চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

৫০তম জয়ে বিদায় রাঙালেন অধিনায়ক মাশরাফি

স্পোর্টস ডেস্ক

৭ মার্চ, ২০২০ | ২:৫১ পূর্বাহ্ণ

যেকোনো বিদায়ই বেদনার, যন্ত্রণার। আর সে বিদায়টা যখন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ও সফলতম ওয়ানডে ‘অধিনায়ক মাশরাফির বিদায়’- তখন ভক্ত, সমর্থক, অনুরাগীর মন খারাপ হতেই পারে। স্বান্তনা এটাই, অধিনায়ক মাশরাফি বিদায় নিলেও ক্রিকেটার মাশরাফিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট হয়তো পাবে আরও কিছুটা সময়। নিজেই যে জানিয়েছেন, পেসার মাশরাফি খেলা চালিয়ে যাবেন। হাঁটুতে ৭ বার অস্ত্রোপচারের পরও যিনি দেশের ক্রিকেটকে রাঙিয়ে দেন তাকেতো স্যালুট জানাতেই হয়। ৬ মার্চ, ২০২০ সাল, শুক্রবার। গতকালের দিনটি নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় আলাদাভাবে লেখা হয়ে থাকবে।

যে কোনো সাফল্যের অধ্যায়ের শেষটা স্মরণীয় হয়ে থাকে। মাশরাফি বিন মুর্তজার অধিনায়কত্বের ক্যারিয়ার শুধু তো সাফল্যম-িতই নয়, এক আজন্ম যোদ্ধার বুকে চিতে লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবিও মিলেমিশে একাকার তাতে। কোন ক্ষেত্রে কে কতটুকু সফল, সেটা মাপার সবচেয়ে বড় মানদ- পরিসংখ্যান। সেই পরিসংখ্যান বলছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে

সফল অধিনায়ক মাশরাফি। সাফল্যের বিবেচনায় টেস্টেও। কারণ, ক্যারিয়ারে মাত্র ১টি টেস্টেই অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই টেস্টে জিতেছিল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পেয়েছিল প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ। এরপরই চোট শেষ করে দেয় তার টেস্ট অধিনায়কত্বের ক্যারিয়ার। তবে শেষ হয়েছে শতভাগ সাফল্য নিয়ে। টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশের অন্য অধিনায়কদের কারো সাফল্যের হার ৫০ শতাংশও নেই। সেই হিসেবে টেস্টেও সবচেয়ে সফল মাশরাফিই। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সব দিক থেকেই মাশরাফি সবার উপরে। ওয়ানডেতে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৮টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলকে নেতৃত্ব দিয়ে উপহার দিয়েছেন ৫০টি জয় উপহার দিয়েছেন। জয় সাফল্যের হার ৫৮ শতাংশের উপরে। সব দেশ মিলিয়ে এই রেকর্ডে সবার ওপরে রিকি পন্টিং। তার নেতৃত্বে ৭৬ দশমিক ১৪ শতাংশ ম্যাচই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। পন্টিংয়ের পরেই আছেন ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। ধোনির নেতৃত্বে ২০০ ম্যাচ খেলে ১১০টিতে জিতেছে ভারত, হেরেছে ৭৪টি।

দেশে অধিনায়কত্বে সাফল্যের হারে মাশরাফির সবচেয়ে কাছাকাছি যিনি, সেই সাকিব আল হাসান ৫০ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ২৩ ম্যাচে জিতিয়েছেন। তার সাফল্যের হার ৪৬.৯৩ শতাংশ। জয় সংখ্যার বিচারে মাশরাফির পর দ্বিতীয় সেরা সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। তিনি মোট ৬৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে জিতিয়েছেন ২৯ ম্যাচে। জয় সাফল্যের হার ৪২.০২। অন্যরা আরও পেছনে। টি-টোয়েন্টিতেও সবার উপরে মাশরাফি। ২০১৪ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়কত্ব করা মাশরাফি মোট ২৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাতে ১০টিতে জিতেছেন, হেরেছেন ১৭টিতে। জয় সাফল্যের হার ৩৭.০৩। তার পরে রয়েছেন মুশফিক। তিনি মোট ২৩ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছেন ৮টিতে। সাফল্যের হার ৩৬.৩৬ শতাংশ। সাকিব ২১ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন জিতিয়েছেন ৭টিতে, সাফল্যের হার ৩৩.৩৩ শতাংশ। শুধু জয় সংখ্যা, হারে নয়, মাশরাফিকে আলাদা জায়গা দিয়েছে অন্য একটি বিষয়ও। ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথম বারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখা এবং ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে উঠা, বিশ্ব টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বড় দুটি সাফল্যই রচিত হয়েছে মাশরাফির নেতৃত্বে। অধিনায়ক হিসেবে দলটিকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলেছিলেন, সতীর্থদের শিখিয়েছিলেন মাঠে কীভাবে লড়াই করতে হয়, দেশের জন্য কিভাবে খেলতে হয়! জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে মাঠে কার, কি, কতটুকু দায়িত্ব। সর্বোপরি হয়ে উঠে ছিলেন দলের অভিভাবক। গতকাল সেই অভিভাবকের অভিভাবকত্বের শেষ! দিনটিকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভুলবে কি করে!

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট