চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দাপুটে ফুটবলার এখন দিনমজুর

দাপুটে ফুটবলার এখন দিনমজুর

ক্রীড়া ডেস্ক

১৮ জুলাই, ২০২০ | ১০:১৬ অপরাহ্ণ

এক সময়ের মাঠ কাঁপানো ফুটবলার আরিফ। অন্য সবার মতো আরামে জীবনযাপনের কথা থাকলেও করোনায় তছনছ হয়ে গেছে তার জীবন। বছরে সর্বোচ্চ ৬লাখ টাকা পাওয়া এই ফুটবলার আরিফ এখন সংসার চালাচ্ছেন ৪০০ টাকা দৈনিক দিনমজুরের কাজ করে। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বসবাসকারী জীবিকার তাগিদে বাংলাদেশ পেশাদার লিগে মাঠ কাঁপানো স্ট্রাইকার আরিফ এখন রাজমিস্ত্রির সহযোগী জোগালি।

জানা গেছে, আড়াই লাখ টাকা বার্ষিক চুক্তিতে ২০১৯ সালে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের দল অগ্রণী ব্যাংক, ২০১৭-১৮ মৌসুম শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবে ৬ লাখ, ২০১৬ সাল ৩ লাখ টাকায় আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ও ২০১৫ বাংলাদেশ লিগ বিজেএমসিতে আড়াই লাখ টাকা চুক্তিতে খেলেছেন আরিফ।

কোনো টিমে চলতি বছরে ডাক না পেয়ে তার জীবনে নেমে আসে বেকারত্ব। গত দেড় মাস ধরে সংসার টানতে ও পেটের ক্ষুধা মেটাতে শেষ পর্যন্ত লোকচক্ষুর আড়ালে জোগালির কাজ করছেন আরিফ হাওলাদার।

নিজের জীবনের দুর্দশার কথা জানিয়ে লজ্জায় কাউকে বলতে পারেননি বলে আরিফ বলেন, করোনাকালে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। শেখ জামাল টিমে ৬ লাখ টাকা বার্ষিক চুক্তি ছিল। উপার্জিত সব টাকা বাবাকে ব্যবসা করতে দিয়েছিলাম। তিনি পরিবহন ব্যবসা করে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে প্রায় সব টাকা খুইয়ে ফেলেন। এর মধ্যে এই কারোনাকালে আমাকে কোনো টিম চুক্তিতে নেয়নি।

দুরবস্থার কথা জানিয়ে আরিফ বলেন, টিম না পাওয়ার কারণে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। আমার বাবা এর মধ্যে দু’বার স্ট্রোক করেছেন। একদিকে বাসা ভাড়ার জন্য বাড়িওয়ালা খারাপ ব্যবহার, আরেক দিকে ঘরের অভাব। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেই কারো কাছে হাত না পেতে জোগালির কাজে নেমে পড়ি।

তরুণ এই ফুটবলার আরিফের মা মফিজা বেগম বলেন, আমার ছেলেটা সংসারে অভাব মেটাতে জোগালির কাজ করছে আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। কিন্তু ওর পায়ে কাটা ছেঁড়া ও শরীর ব্যথা কথা শুনে সন্দেহ হয়। পরে এলাকার অনেক মানুষ জানায়, আমার ছেলে আমাদের সংসারের অভাব মেটাতে জোগালির কাজ করছে। এই বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি।

আরিফের বাবা শাজাহান হাওলাদার জানান, জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৩, ১৪ ১৬ কিশোর থেকেই ফুটবলে সুযোগ পেয়েছিল। ওর সব পুঁজি ছিল আমি ব্যবসা করতে গিয়ে খুইয়ে ফেলেছি। আমি গর্বিত আমার সন্তান নিয়ে যে, সে কারো কাছে হাত পাতেনি। কর্ম করে সংসারের অভাব মেটানোর চেষ্টা করছে।

মাত্র ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা আরিফ বলেন, আমি বেঁচে থাকতে আমার বাবা-মা না খেয়ে থাকবে তা হতে পারে না। আমি খেটে খেতে চাই। যোগ্যতা প্রমাণ করে আমি ফুটবলে ফিরতে চাই।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট