চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

৬০৪ দিন পর সেঞ্চুরি ৭ হাজারি ক্লাবে তামিম

স্পোর্টস ডেস্ক

৪ মার্চ, ২০২০ | ২:৪৩ পূর্বাহ্ণ

বড় স্কোর পাচ্ছিলেন না সত্য, তবে তামিম ইকবাল কি আসলেই ব্যর্থ ছিলেন! তামিম যখন ক্রিজে যান ভক্তদের প্রত্যাশা থাকে তাঁর স্বভাবেই মারকাটারি ব্যাটিংয়ে বড় একটি স্কোর। কিন্ত প্রতিদিন কি আর শতরান সম্ভব, না ক্রিকেট বলুন অথবা অন্য কোন ইভেন্ট-প্রতিদিন সাফল্য সম্ভব নয়। সবাই-ই এটা জানেন, তারপরও কেন তামিম বড় স্কোর পাচ্ছেন না-সমালোচকরা লেগে ছিল তাঁর পিছনে। সেই তামিম ঘুরে দাঁড়ালেন গতকাল। দীর্ঘদিনের রান-পিপাসা মেটানোর জন্য জিম্বাবুয়াকেই বেছে নিলেন বাংলাদেশ ওপেনার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও ধীরগতিতে ব্যাট করেছিলেন তিনি। কিন্তু গতকাল শুরু থেকেই ছিলেন তামিম মারমুখী। পুল, ফ্লিক, লেগ গ্লান্স, স্ট্রেইট ড্রাইভ, কভার ড্রাইভসহ দারুণ সব শটে ৬০৪ দিন পর ওয়ানডেতে পেয়েছেন সেঞ্চুরি। আউট হওয়ার আগে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও উপহার দিয়েছেন চট্টগ্রামের খান পরিবারের তামিম ইকবাল। আগের রেকর্ডটিও অবশ্য তারই ছিল। ২০০৯ সালের আগস্টে বুলাওয়েতে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ১৫৪ রান করেছিলেন। মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসানরা পরে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের এই রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। তামিম গতকাল নিজেই ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৩৬ বল খেলে করেছেন ১৫৮ রান। এই ১৫৮ রান করার আগে ৮৪ রান পেছনে থেকে ম্যাচে নেমেছিলেন, সেঞ্চুরির পথে ডোনাল্ড টিরিপানোকে চার মেরে তামিম পূর্ণ করেছেন ৭ হাজার। ওয়ানডেতে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে এই মাইলফলক ছুঁলেন তামিম। বাঁহাতি তারকার রেকর্ডে বাংলাদেশেরও রেকর্ড হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৩২২ রানের সংগ্রহ পেয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই ৩২১ রান তুলেছিল টাইগাররা।

তামিম গতকাল ইনিংসে চার হাঁকিয়েছেন ২০টি, ছক্কা ৩টি। ইনিংসের শুরু আর শেষের সময়টাতে অভিজ্ঞ ওপেনার ছিলেন ভয়ঙ্কর। ফিফটি পূর্ণ করেছেন ৪২ বলে। এই ৫০ রানের ৪০’ই নিয়েছেন বাউন্ডারি থেকে (১০টি চার)। সেঞ্চুরির পর ৩০ বল খেলে করেছেন ৫৭ রান। ক্যারিয়ারে এটি তাঁর ১২তম সেঞ্চুরি। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সেঞ্চুরিসংখ্যায় ব্যবধানটা ৩-এ নিয়ে গেলেন তিনি। সব ফরম্যাট মিলিয়েও সবচেয়ে বেশি ২২টি সেঞ্চুরি তামিমের, দুইয়ে থাকা মুশফিকের সেঞ্চুরিসংখ্যা ১৪টি। অথচ কি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়েই না যাচ্ছিলেন। বিশ্বকাপ থেকে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে স্ট্রাইক রেট ভালো হচ্ছিল না। পাওয়ার প্লেতে বেশি ডট খেলা নিয়ে সমালোচকরা জর্জরিত করেছেন বাঁহাতি ক্রিকেটারকে। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যানটিকে কটূকথাও হজম করতে হচ্ছিল বারবার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলকালাম চলছিল তামিমকে নিয়ে। টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছিল।

সেঞ্চুরি দিয়েই নিন্দুকের মুখে কুলুপ এটে দিলেন দেশ সেরা এই রান সংগ্রাহক। কিন্তু বহুকাক্সিক্ষত সেঞ্চুরির উদযাপনটা বুনো হলো না মোটেও। বরং জাদুকরি তিন সংখ্যা ছুঁয়েও মৌনই থাকলেন তামিম! দুইবার প্রান্ত বদলে স্ট্রাইক এন্ডে গিয়ে হেলমেটটিও খুললেন না! শুধুমাত্র ব্যাটটি গ্যালারির দিকে উঁচিয়ে ধরলেন। ক্রিজের ওই প্রান্ত থেকে মাহমুদউল্লাহ এসে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দিত করলেন। গতকাল বাংলাদেশ ইনিংসের ৩৭তম ওভারে শন উইলিয়ামসের শেষ বলটি সতর্ক ব্যাটে কাভার অঞ্চলে ঠেলে দিয়ে দৌঁড়ে নিলেন ২ রান। এরমধ্য দিয়েই প্রায় ২ বছর পর বহু কাক্সিক্ষত সেঞ্চুরির দেখা পেলেন দেশ সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। তার সব শেষ শতকটি এসেছিল ২০১৮ সালের জুলাইয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। প্রভিডেন্সে স্বাগতিক ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১০৩ রানের ইনিংস।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট