠলাম। এবার আমাদের গন্তব্য ম্যানিলার শপিংমলে। সন্ধ্যায় শপিংমলে পৌঁছে সবাই টুকটাক কেনাকাটা করে সাড়ে নয়টার দিকে হোটেলে ফিরেছিলাম। হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে আমরা কয়েকজন বাইরে অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম। সাথে ছিলেন বাহারুল ইসলাম স্যার, ফারুক আলম স্যার, মনি আপা, নিলুফার আপা, রকিব ভাই সহ আরও অনেকেই। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে সবাই ঘুমোতে গেলাম। কারণ পরদিন সকালে যেতে হবে ফিলিপাইনের বিখ্যাত তাল আগ্নেয়গিরি দেখতে। (চলবে..)

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট