চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পর্ব-১০ঃ ফিলিপাইনের মুসলিম ইতিহাস

মো. ফারুক ইসলাম

১৮ জুন, ২০২০ | ১২:০৭ অপরাহ্ণ

ফিলিপাইন ৭ হাজার ১’শত ৭টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি রাষ্ট্র। এদের মধ্যে ১১টি বড় দ্বীপ মোট আয়তনের ৯৪ ভাগ বহন করছে। ফিলিপাইনের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। খ্রিস্টান অধ্যুষিত রাষ্ট্র হলেও অন্যান্য ধর্মের লোকও এখানে আছে। যদি ইসলাম ধর্মের কথা বলি তাহলে বলা যায়, ফিলিপাইনে ইসলাম ধর্মের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। ইসলাম ফিলিপাইনের সবচেয়ে প্রাচীন নথিভুক্ত একেশ্বরবাদী ধর্ম। পারস্য উপসাগর, দক্ষিণ ভারত এবং অন্যান্য মুসলিম সালতানাত থেকে আগত মুসলিম বণিকদের মাধ্যমে ১৪শ শতকে ফিলিপাইনে ইসলাম ধর্মের আগমন ঘটে। সর্বপ্রথম মালয় দ্বীপপুঞ্জে তাদের আগমন ঘটে। ফিলিপাইনের আদমশুমারি অনুসারে, বর্তমানে মুসলমান মোট জনসংখ্যার ৬%, কিন্তু ফিলিপাইনের দি ন্যাশনাল মুসলিম অব কমিশনের হিসেব অনুসারে, বর্তমানে মুসলমান মোট জনসংখ্যার ১১%। যেখানে খ্রিস্টানরা সংখ্যাগুরু এবং কিছু বৌদ্ধ এবং সর্বপ্রাণবাদে বিশ্বাসী সম্প্রদায় বিদ্যমান। জানা যায়, ১৩৮০ সালে করিম উল মখদুম নামক আরব বণিক সর্বপ্রথম ফিলিপাইনের সুলু এবং জুলু দ্বীপপুঞ্জে আগমন করেন এবং সেখানে বাণিজ্যের সাথে সাথে সমস্ত দ্বীপে ইসলামকে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ফিলিপাইনে প্রথম ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৩৯০ সালে মিনাঙ্গ্কাবাউ রাজবংশের প্রিন্স রাজা ব্যাগুইনদা এবং তার অনুসারীরা ইসলাম গ্রহণ করেন এবং দ্বীপপুঞ্জে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। শেখ করিম আল-মাখদুম মসজিদটি ফিলিপাইনের প্রথম মসজিদ যা মিন্দানাওয়ের সিমুনুল প্রদেশে ১৪শ শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় ভ্রমণকারী আরব ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে ফিলিপাইনে ইসলাম আরও শক্তিশালী হয়। আর তখনকার ফিলিপাইনের রাজ্য গুলো রাজা এবং সুলতানদের দ্বারা শাসিত হত। চীন, ভারত এবং পারস্য থেকে আগত মুসলিম মিশনারিদের দ্বারাও এখানে ইসলাম প্রচারিত হয়। তৎকালীন ফিলিপাইনে অন্তর্ভুক্ত মুসলিম প্রদেশ সমূহ হলো : মাগুইন্দানাও সালতানাত, 

সুলু সালতানাত, লানাও সালতানাত এবং দক্ষিণ ফিলিপাইনের অন্যান্য অংশ। ১৫৬৫ সালে মিগুয়েল লোপেজ ডি লেগাসপির নেতৃত্বে একটি দ্রুতগামী স্প্যানিশ নৌবহর ফিলিপাইনে আসে। স্থানীয় নথি অনুযায়ী তারা ভ্রমণ করার উদ্দেশ্যে এই দ্বীপপুঞ্জে এসেছিল। তারা ম্যানিলা, ব্রুনাই সালতানাত এবং একটি সামন্ত রাষ্ট্র ভ্রমণ করার পর ১৫৭০ সালে মুসলিম রাজা, রাজা সুলাইমান তৃতীয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে। মিন্দানাও ফিলিপাইনের দক্ষিনাঞ্চলে অবস্থিত একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বীপ। এ অঞ্চলের মুসলমানরা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। মুসলিম আন্দোলকারীরা নূর মুসোনির নেতৃত্বে আন্দোলন করেছে। মিন্দানাও দ্বীপের ১৪টি অঞ্চলে ১৯৯৯ সালে গণভোট হয়। আবু সায়াফ ফিলিপাইনের গেরিলা সংগঠন। মরো ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট স্বাধীনতাকামী ফিলিপাইনের সংগঠন। মুসলিম মরো বিদ্রোহীদের সাথে ফিলিপাইনের সরকারের শান্তিচুক্তি হয় ১৯৯৬ সালে ২ সেপ্টেম্বর। মুসলিম মরো বিদ্রোহীদের সাথে ফিলিপাইনের সরকারের অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয় ২০০১ সালের ৭ আগস্ট। বর্তমানে মিন্দানাও দ্বীপটিতে মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেশি। মুসলমানদের বহু সংগ্রামের পর এই দ্বীপে মুসলমানদের বসতি স্থায়ী হয়। রাজধানী ম্যানিলাসহ বিভিন্ন দ্বীপে অনেক নয়নাভিরাম মসজিদ দেখা যায়। ফিলিপাইনের সবচেয়ে বড় মসজিদ সুলতান হাজি হাসানাল বলখী মসজিদ (দি গ্রান্ড মসজিদ)। এটি ফিলিপাইনের কোটাবাটো রাজ্যে অবস্থিত। এছাড়া বিখ্যাত গোলাপি মসজিদও আছে। দ্বীপ রাষ্ট্র হওয়ার কারণে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যেতে অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সড়ক পথে যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় অনেককে দ্বীপে বিমানে করে যেতে হয়। ফিলিপাইনে পৌঁছে আমাদের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মিস্টার জুনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মিন্দানাও দ্বীপটা ম্যানিলা থেকে কতো দূর। তিনি বলেছিলেন, দ্বীপটা ম্যানিলা থেকে অনেক দূরে। যাওয়াটাও অনেক কষ্টসাধ্য। বিমানে করে যেতে হবে। তাকে মুসলিম অধ্যুষিত এই দ্বীপের কথা জিজ্ঞেস করার পেছনে একটা কারণও ছিলো। সেটি হলো, আমি ফিলিপাইন যাবো সেটা জানতে পেরে আমার উপজেলার কধুরখীল গ্রামের এক ছেলে মেসেঞ্জারে আমাকে বলেছিল, তার বাবা জাহাজে চাকরি করতেন। ফিলিপাইনের মিন্দানাও দ্বীপের কাছাকাছি তার বাবাদের জাহাজ জলদস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। এরপর তার বাবার আর কোন সন্ধান তারা পায়নি। তার পরিবারের বিশ্বাস তার বাবা এখনো বেঁচে আছেন এবং মিন্দানাও দ্বীপে জলদস্যুদের কাছে বন্দী আছেন। তাই যদি সুযোগ হয় ফিলিপাইন গেলে তার বাবার যেন একটু খবর নেয়ার চেষ্টা করি। ছেলেটি মেসেঞ্জারে তার বাবার ছবি সম্বলিত কিছু সংবাদপত্রের ছবিও আমাকে পাঠিয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় খবর নেয়ার চেষ্টা করেছি , রাজধানী থেকে দূরে হওয়ার কারণে সঠিক তথ্য কারও কাছে পাইনি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট