চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বৃষ্টি¯œাত দিনে রেকর্ডের বান টাইগারদের

৭ মার্চ, ২০২০ | ৩:১৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের আকাশে রোদ মেঘের লুকোচুরি, কখনও ভ্যাপসা গরম আবার শীতের অনুভূতি। বিপরিত চিত্র সিলেটে, সেখানে আকাশজুড়ে কালো মেঘের ঘোরাঘুরি। মেঘ শুধু ঘুরে বেড়িয়েই ক্ষান্ত হয়নি, বৃষ্টি হয়েও ঝরেছে। এরই মাঝে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল মুখোমুখি হলো ৩ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে। মাশরাফি মুর্তজার অধিনায়কত্বের শেষ ম্যাচে বৃষ্টি¯œাত দিনে লিটন দাস ও তামিম ইকবালের চার-ছয়ের বর্ষণে রেকর্ডের বানে ভেসেছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দলগত সর্বোচ্চ রানে (৩২২) রেকর্ড স্পর্শের দিনে অনেকগুলো রেকর্ডের স্বাক্ষী হলো বাংলাদেশের ক্রিকেট।

উপলক্ষ্যটা ছিল অনেক বড়। দলের সবার প্রিয় বড় ভাই মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচ। আর কখনওই টস করতে নামবেন না মাশরাফি। নিঃসন্দেহে দলের সবার জন্যই আবেগঘন মুহূর্ত। আর সে উপলক্ষ্যটাকে রাঙিয়ে রাখতেই যেন রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়লেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। একই ভেন্যুতে আগের ম্যাচে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড গড়েছিলেন তামিম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই আগের ১৫৪ রানের কীর্তি ভেঙে ১৫৮ রান করে নতুন উচ্চতায় উঠে গিয়েছিলেন বাঁহাতি তারকা। কিন্তু তার রেকর্ড টিকল না তিনদিনও! ক্যারিয়ারের তৃতীয় ও চলতি সিরিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিকে লিটন দান করলেন আলাদা মহিমা। ১৭৬ রানের ইনিংস খেলার পথে ওয়ানডেতে এক হাজার রানও পূরণ করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। এই ইনিংস খেলার পথে লিটন মারেন ৮টি ছক্কা। তিনি ভেঙে দিয়েছেন তামিমের রেকর্ড। লিটনের ওপেনিং সঙ্গী ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হাঁকিয়েছিলেন ৭টি ছক্কা। সবমিলিয়ে গতকাল বাংলাদেশ মেরেছে ১৪ ছক্কা। এটিও রেকর্ড। ম্যালাহাইডে গেল বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের ১১ বার ছক্কা মেরে সীমানাছাড়া করেছিল টাইগাররা।

লিটনের পর তামিমও সেঞ্চুরি করেন। যা ছিল তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ত্রয়োদশ সেঞ্চুরি। এই সংস্করণে টানা দুই ম্যাচ সেঞ্চুরির কীর্তি এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো করলেন তিনি। সিরিজের আগের ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছিল অসাধারণ এক সেঞ্চুরি। গতকালও ব্যাটিংয়ে আলো ছড়িয়ে তিনি ১০৯ বলে ১২৮ রানে অপরাজিত থাকেন। এর আগে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজে ঢাকায় টানা দুই ম্যাচে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন তামিম। বাংলাদেশ ক্রিকেট এ নিয়ে চতুর্থবার এক ম্যাচে জোড়া শতক আসল। এর আগে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে জোড়া শতক পেয়েছিলেন তামিম ও মুশফিক। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব জোড়া শতক পান। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ইমরুল ও সৌম্য হাঁকান সেঞ্চুরি।

শুধু দেশের গ-িতেই আটকে থাকেননি এ দুই ওপেনার। বরং রেকর্ডটাকে নিয়ে গেছেন বিশ্বমঞ্চে। বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি নেমে যায় ৪৩ ওভারে। পরের ১০ ওভারে গড়েছেন যে কোন উইকেট জুটি দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের জুটি। লিটন-তামিম মিলে ওপেনিং জুটিতে ৪০.৫ ওভারে যোগ করেন ২৯২ রান। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ৫০ ওভারের সংস্করণে যে কোনো উইকেট এটি সবচেয়ে বেশি রানের জুটির রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দখলে। তারা ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে ২২৪ রান যোগ করেছিলেন তারা। কেবল বাংলাদেশের নয়, ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় ঢুকে গেছে তামিম-লিটনের স্মরণীয় জুটি। তাদের সম্মিলিত ২৯২ রান ওপেনিংয়ে ওয়ানডে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ। তাদের আগে আছে কেবল জন ক্যাম্পবেল-শাই হোপ (৩৬৫ রান) ও ইমাম উল হক-ফখর জামান (৩০৪) জুটি। শুধু ওপেনিং জুটির হিসেব যদি একপাশে রাখা যায়, তবু তামিম-লিটন বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা জুটিগুলোর মধ্যে নিজেদের নাম খুঁজে পাবেন। যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটিতে এটি যে এখন উঠে গেছে ছয় নম্বরে। শুধু তাই নয় ওপেনিং জুটিতেও বাংলাদেশ রেকর্ড গড়েছেন। আগের রেকর্ডটি ছিল ১৭০ রানের। ২১ বছর আগে ১৯৯৯ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭০ রান করেছিলেন মেহরাব হোসেন অপি ও শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ। ২০১৪ সালে তাদের কাছাকাছি গিয়েছিলেন এনামুল হক বিজয় ও তামিম ইকবাল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ১৫৮ রান করেছিলেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট