চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পর্ব-৮ঃ ইউনিভার্সিটি হোটেলে যাত্রা

মো. ফারুক ইসলাম

১৬ জুন, ২০২০ | ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

আমাদের গাড়ি বিমান বন্দর ত্যাগ করে ‘Diliman Gi Quezon City’তে অবস্থিত এর ইউনিভার্সিটি হোটেলে যাচ্ছিল। বিমান বন্দরের রাস্তার ফ্লাইওভার থেকে ফিলিপাইনের University of the Philipines এর সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। সত্যি অনেক সুন্দর এবং এবং পরিচ্ছন্ন শহর। আমাদের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আমাদের শহরের বিভিন্ন স্থাপনা দেখিয়ে একেকটার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। প্রায় আধঘণ্টা জার্নি শেষে আমরা ফিলিপাইনের মেট্রো ম্যানিলায় অবস্থিত ইউনিভার্সিটি হোটেলে পৌঁছলাম। গাড়ি থেকে নেমে ইউনিভার্সিটি হোটেলের চারপাশের সৌন্দর্য দেখে আমরা অভিভূত হলাম। চারিদিকে সারি সারি গাছপালা, হোটেলের সামনে দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা। এক কথায়, অসাধারণ পরিবেশ এবং বিশুদ্ধ অক্সিজেনের আধার বলা যায়। হোটেলে প্রবেশ করতেই আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। এরপর সবাইকে রুমের চাবি বুঝিয়ে দিলেন হোটেলের ম্যানেজার। চট্টগ্রাম জেলা থেকে যেহেতু আমি একজনই, তাই কার সাথে রুম শেয়ার করবো সেটাই ভাবছিলাম। তবে তেমন বেগ পেতে হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক মো. আবদুর রকিব ভাই নিজ থেকে অফার করলেন ওনার সাথে রুম শেয়ার করতে। রাজি হয়ে গেলাম। কারণ রকিব ভাই অসাধারণ একজন মানুষ। যথেষ্ট হেল্পফুল। অবশ্য আমাদের ট্যুরের প্রত্যেক সদস্যই ছিলেন খুবই আন্তরিক এবং ভালো মনের মানুষ। ট্যুরের বিভিন্ন পর্বে বিস্তারিত আলোচনায় তা আপনারা জানতে পারবেন। হোটেলের রুমের দরজার কোন চাবি ছিল না। সেন্সর সিস্টেম দরজায় কার্ড শো করলে দরজা খুলে যায়। এদিকে, আমাদের রুম ছিল হোটেলের তৃতীয় তলায়। তাই হোটেলের ম্যানেজার চাবি বুঝিয়ে দেয়ার সময় সবাইকে ওয়াই-ফাই সংযোগের কোড নম্বরটিও দিয়েছিলেন। হোটেলের রিসিপশনের কাজ শেষ করে আমরা রুমে চলে গেলাম। রুমে প্রবেশ করে প্রথমে গোসল করে ফ্রেশ হলাম। ঘুমানোর আগে   

বাড়ির সবার সাথে কথা বলার জন্য মোবাইলে ওয়াই-ফাই সংযোগ দিলাম। উল্লেখ্য, ফিলিপাইনের সাথে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য ২ ঘণ্টা। অর্থাৎ হোটেল থেকে যখন বাড়িতে কথা বলছিলাম তখন ফিলিপাইনে ৪ টা আর বাংলাদেশে ২টা। বাড়ির সবার সাথে যোগাযোগ শেষে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলাম। হোটেলের সেমিনার কক্ষে আমাদের ব্রিফিং সেশন শুরু হলো সাড়ে ৫টায়। আমাদের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মিস্টার জুন ফিলিপাইনের এক সপ্তাহের ট্যুর সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত ধারণা দিলেন। উল্লেখ্য, আমাদের আগেই বলা হয়েছিল ব্রিফিং সেশনে আসার সময় বাইরে বেরোনোর প্রস্তুতি নিয়ে আসতে। আমরা সেভাবেই ব্রিফিং সেশনে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমরা গাড়ি করে ম্যানিলার এসএম শপিংমলে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে প্রথম কাজটি ছিলো সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া ডলার পরিবর্তন করে ফিলিপাইনের পেসো নেয়া। শপিং মলের নিচের ফ্লোরে আমরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে মানি এক্সচেঞ্জ করলাম। বলে রাখা ভালো, এক ইউএস ডলার সমান ফিলিপাইনের ৫১.৫৬ পেসো। অপরদিকে, বাংলাদেশের ১ টাকা সমান ফিলিপাইনের ০.৬১ পেসো। বাংলাদেশের টাকার চেয়ে ফিলিপাইনের পেসোর মান বেশি। মানি এক্সচেঞ্জের কাজ শেষ করে এবার শপিংমলের বিভিন্ন দোকানে ঘোরাঘুরি শুরু। আমার সাথে ছিলেন কক্সবাজারের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নাছির ভাই এবং শিক্ষিকা শাহনাজ আপা। আরও ছিলেন আমার রুমমেট চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক রকিব ভাই। প্রথম দিন মার্কেটে গিয়ে অল্প কেনাকাটা করলাম। ভেবেছি সাতদিনের মধ্যে মার্কেটে কেনাকাটার জন্য আলাদা করে যেকোন দিন অতিরিক্ত সময় পাওয়া যাবে। তবে সেই ভাবাটাই ছিলো বড় ধরনের বোকামি। কারণ আমাদের প্রতিদিন মার্কেটে নেয়া হতো ঠিকই। কিন্তু সময়টা পেতাম কম। এতো বিশাল শপিংমলে ঢুকে ঘুরে ফিরে কেনাকাটা করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাছাড়া রাত ৯টায় ম্যানিলার সব শপিংমল বন্ধ হয়ে যায়। তার মানে ঘণ্টা দেড়েক সময়ের মধ্যে পুরো গ্রুপের একসাথে শপিং করাটা কিছুটা কঠিনও ছিল। কারণ ২৫ জনের গ্রুপ হওয়ার কারণে আমাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শপিং শেষ করে মার্কেটের সামনে চলে আসতে হতো। প্রথমদিন সবাই অল্প শপিং করে রাত ৯টার দিকে হোটেলে ফিরে আসলাম। হোটেলের রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেলে আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে রাখতে হয় সেটা জানা ছিল না। তাই যারা অর্ডার করে রেখেছিলেন তারা খাবার খেতে চলে গেলেন। আমি আর রকিব ভাই রুমে এসে বাংলাদেশ থেকে নেয়া শুকনো খাবার আর ফলমূল খেয়ে রাত কাটিয়ে দিলাম। ফিলিপাইনে যতদিন ছিলাম আমরা রাতের খাবার বাদ দিয়ে আমাদের বাংলাদেশ থেকে নেয়া খাবারগুলো খেয়েছি। দিনের বেলা ফিলিপাইনের খাবার আর রাতের বেলা বাংলাদেশের খাবার ভালোই লাগতো খেতে।(চলবে)

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট