চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পর্ব-৫: ব্যাংককে যাত্রা বিরতি

মো. ফারুক ইসলাম

১৩ জুন, ২০২০ | ২:০২ অপরাহ্ণ

ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছিলাম থাইল্যান্ডের দিকে। হঠাৎ বিমানের ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। একটু ভয়ও পেয়েছিলাম। বিমানে উঠার আগে থেকেই কেমন জানি মনে ভয় আর সংশয় কাজ করছিল। বার বার নেপালের এয়ারপোর্টে ইউএস বাংলার বিমান দুর্ঘটনার কথা মনে পড়ছিল। হয়তো প্রথম বিমান ভ্রমণ বলে আমার এমনটা মনে হচ্ছিল। ঝাঁকুনি খেয়ে ঘুম ভাঙ্গার পর সিট থেকে জানালার দিকে তাকালাম। দেখলাম ভোর হয়েছে। কিন্তু থাইল্যান্ডের আকাশে প্রচুর কালো মেঘ। বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। তাই পাইলট বিমানকে একবার উপরে উঠাচ্ছিলেন, মেঘের গর্জনে পুনরায় নিচে নামাচ্ছিলেন। আমরা থাইল্যান্ডে পৌঁছানোর পরও বিমানের পাইলট বিমান লেন্ড করতে পারছিল না বৃষ্টির কারণে। তাই তিনি আকাশে চক্কর দিচ্ছিলেন। থাইল্যান্ডের আকাশে চক্কর দিতে দিতে এক সময় বিমানের পাইলট ব্যাংককের সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রানওয়েতে অবতরণ করতে সমর্থ হন। সবাই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। আমরা যখন সুবর্ণভূমি বিমান বন্দরে অবতরণ করছিলাম তখন থাইল্যান্ডের সময় সকাল ৬টা। বিমান থেকে নেমে অবাক বিস্ময়ে দেখছিলাম সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট। এতো সুন্দর আর অনেক বড়! থাই এয়ারওয়েজের সেবা সম্পর্কে বলতে গেলে এক কথায় অসাধারণ!

থাই বিমানের বিশেষ গাড়িতে করে আমাদের এয়ারপোর্টের মূল টার্মিনালে নিয়ে যাওয়া হলো। তখন বৃষ্টির তাণ্ডব থেমে গিয়েছিল। সবাই ক্লান্ত হলেও তখন ক্লান্তিবোধ চলে গিয়েছিল ব্যাংককের অপরূপ দৃশ্য দেখে। আকাশ থেকে যখন ব্যাংকক শহর দেখছিলাম তখন মনে হচ্ছিল সাজানো গোছানো একটা শহর। ভোরের আলোর সাথে বৈদ্যুতিক বাতির আলো অন্যরকম এক পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল। টিভিতে, সিনেমায় এবং ইউটিউবে থাইল্যান্ডের সৌন্দর্য সম্পর্কে জেনেছি এবং দেখেছি। আজ বাস্তবে তা দেখে বিমোহিত না হয়ে থাকতে পারিনি। এয়ারপোর্টের মূল টার্মিনালের গেট থেকে ভেতরে প্রবেশ করে এবার বিমুগ্ধ হলাম। এ যেন দেশের ভেতর আরেকটি দেশ! সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টের ভেতরের দৃশ্য যে এতো সুন্দর তা চোখে না দেখলে ভাষায় প্রকাশ করে পুরোপুরি বুঝানো যাবে না। আমরা সবাই যেন এক স্বপ্নের জগতে প্রবেশ করেছি। ভেতরে ঢুকে ইমিগ্রেশন শেষ করে হেঁটে হেঁটে সুবর্ণভূমি বিমান বন্দরের অপরূপ দৃশ্য দেখছিলাম। আগেই বলেছি ব্যাংককে আমাদের ২ ঘণ্টার যাত্রা বিরতি। তাই এই দুই ঘণ্টা সময় আমাদের এয়ারপোর্টেই অবস্থান করতে হয়েছিল। যে যার যার মতো করে ছবি তুলছিলেন। আমাদের টিম লিডার প্রিয় বাহারুল ইসলাম স্যার পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সবাইকে নির্দেশনা দিলেন। সে সাথে ফিলিপাইনের বিমানে উঠার জন্য কোন টার্মিনাল দিয়ে যাবো বিমানের টিকিট দেখে তিনি খোঁজ করছিলেন। অবশেষে খুঁজেও পেলেন। সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টটা এতো বিশাল যে সহজে কোন লোকেশন খুঁজে পেতে একটু বেগ পেতে হয়। সবাই নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে ফিলিপাইনগামী বিমানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। অনেকেই চেয়ারে বসেই ঘুমাচ্ছিলেন। কারণ সবার চোখে তখন রাজ্যের ঘুম। তাই বিরতির ফাঁকে একটু ঘুমিয়ে নিলে মন্দ হয় না। আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতেই পারিনি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট