চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

পর্ব-২০ঃ আবেগী এক ভোর

মো. ফারুক ইসলাম

২ জুলাই, ২০২০ | ১২:৫৪ অপরাহ্ণ

২৯ জুন ২০১৯ এর খুব ভোরে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। বিছানা থেকে উঠে মোবাইলটা চার্জে লাগিয়ে রাখলাম। দেশ থেকে যে চার্জার নিয়ে গিয়েছিলাম সেটা প্লাগে ঢুকতো না। হোটেলের প্লাগগুলো ছিলো একদম চিকন। কারণ রুমে আমরা দুইজন সদস্য হওয়ার কারণে সবকিছু সময়মত সম্পন্ন করতাম। তাই ভাগাভাগি করেই মোবাইল চার্জে লাগাতে হতো দুজনকে। রকিব ভাই অনেক আন্তরিক একজন মানুষ। বয়সে বড় হলেও বন্ধুর মতো মিশতেন। সব সময় সহযোগিতা করতেন। বাংলাদেশ থেকে ফিলিপাইন আসার দিন বাড়ির সবার জন্য খুব খারাপ লেগেছিল। কিন্তু দিন যতই শেষ হয়ে আসছিল কেমন জানি এখান থেকে সবাইকে ছেড়ে যেতে হবে সেটা ভেবে তখন বেশি খারাপ লাগছিল। ২৫ জন মানুষ আবার আলাদা হয়ে যাবো। এমন সময় আর কখনো আসবে না সেটা মনে করেই এক ধরনের শূন্যতা মনে উঁকি দিচ্ছিল। কারণ সবার সাথে আন্তরিকতার এমন এক বন্ধন তৈরি হয়েছিল যে, মনেই হয়নি আমরা বাংলাদেশের ভিন্ন ভিন্ন জেলা থেকে ফিলিপাইনে এসেছি। রুমের জানালা দিয়ে ভোরের আবছা আলো প্রবেশ করছিল। বাইরে এক পশলা হালকা বৃষ্টিও হয়ে গেছে। পাখির কিচিরমিচির ডাকে অন্যরকম এক সকাল দেখছিলাম। জীবনে এমন প্রাপ্তি আমার জন্য ছিলো তা ভাবতে ভাবতে আবেগাপ্লুত হয়ে যাচ্ছিলাম। আসলে মানুষের জীবনটাই বিচিত্র! সৃষ্টিকর্তা কখন কার জন্য কি পুরষ্কার রেখেছেন সেটা তিনি ছাড়া কারো জানার সাধ্য নেই। সকাল ৬টায় আমার রুমমেট রকিব ভাইকে ডাকতে আরম্ভ করলাম। উঠবেন, উঠবেন বলে ঘুমাচ্ছিলেন। আমাদের রুমে একটাই ওয়াশরুম। তাই তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে যেতে দু’জনকেই প্রস্তুতি নিতে হতো। বাংলাদেশ থেকে লাগেজ ভর্তি কাপড় চোপড় নিয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম গোসল করার সময় পরনের কাপড় ধুয়ে হোটেলের ছাদে শুকাতে দিতে পারবো। আর শুকানোর পর হোটেলের কাউকে দিয়ে আয়রন করাই আনবো। কিন্তু আমার ধারণাটা ছিলো ভুল। হোটেলের ওয়াশরুমে কাপড় চোপড় ধোয়া নিষেধ ছিলো। রিসিপশনের ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কাপড় শুকানোর কোন ব্যবস্থা আছে কিনা। তিনি বলেছিলেন, কাপড় চোপড় শুকানোর কোন ব্যবস্থা হোটেলে নেই। বাইরে লন্ড্রিতে দিয়ে আসতে হবে। এ এক মহা ঝামেলা। কি আর করা । কাপড় যা পরছি তা নির্দিষ্ট একটা ব্যাগে জমা রাখছিলাম। মানে বাংলাদেশে এসে ধুতে হবে। হোটেল থেকে লন্ড্রির দূরত্ব অনেক। তাছাড়া আসছি অল্প কয়েকদিনের জন্য। সময় মতো নিতে না পারলে ঝামেলায় পড়ে যাবো। সব ভেবে আর লন্ড্রিতে যাইনি কেউ। রুমের ফ্যানের নিচে হালকা পাতলা কাপড়গুলো ধুয়ে শুকিয়ে ফেলতাম। তবে ফিলিপাইনে যে বিষয়টা লক্ষ করছি তা হলো, তারা খুব নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত। পানি কিছুতেই অপচয় করেন না। অনেক মার্কেটের ওয়াশরুমে গিয়ে টিস্যু ছাড়া পানি পাওয়া যাইনি। তাই বাইরে যতবারই গেছি ওয়াশরুমে যাবার চিন্তাটা মাথা থেকে বাদ দিয়েই গেছি। কারণ পানি ছাড়া ওয়াশরুমে যাওয়া কেমন জানি লাগছিল। আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা আর প্রশিক্ষণে যাবার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলাম। আমার পরে রকিব ভাই ফ্রেশ হয়ে এসে তিনিও প্রস্তুতি নিলেন। দুজনেই হোটেলের নিচের ক্যাফেটেরিয়ায় গেলাম নাস্তা করতে। আমাদের আগে অনেকেই নাস্তা খাওয়ার পর্ব শেষ করে ফেলেছিলেন। অল্প আঁঠালো সাদা ভাত, ডিম আর আনারসের জুস এই ছিলো সকালের খাবার। সাদা ভাতে লবণ ছিটিয়ে সরিষার তেল, পিঁয়াজ মিশিয়ে খেতে আরম্ভ করলাম। দুয়েক দিনে কেমন জানি এই খাবারটায় অভ্যস্থ হয়ে গেছি। খাবার শেষে এক কাপ কফি! ব্যস, হয়ে গেলো। কফিটা খেতে দারুণ । তাই ওটা খেতে ভুল করতাম না। হাতে অল্প সময় ছিলো এরই ফাঁকে ক্যাফেটেরিয়ার পাশে নয়নাভিরাম যে স্থানটা আছে সেখানে দাঁড়িয়ে কিছু ছবি তুললাম।

চৌধুরী শারমিন শামস মনি আপা সবগুলো ছবি তুলে দিয়েছিলেন। এরপর রিসিপশনের সামনে তৈরি করা সুন্দর আরেকটি স্থানে সবাই মিলে ছবি তুলতে লাগলাম। ভোরে হালকা বৃষ্টির পর একটু রোদের দেখা মিলেছে। তবে আকাশ পুরোপুরি পরিষ্কার না। হোটেলের বাইরের ফোয়ারাটা অনেক সুন্দর। সবাই বাইরে বের হলাম ছবি তুলতে। ২৫ জন মানুষের একসাথে ছবি তোলা ছিলো সময় সাপেক্ষ। তাই মনি আপার মোবাইলেই সব ছবি তুলছিলাম যাতে সময়ের অপচয় না হয়। এদিকে, আজ প্রশিক্ষণের সমাপনী দিবস সেটা আমার জানা ছিলো না। অথচ আমাদের সাতদিনের একটা শিডিউল দেয়া হয়েছিল। সেটা দেখিনি বলেই হয়তো জানতাম না। প্রজেক্ট এসিসটেন্ট আন্না কারিনা এস. বাতিস্তা সকাল থেকেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এই ভদ্র মহিলা অনেক পরিশ্রমী এবং মিশুক। মুখে সব সময় হাসি লেগে থাকে। কোন ক্লান্তিবোধ ওনার মাঝে দেখিনি। সময়ের প্রতি যথেষ্ট সচেতন। আমরা ঘুম থেকে ওঠার আগেই তিনি হোটেলে এসে হাজির হতেন। আসলে কাজের প্রতি আন্তরিকতা থাকলে এমনটি হয়। যাই হোক, আমাদের প্রতিদিনের শিডিউলে কোন গাড়িতে করে প্রশিক্ষণ সেন্টার এবং বেড়াতে বের হবো সেটা উল্লেখ ছিলো। আজ আমরা মিনিবাসে যাচ্ছি না। আজ যাবো জিপে করে। ছবি তোলা শেষে সবাই জিপে উঠে পড়লাম। এবার আমাদের গন্তব্য ইউনিভার্সিটি অফ দ্যা ফিলিপাইন্সে। আজ বিদায় নিতে হবে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সে সাথে জেসন অর্নিডো আর আন্না কারিনা এস. বাতিস্তার সাথেও কাল থেকে আর দেখা হবে না। কারণ ওনারা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ওনাদের দায়িত্ব শেষ।-(চলবে)
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট