চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পর্ব-১৫ঃ ইউপি ইন্টিগ্রেটেড স্কুল পরিদর্শন

মো. ফারুক ইসলাম

২৭ জুন, ২০২০ | ২:০৯ অপরাহ্ণ

আমরা যখন ফিলিপাইনের শিক্ষা বিভাগের কেন্দ্রীয় অফিস থেকে বাইরে আসলাম, তখন সূর্য আর মেঘের লুকোচুরি চলছিল বাইরে। সবাই অফিসের বাইরে কয়েকটা ছবি তুললাম। উল্লেখ্য, সাজানো গোছানো অফিসের প্রবেশ পথে রয়েছে ফিলিপাইনের নাম করা ব্যক্তিদের ছবি। যেহেতু তৃতীয় দিন আমাদের ব্যস্ত সূচি তাই সময়ক্ষেপণ করা যাচ্ছিল না। সবাই গাড়িতে উঠে পড়লাম। এবার যাত্রা স্কুল পরিদর্শনে। ইউনিভার্সিটি অফ দ্যা ফিলিপাইন্সের ক্যাম্পাসে অবস্থিত ইউপি ইন্টিগ্রেটেড স্কুল। আমাদের দেশের প্রাইমারি স্কুলের মতোই। আমরা সকাল ১১টার দিকে স্কুল ক্যাম্পাসের সামনে গিয়ে পৌঁছলাম। গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা অবাক হলাম স্কুলের সুন্দর ও শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ দেখে। প্রথমেই স্কুলের অফিস কক্ষে প্রবেশ করতেই আমাদের অভ্যর্থনা জানানো হলো। সুন্দর, পরিপাটি অফিস রুম। কিছুক্ষণ পর স্কুলের অধ্যক্ষ আমদের নিয়ে শ্রেণিকক্ষ পরিদর্শনে বের হলেন। আমাদের বৈদেশিক শিক্ষা সফরটা ছিল জুন মাসে। কিন্তু ইউপি ইন্টিগ্রেটেড স্কুলে তখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছিল। শিক্ষার্থী বিহীন স্কুল পরিদর্শন করা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় ছিল না। এরপরও সবাই একে একে সবগুলো শ্রেণিকক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।প্রতিটি শ্রেণিকক্ষই সুন্দর এবং সাজানো গোছানো। প্রতিটি কক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি বিভিন্ন উপকরণে সাজানো। মনে হচ্ছিল কোন স্কুল নয়। একটা উপকরণ মেলায় এসেছি। এবার প্রবেশ করলাম প্রাক-প্রাথমিক বা শিশু শ্রেণিতে। দারুণ পরিবেশ! ছোট ছোট প্লাস্টিকের চেয়ার আর টেবিলে ভরপুর কক্ষটা। সমাবেশের জন্য রয়েছে নির্ধারিত জায়গা। আবার এক সারিতে কতজন দাঁড়াতে পারবে সেটাও এক জায়গায় লেখা আছে। বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ ও শ্রেণিকক্ষে শৃঙ্খলার ব্যাপারে শিক্ষা প্রদান করা হয়। তারা যখন বিষয়টার সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন নির্দিষ্ট সময়ে নিজেরাই লাইন-ফাইল করে দাঁড়িয়ে যায়। আমাদের দেশে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ সাজানোর জন্য সরকার বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। কিন্তু ফিলিপাইনে শ্রেণিকক্ষ সাজানোর জন্য সরকারি কোন বরাদ্দ নাই। নিজ ও ব্যক্তি উদ্যোগে স্থানীয় অভিভাবক এবং অভিজাত ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে শ্রেণিকক্ষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়। সরকারি বরাদ্দ না থাকার কারণে হয়তো কষ্টে জোগাড় করা অর্থে সাজানো কক্ষগুলো পরিপাটি রাখা এবং উপকরণগুলোর যত্ন নিতে শিক্ষকরা বেশি আন্তরিক।

প্রতিটি শিক্ষকই দায়বদ্ধ শ্রেণিকক্ষের রক্ষণাবেক্ষণ এবং সম্পদ রক্ষার্থে। অথচ আমাদের দেশে সরকার এতো টাকা দেয়ার পরেও অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হয়ে যায় অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র। এক কথায়, নিজের পেশার প্রতি আন্তরিকতা ছাড়া এসব কাজ করা সম্ভব না। পেশাটাকে মনে প্রাণে ভালোবাসতে হবে। নিজের স্কুলকে আমার স্কুল মনে করতে হবে। প্রধান শিক্ষক সবকিছুর দেখভাল করবেন এমনটা নয়। প্রতিটি কাজে সব শিক্ষকের অংশগ্রহণই নিশ্চিত হতে পারে একটা বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন। তবে আমাদের প্রশিক্ষণটা ছিলো ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলাতে। প্রত্যেক দেশের রাজধানী কিংবা নগর কেন্দ্রিক স্কুলগুলো সাজানো গোছানো থাকে। আমরা যদি ফিলিপাইনের গ্রামা লে গিয়ে কোন স্কুল পরিদর্শন করতে পারতাম তাহলে বাস্তব চিত্রটা আরো বেশি উপলব্ধি করতে পারতাম। তাই মনের মধ্যে কৌতূহলটা থেকেই গিয়েছিল। অর্থাৎ ফিলিপাইনের গ্রামা লের স্কুলগুলোর পরিবেশ আদৌ কেমন। আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় গ্রামে অবিস্থত। তাই আমাদের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় আর সেদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য বের করার জন্য গ্রামের স্কুল পরিদর্শন ছিলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে যারা এই ধরনের শিক্ষা সফর ও প্রশিক্ষণে যাবেন তাদের সূচিতে এটি রাখবেন।

এবার আসা যাক স্কুলের বর্ণনায়, ইন্টিগ্রেটেড স্কুলে দুইটি শিফট বিদ্যমান। সকাল ও বিকাল শিফট। সকাল শিফট আরম্ভ হয় সকাল সাড়ে সাতটায়। আর ছুটি হয় ১১টা ৫০মিনিটে। বৈকালিক শিফট শুরু হয় সোয়া ১২টায়। আর শেষ হয় ৪টা ২৫ মিনিটে। প্রতি সেকশনে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকে আর শিক্ষক থাকেন ২ জন। তাদের কিন্ডারগার্টেন সেকশনে ১০০ জন শিক্ষার্থী এবং ৪ জন শিক্ষক পাঠদান করে থাকেন। বিদ্যালয়টিতে ১৩০০ জন শিক্ষার্থী এবং ৭৫ জন শিক্ষক আছেন। স্কুলের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জুন ও জুলাই মাসে গ্রীষ্মকালীন ছুটি। আগস্ট থেকে মে পর্যন্ত একাডেমিক সেশন পরিচালিত হয়। স্কুলটিতে গ্রেড ১ থেকে ১২ পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে ১ জন অধ্যক্ষ, ২ জন উপাধ্যক্ষ, ২ জন একাডেমিক সুপারভাইজার আছেন। তাদের দক্ষ নেতৃত্বে স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গ্রেড ৩ থেকে ৬ পর্যন্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪০০ জন। স্কুলের শ্রেণি কার্যক্রম চলে সপ্তাহে ৪ দিন। শনি ও রবিবার স্কুলের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ওই দুইদিন শিক্ষকগণ মিটিংয়ের মাধ্যমে পরবর্তী সপ্তাহের কার্যসূচি ঠিক করেন। সবল ও দুর্বল দিক চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে নতুন করে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেন। শ্রেণিকক্ষ পরিদর্শন শেষে আমরা অধ্যক্ষের সাথে স্কুলের লাইব্রেরি দেখতে গেলাম। বিশাল একটা কক্ষে লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে। এতে দুইজন লাইব্রেরিয়ান রয়েছেন। তারা আমাদের লাইব্রেরি ঘুরিয়ে দেখালেন। পাশাপাশি লাইব্রেরি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিলেন। লাইব্রেরিতে ৬ সহস্রাধিক বই আছে। বই পড়ার জন্য আছে বুক কর্নার। সেই সাথে বাড়িতে নিয়ে পড়ারও সুবিধা রয়েছে। অধিকাংশ সময় শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতেই বসে বই পড়ে। লাইব্রেরি পরিদর্শন শেষে আমরা দুপুরের খাবাবের প্রস্তুতি নিলাম। আমাদের সাথে ছিলেন প্রজেক্ট এসিসটেন্ট জেসন অর্নিডো এবং আন্না কারিনা এস. বাতিস্তা।-(চলবে)

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট