চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

যার নামে স্টেডিয়াম, তাঁর ভাস্কর্যটিই অবহেলিত!

হুমায়ুন কবির কিরণ

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:১০ অপরাহ্ণ

চট্টলার ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাস দারুণ সমৃদ্ধ। যুগে যুগে এই চট্টগ্রাম এমন ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক উপহার দিয়েছে যাদের পদচারণা এখানকার ক্রীড়াঙ্গনকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এই সমৃদ্ধির পথে অন্যতম ভেন্যু হিসাবে কাজ করেছে এবং করে যাচ্ছে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম। ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয় এবং ১৯৪৯ সালে ফুটবল লিগের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক নিয়াজী’র নামে স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়। ১৯৯৮ সালে সংস্কারের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নিয়াজীর নাম পরিবর্তন করে কিংবদন্তী জননেতা মরহুম এম এ আজিজ-এর নামে স্টেডিয়ামটির পুনঃনামকরণ করে।
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের সার্বিক পরিবেশ পুরোটাই পাল্টে দিয়েছেন। আধুনিকতার ছোঁয়া সর্বত্রই। তবে তাঁর আমলে স্থাপিত মরহুম জননেতা এম এ আজিজ এর ভাস্কর্য উপস্থাপন যতটা নান্দনিক হওয়া উচিত ছিল ততটা হয়নি বলেই মনে করছেন বোদ্ধামহল। প্রথমত. অনেকেই জানেন না স্টেডিয়াম যাঁর নামে তাঁর একটি ভাস্কর্য আছে। দ্বিতীয়ত. যারা এই ভাস্কর্যটি স্টেডিয়ামের মুল প্রবেশ পথের বাঁ দিকে হঠাৎ দেখতে পান, তারা বুঝতেই পারেন না ভাস্কর্যটি মরহুম জননেতা এম আজিজ-এর। এটির উচ্চতা দুই ফুট যা মাটি থেকে সর্ব্বোচ্চ তিন ফুট উচ্চতায় ছোট্ট একটি প্রতিকৃতি। তৃতীয়ত. ভাস্কর্যটি এমনভাবে বসানো হয়েছে যাতে করে প্রতিনিয়ত স্টেডিয়ামের খাবারপাড়ার ভিড়ে তরুণ-তরুণীদের আড্ডার কারণে অবমাননা হচ্ছে। অনেকেই নান্দনিক পরিবেশে একটু গা এলিয়ে ভাস্কর্যটির পাশে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে পা দুটো ভাস্কর্যমুখী করে আড্ডারত থাকেন (ইদানিং অবশ্য কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে আড্ডার প্রকোপ অনেকটাই কমেছে)। চতুর্থত. ভাস্কর্যের নিচে এম এ আজিজ-এর ছোট্ট একটি পোর্টফলিও থাকলেও সেটি প্রায়ই ঘাসের চাদরে আচ্ছাদিত থাকে, কাছে না গেলে পরিষ্কারভাবে দেখার বা বোঝার উপায় নেই। আরও দুঃখজনক হলো পোর্টফলিওতে তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কোন তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ নেই, তিনি কি রাজনৈতিক নেতা ছিলেন নাকি খেলোয়াড় ছিলেন। তা নিয়ে সাধারণ মহলে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। পঞ্চমত. ভাস্কর্যটির অবস্থান এমন জায়গায়, যারা জানেন না তারা মনে করতে পারেন, এটি বুঝি পাশের রেস্টুরেন্টের প্রতিষ্ঠাতা বা রেস্টুরেন্ট সংশ্লিষ্ট কারও প্রতিকৃতি।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় মরহুম এম এ আজিজ-এর সন্তান মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহারের সাথে। প্রথমেই তিনি সিজেকেএস কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান দেশের এই কৃতি সন্তানকে সম্মান জানানোর প্রয়াসের জন্য। তবে এই প্রয়াস আরও যথোপযুক্ত হতে পারতো বলে তিনি মনে করেন। সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার বলেন, তাঁর মতো দেশবরেণ্য নেতার পোর্টফলিওতে কিছুই নেই, সঠিক পরিকল্পনা ও সঠিক জায়গায় অবশ্যই আরও বিশদভাবে তা উপস্থাপিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল। তিনি সিজেকেএস’র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ জানান।
বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সিটি মেয়র ও সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, জননেতা এম এ আজিজ-এর নামে স্টেডিয়াম, তাই দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরুতে আমি চেয়েছিলাম ওঁনার একটি ভাস্কর্য তৈরি করতে, সম্মান জানাতে। সে লক্ষে স্টেডিয়ামের প্রবেশমুখে বঙ্গবন্ধুর সহচর এম এ আজিজ-এর ভাস্কর্য ও পোর্টফলিও তৈরি করা হয়। তিনি আরও বলেন, স্টেডিয়ামের ভিতরে সুবিধামত কোন জায়গায় ওঁনার বিস্তারিত পোর্টফলিও করা হবে। একই সাথে বর্তমানে ভাস্কর্যটি যে স্থানে যে অবস্থায় আছে তার আরও আধুনিকায়ন করা হবে।
কথা হয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও সিজেকেএস সভাপতি মো. ইলিয়াস হোসেন-এর সাথে। তিনি অল্প কথায় বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের মূল ভবনের সুবিধামত কোন স্থানে একটি পরিপূর্ণ ম্যুরাল করে এম এ আজিজ-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা যায়- এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জেলা প্রশাসক বলেন, সবার সাথে আলোচনা করে এ ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে পদক্ষেপ নেবো।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট