চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পর্ব-১৬ঃ বাঙালি স্বাদে তৃপ্তির ভোজন

মো. ফারুক ইসলাম

২৮ জুন, ২০২০ | ১২:৩১ অপরাহ্ণ

ইউপি ইন্টিগ্রেটেড স্কুল পরিদর্শন শেষে দুপুরের খাবার খেতে রেস্টুরেন্টে যেতে আমরা গাড়িতে উঠলাম। বাইরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। বৃষ্টিতে ইউপি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের পরিবেশটা অসাধারণ লাগছিল। সিক্ত প্রকৃতি যেন সবুজের চাদরে ঢেকে গেছে। গাছে গাছে সবুজ পাতা আর ফুলের সমারোহ। নিরিবিলি পরিবেশে বেশ ভালোই লাগছিল। গাড়িতে যেতে যেতে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। প্রায় ১৫ মিনিট পর ইউপি ক্যাম্পাসের এক রেস্টুরেন্টে আমরা পৌঁছলাম। রেস্টুরেন্টের পরিবেশ অনেক সুন্দর। বাইরে ছোট খোলা মাঠ আর ফুলের বাগান। রেস্টুরেন্টের দেয়ালে বিভিন্ন ছবি। তেমন বড় না। তবে খুবই গোছানো আর পরিচ্ছন্ন। দুজন মহিলা রেস্টুরেন্টটি পরিচালনা করছেন। আজ যেহেতু প্রশিক্ষণ নেই, তাই দুপুরের খাবারের বিলটা নিজেদের পরিশোধ করতে হবে। খাবারের অর্ডার দিলাম সাদা ভাত, ডাল। ডিমের অর্ডার করতে গিয়েও করলাম না। কারণ বাংলাদেশের ১০ টাকার ডিম ফিলিপাইনে বাংলাদেশি টাকায় ২১০ টাকা। শুনে হাসছিলাম। কারণ ফিলিপাইনের পেসোর কথা চিন্তা করলে সে টাকা তেমন কিছু না। এরপরও গত ২দিন ধরে যেহেতু খাবার খেয়ে কোন তৃপ্তি পাচ্ছিলাম না, তাই শুধু ডাল-ভাত খাওয়ার সিদ্ধান্তই নিলাম। শুধু আমি না, গ্রুপের অধিকাংশ সদস্যই ডাল, ভাতে আস্থা রাখলো। ফিলিপাইনে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে যে সমস্যাটা বেশি হয়েছে, সেটি হলো খাবারের অর্ডার দিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা। ফিলিপাইনের লোকজন ফাস্ট ফুডে অভ্যস্ত। তারা ফাস্ট ফুডই বেশি খান। তাই হয়তো রেস্টুরেন্টগুলোতে ভাতের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তাছাড়া সারাদিন যতই ফাস্ট ফুড খাই না কেন, আমরা বাংলাদেশিদের ভাত না খেলে চলেই না। তাই ভাত খাওয়া চাই, চাই। যাহোক, খাবার টেবিলে পরিবেশন করা হলো। সাদা ভাত আর ডাল প্লেটে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। মুখে দেয়া মাত্রই দু’চোখ বন্ধ করে তৃপ্তি নিলাম। একদম বাংলাদেশি স্বাদ।

মনে হচ্ছিল ৩ দিন পর খাবারে বাংলাদেশি ফ্লেভার পেলাম। কিন্তু ফিলিপাইনে বাঙালি খাবারের স্বাদ মানে তো অবাক ব্যাপার। সবার দিকে তাকাচ্ছিলাম আর সবার খাওয়া দেখছিলাম। খাবার মুখে দিয়ে সবাই যে তৃপ্ত তা চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছিল। এবার সবার মনে কৌতূহল জাগলো বাবুর্চিকে একপলক দেখার। খাবার খাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু ডালের প্লেট দেখে মনে হচ্ছিল ডাল মেপে মেপে প্লেটে দিছে। ডালের সাথে আলু কুচি কুচি করে রান্না করা হয়েছে। ৩ দিন পর তৃপ্তি সহকারে খাবার খেয়ে সবাই খুশি। অল্প ডাল, ভাতের মূল্য অনেক টাকা। কিন্তু ক্ষুধার জ্বালায় পৃথিবী গদ্যময়। তাই টাকা যতই হোক খেতে তো হবেই। খাওয়া শেষ হওয়ার পর সবাই বিল পরিশোধ করে দাঁড়ালাম বাবুর্চিকে এক নজর দেখার জন্য। ভদ্র মহিলারা ভেতর থেকে বাবুর্চিকে ডেকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তার সম্পর্কে জানলাম, বাবুর্চির জন্মস্থান পাকিস্তানে। ফিলিপাইনে এসে বাবুর্চির কাজ করছেন। এবার বুঝতে পারলাম বাংলাদেশি খাবারের স্বাদ পাওয়ার রহস্য। আমাদের পার্শ্ববর্তী পাকিস্তানের নাগরিক হওয়ায় খাবারে কিছুটা হলেও বাংলার স্বাদ পেলাম। খাবার তো খেলাম, এবার নিচ্ছিলাম রাজশাহীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক শহীদুল ভাইয়ের “ইয়া, ইয়া” এবং “ওপেন টু অল” ডায়ালগের বিনোদন। মহিলা দুজনও বুঝতে পেরেছিলেন শহীদুল ভাই অনেক মজার মানুষ। তাই ওনারাও শহীদুল ভাইয়ের সাথে মজা করছিলেন। সবাই দেখে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হওয়ার উপক্রম। আসলে প্রত্যেকটা ট্যুরে শহীদুল ভাইয়ের মতো কয়েকজন মজার মানুষ থাকলে ট্যুরে আনন্দ লাভ করা যায়। শহীদুল ভাই আবার ক্ষুধা সহ্য করতে পারেন না। এর পিছনে আবার কারণও আছে। শহীদুল ভাইয়ের ডায়াবেটিস আছে। তাই সঠিক সময়ে খাবার ওনাকে খেতেই হবে। খাওয়া দাওয়া শেষ। বৃষ্টির দাপট আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো। পুরোদিনটাই যেন বৃষ্টিময়। দুটো স্থান পরিদর্শন করলাম। তবুও শরীরে কারও কোন ক্লান্তি নেই। কারণ যেখানেই যাচ্ছি নতুন নতুন পরিবেশে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করছি। খুব ভালোই লাগছিল ঘুরতে আর নতুন পরিবেশ ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে। এবার আমাদের গন্তব্য নিনয় একুইনো এলিমেন্টারি স্কুল। হালকা বৃষ্টির মধ্যে সবাই গাড়িতে উঠার জন্য হাঁটতে লাগলাম। আমাদের সাথে রেস্টুরেন্টের দুই ভদ্র মহিলাও আসছিলেন বিদায় জানাতে। গাড়িতে উঠেই সবাই বিদায় নিয়ে ছুটলাম নিনয় একুইনো এলিমেন্টারি স্কুলপানে।-(চলবে)

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট