চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

লো সালফার অয়েলে বিপাক

আল-আমিন সিকদার

৬ অক্টোবর, ২০২০ | ১:৫১ অপরাহ্ণ

প্রায় দুই বছরের চেষ্টা ও নানান সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশে প্রথমবারের মত আমদানি করা হয় ১৫ হাজার টন লো সালফার মেরিন ফুয়েল। পরিবেশ দূষণ রোধে আন্তর্জাতিক নৌ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) নির্দেশনা দেয়ার পর এই লো সালফার অয়েল আমদানি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। তবে আমদানির ২১ দিন পার হলেও নীতিমালার গ্যাঁড়াকল ও শুল্কায়ন জটিলতায় পড়ে এখনো শুরু হয়নি বিপণন। শুল্কায়নের এ জটিলতা না কাটলে ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি ও তেলবাণিজ্য, এ মন্তব্য করেছে বিপিসি। পাশাপাশি শুল্কমুক্ত বাঙ্কার অয়েল লো সালফার বিপণন শুরু করতে শুল্কায়ন নীতিমালা সংশোধনে এনবিআরকে চিঠিও দিয়েছে বিপিসি।
বিপিসির বিপণন সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী বাঙ্কারের জন্য যে সালফার অয়েল আমদানি করা হয় তা শুল্কমুক্তভাবেই বিক্রি হয়। তবে বাংলাদেশে এ অয়েল বিক্রিতে যে নীতিমালা আছে সেখানে ‘শুল্কযুক্ত’ উল্লেখ রয়েছে। এতে করে পরিবেশ দূষণ রোধে আন্তর্জাতিক নৌ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) নির্দেশনা দেয়ার পর বিপিসি যে লো সালফার অয়েল আমদানি করেছে তা এখনও বিপণন করা যায়নি। কারণ ২০১৪ সালের বাঙ্কারিং নীতিমালায় মেরিন ফুয়েলকে শুল্কযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা ছিল। যেখানে তেল বিপণন কোম্পানি যে অয়েল বিক্রি করবে তা শুল্কযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা রয়েছে- যা সংশোধনে এনবিআর’কে এরইমধ্যে চিঠিও দিয়েছে বিপিসি।
এদিকে শুল্কমুক্তভাবে এ তেল সরবরাহ করতে না পারলে বিপিসি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘দেড় লাখ টন মেরিন ফুয়েল আমদানির সিদ্ধান্তের প্রথম পর্যায়ে ১৫ হাজার টন লো সালফার মেরিন ফুয়েল আমদানি করা হয়। আমদানির আগেই চট্টগ্রাম কাস্টমসকে চিঠি দিয়ে এ অয়েল শুল্কমুক্তভাবে বিপণন করার বিষয়টি জানানো হয়েছিল। বিপিসির বাণিজ্যিক বিভাগ থেকেই চিঠির মাধ্যমে কাস্টমসকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু তখন সে বিষয়ে কোন আপত্তি না জানালেও আমদানির পর বিক্রিতে শুল্ক আরোপ হওয়ার বিষয়টি জানায় কাস্টমস। কারণ, নীতিমালায় বিষয়টি শুল্কযুক্ত হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। তবে বিশ্বের সব দেশে বাঙ্কার অয়েল শুল্কমুক্ত হলেও এখানে শুল্কযুক্ত হওয়ার বিষয়টি এখন সংশোধনের চেষ্টা চলছে। যদি রাজস্ব বোর্ড বিষয়টি আমলে না নিয়ে বাঙ্কার অয়েল বিপণনে শুল্কযুক্ত রাখেন তাহলে এর প্রভাব পড়বে দেশের বাণিজ্যে। ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রথমত লো সালফার অয়েল বিক্রির মাধ্যমে যে অর্থ লাভের সম্ভাবনা থাকতো তা থেকে আমরা পিছিয়ে পড়বো। এই লো সালফার অয়েল ব্যবহার করে সমুদ্রগামী জাহাজগুলো। তারা মূলত যে দেশে বাঙ্কার অয়েলের মূল্য কম পায় সেখান থেকেই সংগ্রহ করে। যদি শুল্কমুক্তভাবে এই লো সালফার অয়েল আমরা বিপণন করতে পারি তাহলে এতে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিকভাবে আমরা লাভবান হবো। কারণ, আমাদের কাছ থেকে জাহাজগুলো প্রতি লিটার বাঙ্কার অয়েল ক্রয় করতে পারবে ৩০ টাকার কম মূল্যে। চট্টগ্রাম বন্দরে আগত জাহাজগুলোর জন্য আমরা প্রতিটন তেলের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেছি ৩৬৪ মার্কিন ডলার এবং মোংলা বন্দরের জন্য ৩৭৬ মার্কিন ডলার- যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও অনেক কম। এতে করে বাংলাদেশে থেকে বাঙ্কার অয়েল ক্রয়ে যেমন আগ্রহ বাড়বে বৈদেশিক জাহাজগুলোর, তেমনি বাড়বে আমদানিও। কারণ, জ্বালানি তেলের জন্য অনেক জাহাজই ধারণ ক্ষমতার কম পণ্য বহন করে। যাতে আসা-যাওয়ার ফুয়েল ঠিকমত নিতে পারে। তবে যদি রাজস্ব বোর্ড বিষয়টি আমলে না নিয়ে বাঙ্কার অয়েল বিপণনে শুল্কযুক্ত রাখেন তাহলে এই লো সালফার অয়েল কেউ ক্রয় করবে না। কারণ, তখন পাশের দেশ ভারত ও পাকিস্তান থেকে কমমূল্যে মেরিন ফুয়েল ক্রয় করতে পারবে জাহাজগুলো। এতে করে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বিপিসিকে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট