চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

অবহেলা-বঞ্চনায় হামাগুড়ি দিয়ে চলছে চট্টগ্রাম বিকেএসপি

অবহেলা-বঞ্চনায় হামাগুড়ি দিয়ে চলছে চট্টগ্রাম বিকেএসপি

মিটু বিভাস

৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ২:২২ অপরাহ্ণ

নেই পর্যাপ্ত খেলার মাঠ কিংবা সুইমিংপুল। রয়েছে অবকাঠামো স্বল্পতাও। জিমনেশিয়াম থাকলেও তাতে নেই পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা। বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেষে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশে সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী বিভাগীয় স্টেডিয়ামের পাশে গড়ে উঠা বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কেন্দ্রটি চলছে যেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সুযোগ সুবিধার বিচারে রাজধানী ঢাকার পরেই চট্টগ্রামের অবস্থান হলেও বিকেএসপির এ আঞ্চলিক কেন্দ্রের শুরুটাও যেন অবহেলা আর বঞ্চনার। দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরে বিকেএসপির আঞ্চলিক শাখাগুলো সর্বনিম্ন ১৩ একরের উপর গড়ে তোলা হলেও এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মাত্র চার একর জায়গায়। আর এই জায়গা স্বল্পতার কারণে প্রতিষ্ঠার একযুগের বেশি সময় পার হলেও নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি চট্টগ্রাম বিকেএসপি। শৈশবেই যেন হামাগুড়ি দিচ্ছে ভবিষ্যত এথলেটদের এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি।

তৃণমূল থেকে ক্ষুদে প্রতিভাবানদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন পরিপূর্ণ এথলেট হিসেবে গড়ে তোলার কাজটি করে থাকে দেশের একমাত্র সরকারি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি। যে প্রতিষ্ঠান থেকে উঠে এসেছেন সাকিব, মুশফিকের মতো বিশ্ব ক্রিকেট মাতানো এথলেটরা। ঢাকায় সাভারের প্রধান কেন্দ্র ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা বরিশাল সিলেট ও দিনাজপুরে রয়েছে বিকেএসপির আঞ্চলিক কেন্দ্র। এছাড়া আগামী বছর থেকে কক্সবাজারের রামুতে চালু হচ্ছে আরো একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র। এরমধ্যে বন্দর নগরীর এ কেন্দ্রটির অবস্থা সবচেয়ে বেশি নাজুক। ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো নিজেদের কার্যক্রম শুরু করেছিল চট্টগ্রাম বিকেএসপি। এরমধ্যে নানা কারণে দীর্ঘদিন বন্ধও ছিল প্রতিষ্ঠানটি। দ্বিতীয় দফায় ২০১৭ সালে শুধুমাত্র ক্রিকেট ডিসিপ্লিন দিয়ে আবার নিজেদের কার্যক্রম শুরু করে চট্টগ্রাম বিকেএসপি। বর্তমানে মোট চারটি ডিসিপ্লিনে শিক্ষার্থী আছেন এ কেন্দ্রে। এরমধ্যে ক্রিকেটে ২৫ জন, বক্সিংয়ে ৮ জন এবং বাস্কেটবল ও কাবাডিতে ১৬ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছেন। মোট ৬৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য প্রশিক্ষক আছেন মাত্র ৪ জন। চট্টগ্রামের এ কেন্দ্রটি ঘুরে দেখা যায়। নেই পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, নির্মিত হয়নি সুইমিংপুল। শুধু একটি ফুটবল খেলার মাঠ ও একটি বাস্কেট বলের কোর্ট রয়েছে। ক্রিকেট ডিসিপ্নিনে শিক্ষার্থী থাকলেও নেই কোন মাঠ। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই জিমনেশিয়ামে। আবার ইনডোরের অভাব মেটানো হচ্ছে এই জিমনেশিয়ামের মধ্য দিয়ে। অথচ নগরবাসীর প্রত্যাশা ছিল সময়পোযোগী একটি আধুনিক পূর্ণাঙ্গ স্পোর্টস কমপ্লেক্সে পরিণত হবে চট্টগ্রামের এ কেন্দ্রটি।

তবে এতসব হতাশার মাঝে আশার বাণী শোনালেন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবু তারেক। তিনি জানান, ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জন্য আরো প্রায় ১২ একর জায়গা অধিগ্রহণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, বিকেএসপির বর্তমান মহাপরিচালকও চট্টগ্রামকে পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রে উন্নীতকরণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। কক্সবাজারের রামুতে আঞ্চলিক কেন্দ্রটি নির্মাণ কাজের কারণে এতদিন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উন্নয়ন কাজ এগোয়নি। চট্টগ্রামের বিকল্প হিসেবে রামুতে এ কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছিল। তবে কেন্দ্রটি কক্সবাজার জেলায় হওয়ায় এবং চট্টগ্রামবাসীর আগ্রহের কারণে সে সিদ্ধান্ত থেকে বর্তমানে সরে এসেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে চট্টগ্রাম থেকে বিকেএসপি সরে যাওয়ার যে আশংকা ছিল সেটা কেটে গেছে’।

ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আরো জানান, জায়গা বরাদ্দ পেলে আমরা চট্টগ্রাম কেন্দ্রকে পূর্ণাঙ্গ রূপে গড়ে তুলতে পারব। তবে এক্ষেত্রে রয়েছে মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রিতা। যেখানে পূর্বে অধিগ্রহণকৃত ভূমির মালিকানা এখনও সম্পূর্ণরূপে হস্তান্তর করা হয়নি, সেখানে নতুন জায়গা অধিগ্রহণের পর চট্টগ্রাম বিকেএসপিকে বুঝিয়ে দিতে কতদিন সময় লাগতে পারে? এ প্রশ্নে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। নগরীর ক্রীড়ামোদীদের প্রত্যাশা সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে শীঘ্রই একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। জাতীয় পর্যায়ে আরো বেশি ভূমিকা রাখবে চট্টগ্রাম। উঠে আসবে আগামীর তারকারা।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট