চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাণিজ্যে খেলার মাঠের বারোটা

তাসনীম হাসান

২৪ অক্টোবর, ২০২০ | ১:০৯ অপরাহ্ণ

কোথাও বড় বড় গর্ত। সেখানে জমে থাকা পানিতে মশা-মাছির উৎপাত। আবার কোথাও লম্বা ঘাসের ঝোঁপ। আর পুরো মাঠ এবড়োখেবড়ো তো বটেই। এই চিত্র চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরের সবচেয়ে বড় মাঠ বলে পরিচিত-বিডিআর মাঠের।

একদিকে করোনার কারণে দীর্ঘদিন খেলা বন্ধ থাকা, অন্যদিকে পরিচর্যা না করায় মাঠের এই দশা হয়েছে। এখন করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় শিক্ষার্থীরা মাঠে ফিরতে মরিয়া হলেও তাই ফেরার সুযোগ নেই। তবে মাঠে খেলা বন্ধ থাকলেও সেই মাঠকে ঘিরে থেমে নেই বাণিজ্য। মাঠের এক পাশের পুরো সড়কজুড়ে বসানো হয়েছে অন্তত ২০টি ভাসমান দোকান। আরেকপাশ নালা থেকে তোলা মাটি-আর বালুতে একাকার।

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকেরা বলেন, হালিশহরের নিউ আই ব্লকে অবস্থিত ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০০ ফুট প্রস্থের এই মাঠটিই পুরো এলাকার প্রাণ। কারণ, এই মাঠকে ঘিরে রয়েছে ১৭টি ছোট-বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগে বিকেল গড়াতেই আশপাশের এলাকা থেকে এসে এই মাঠে ভিড় করতেন শিক্ষার্থীরা। তাদের পদচারণায় সন্ধ্যা পর্যন্ত মুখর থাকত পুরো মাঠ। তবে করোনার কারণে প্রায় ৭ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ও মাঠ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় সেই দৃশ্যে ছেদ পড়েছে। শুধু এই মাঠ নয়, হালিশহরের গাউসিয়া সংলগ্ন মাঠ, গণপূর্তের মালিকানাধীন মাঠ ও আবাহনী মাঠেও খেলার পরিবেশ নেই আর। এর মধ্যে গাউসিয়া সংলগ্ন মাঠের অর্ধেক দখল করে বসানো হয়েছে মাছ বাজার। গণপূর্ত তাদের মাঠে মার্কেটের জন্য ভবন তুলছে। আবাহনী মাঠও আর সাধারণের জন্য উন্মুক্ত নেই।

আই ব্লক ও বি ব্লক এলাকার অন্তত ১০ জন অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয় পূর্বকোণের। তাঁদের মধ্যে হামিদুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ও তাহমিনা বেগম নামের তিনজন অভিভাবক পূর্বকোণকে বলেন, দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকতে থাকতে ছেলেমেয়েদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের মাঠে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাঠগুলো দখল আর ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। তাঁরা মাঠগুলো ব্যবহার উপযোগী করার পাশাপাশি অবৈধ দোকানগুলো উঠিয়ে নেয়ারও দাবি জানান।

মাঠ ঘিরে বাণিজ্য :
বিডিআর মাঠের একপাশে সারিবদ্ধভাবে ভ্যানের ওপর চারপাশে টিনের ঘের দিয়ে বসেছে অন্তত ২০টি দোকান। সেখানকার বেশ কয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক একটি দোকান বসাতে তাঁদের ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে। আর প্রতিদিন ১৩০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। তবে মিছিল-সভা থাকলে সেই চাঁদার পরিমাণ গিয়ে ঠেকে ২৩০ টাকায়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, নগর ছাত্রলীগের এক যুগ্ম সম্পাদক ও তাঁর অনুসারীরা এই চাঁদা তোলেন। তবে সেই চাঁদার ভাগ আরও কয়েক জায়গায় যায়। এই দোকানগুলোতে দিনভর বখাটে ছেলেদের আড্ডা লেগে থাকে। এ ছাড়া গাউসিয়া সংলগ্ন মাঠেও একইভাবে মাছের বাজার বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে সেখান থেকে কারা টাকা তোলেন তা কেউ বলতে পারেননি।
মাঠের সামনে দোকান বসানো নিয়ে হালিশহর মহল্লা কমিটির কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। কমিটিতে দায়িত্বে থাকা একজন পূর্বকোণকে বলেন, ‘বোঝেন তো কারা বসিয়েছে। এটি নিয়ে কথা বলার বিষয়ে মুখে তালা লাগানো আছে। এ বিষয়ে আমাদের করার কিছু নেই’।

দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোরশেদ আক্তার চৌধুরীও খেলার মাঠকে ঘিরে বাণিজ্য নিয়ে ক্ষুব্ধ। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘অনেকবার দোকানগুলো উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু আবার বসানো হয়। এসব দোকান-বাজার বসিয়ে কারা টাকা তোলেন তাদের নাম আমি বলব না। তবে এলাকার সবাই চেনেন তারা কারা’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট