চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কঠিন সময় পার করছে ক্রিকেট কোচরা

দেবাশীষ বড়ুয়া দেবু

৩০ জুন, ২০২০ | ৭:৫৫ অপরাহ্ণ

করোনা ভাইরাসের কঠিন থাবায় অসহায় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন। সারাদেশে সবধরণের খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে। কয়েকটি দেশে দর্শকবিহীন মাঠে ফুটবল শুরু হলেও এখনো ক্রিকেট মাঠে গড়ায়নি। তবে প্রস্তুতি চলছে। আগামী ৮ জুলাই শুরু হতে যাচ্ছে সফরকারি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের মধ্যেকার প্রথম টেস্ট ম্যাচ। বাংলাদেশে ক্রিকেট শুরুর কোন পরিকল্পনা এখনো করা হয়নি। তবে আগামী আগস্ট মাস থেকে জাতীয় ফুটবল দলের অনুশীলন শুরু হবে।
করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে সারাদেশের শতাধিক ক্রিকেট একাডেমির কার্যক্রম। চট্টগ্রামও তার ব্যতিক্রম নয়।
চট্টগ্রামে প্রায় ২৫টির মতো একাডেমিতে রয়েছে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। তারা প্রত্যেকেই মাসিক চাঁদা দিয়ে ক্রিকেট শিখতে আসে। প্রায় প্রত্যেকটি একাডেমিতে ২/৩ জন করে কোচ রয়েছে। আজ প্রায় ৩/৪ মাস হতে চলেছে, প্রত্যেকটি একাডেমির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে করে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামের ২০ থেকে ২৫ জনের মতো কোচ। তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ কী নেই। তবে যারা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তালিকাভুক্ত কোচ রয়েছেন, তারা অবশ্য মোটামুটি ভালো আছেন। কেননা তাদের বেতন প্রদান করা হচ্ছে। তবে এ সংখ্যা একেবারে নগণ্য। ২ থেকে ৩ জন।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে পুরানো ক্রিকেট একাডেমি জেসিটিএ ( জুনিয়র ক্রিকেট ট্রেনিং একাডেমি)-র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রশিক্ষক তপন দত্ত বলেছেন, বড় কঠিন অবস্থার মধ্যে দিনানিপাত করছি। ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে একাডেমি বন্ধ রয়েছে। সেখান থেকে প্রতি মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো আয় হতো। এখন সেটা বন্ধ রয়েছে। তবে জাতীয় ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও ক্রিকেট বোর্ড থেকে ২ বার সহযোগিতা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। আমরা চট্টগ্রাম জেলা দলের কোচ হিসেবে আছি, কিন্তু জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে এখনো কোন সহযোগিতা পাইনি। এছাড়া ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কোন সংগঠন আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাডেমির একজন ভুক্তভোগী কোচ বলেছেন, ভীষণ কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। একাডেমি থেকে মাসিক বেতন হিসেবে ১৫ হাজার টাকার মতো পেতাম। তারপরে প্রিমিয়ার, ১ম, ২য় ও ৩য় বিভাগ লিগসহ ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ হিসেবেও ভাল অংকের টাকা আসতো। কিন্তু সবকিছুই এখন বন্ধ রয়েছে। অনেকটা ক্ষোভের মুখে আরেকজন কোচ বলেন, আমাদের এই দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর মতোও কেউ নেই। অথচ আমরা চট্টগ্রাম জেলা দলেরও তালিকাভুক্ত কোচ।
এদিকে চট্টগ্রামের ক্রিকেট কোচদের জন্য একমাত্র জাতীয় ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ছাড়া, আর কেউই এগিয়ে আসেনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ম্যানেজার (অপারেশন) আকরাম খান ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন একাডেমির শিক্ষার্থীদের হাতে উপহার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। কিন্তু কোচরা অবহেলিতই রয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ক্রিকেট খেলোয়াড় সমিতি, উইক এন্ড ক্রিকেট ক্লাব, মাস্টার্স ক্রিকেট ক্লাবসহ আরো কয়েকটি ক্রিকেট সংগঠন থাকলেও তারা এতে কোন ভূমিকাই রাখেনি। এছাড়া কোচদের পাশাপাশি আম্পায়ার ও স্কোরারদেরও একই অবস্থা। খেলা নেই, তাই তারা হাত পা গুটিয়ে বসে আছেন। আম্পায়ার ও স্কোরার এসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন থাকলেও সাহায্যের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ তাদের নেই। সেদিক থেকে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারিজ এসোসিয়েশন। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত দু-দফায় এসোসিয়েশনের ক্ষতিগ্রস্ত রেফারিদের উপহার সামগ্রী ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রামের ফুটবলার ও কোচরাও বিভিন্নভাবে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন এবং প্যানেল মেয়র প্রফেসর নিছারউদ্দিন আহমেদ মঞ্জুর ব্যক্তিগত উদ্যোগে সহায়তা পেয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামের সাবেক কৃতি ফুটবলার তুষার বড়–য়া তার গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার ৬০ জনের মতো ফুটবলারদের উপহার সামগ্রী ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে ক্রিকেট কোচদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ কী নেই।

পূর্বকোণ/ আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট