চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আমি এমএ আজিজ স্টেডিয়াম বলছি …

দেবাশীষ বড়ুয়া দেবু

১৫ জুলাই, ২০২০ | ২:২৪ অপরাহ্ণ

আমি এমএ আজিজ স্টেডিয়াম বলছি। আমার কিছুই ভালো লাগছে না। আপনাদের অবস্থাও হয়তো তাই। মহাবিক্রমশালী এক ভাইরাসের কারণে পুরো পৃথিবী আজ লন্ডভন্ড। নীরব নিথর সবকিছুর মতো খেলাধুলাও আজ বাক্সবন্দী। কিন্তু আমার (স্টেডিয়ামের) অবস্থা আরো করুণ। জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত এতোটা অসহায় আর কখনো মনে হয়নি। আমার উপর এখন আর কেউ দৌঁড়ায় না, পাই না বুটের ছোয়া, বলের স্পর্শ, হকিস্টিকের পরশ, শুনি না রেফারির বাঁশির আওয়াজ, দেখি না আমপায়ারের টস ও চার-ছক্কায় দেয়া বিভিন্ন ধাচে দেয়া সংকেত, আরো দেখি না গোল করা বা উইকেট পাওয়ার পর খেলোয়াড়দের উল্লাস। করোনাকালে আমি অনেকদিন ধরেই পরিচর্যাহীন। অনেকটা পরিত্যক্ত পড়ে আছি। অযত্নে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছি। আমার বুকের উপর ঘাসগুলোও অনেক বড় হয়ে গেছে। ওহ, ক’দিন পরইতো কোরবানির ঈদ। গরু-ছাগলরা যদি এই মাঠে আসতে পারতো! তাহলে খেয়ে মোটাতাজা হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু এখানে তাদের আসার কোন সুযোগ নাই। তবে আমি বলি কি, যেহেতু ঘাস কাটা হচ্ছে না, মাঠেও খেলাধুলা নাই, সুতরাং গরু-ছাগল ঢোকার অনুমতি দেয়া যেতে পারে। তবে এখানেও চলবে রাজনীতি। যার তার গরুতো এখানে আসতে পারবে না। হতে হবে, সংশ্লিষ্ট কমিটির বড়সড় কেউ। হয়তো বলা হতে পারে, আমি কি দেখতে বা শুনতে পাই, কথা বলতে পারি। তাহলে, আমি কেন এসব বলছি। শুনুন, আমি স্টেডিয়াম হলেও আমার উপলব্ধি ও অনুমান শক্তি রয়েছে। আমি আমার ‘এমএ আজিজ স্টেডিয়াম’ নামেই সারা দেশের কাছে পরিচিত।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা সাফল্যের রেকর্ড নিয়ে আমি চিরকাল অমর হয়ে থাকবো। ২০০৫ সালের ৬ জানুয়ারী জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয় কিন্তু আমার বুকেই। এছাড়া আরো একটি কারণে আমি গর্ব করতে পারি। ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ দেশের মাটিতে এই স্টেডিয়ামেই বাংলাদেশ দল প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবেও আমি মর্যাদা পেয়েছি। এ মাঠে ১৯৮৬ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ৮টি টেস্ট ও ১০টি ওডিআই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া অফিসিয়াল ম্যাচ হিসেবে বিভিন্ন দেশের সাথে একাধিক ৪ দিনের ম্যাচও এখানে হয়েছে।
আমি এখনো জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সেই টেস্ট জয়ে দর্শকদের আনন্দধ্বনি স্মরণ করতে পারি। এছাড়া প্রতিনিয়ত স্থানীয় বিভিন্ন খেলায় জয়ী দলের উল্লাসে আমি যেমন উল্লসিত হই, তেমনি পরাজিত দলের কষ্টেরও ভাগ বসাতে যাই।

সে যাই হোক, আমি কামনা করছি সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশ তথা চট্টগ্রামে অচিরেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। আবারো জমজমাট হয়ে উঠবে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন। খেলোয়াড়, দর্শক, সংগঠক ও হকারদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠুক এই স্টেডিয়াম।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট