চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

কবরের শাস্তি চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়
কবরের শাস্তি চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়

রমজানের শেষ দশক এবং লাইলাতুল কদর

১৫ মে, ২০২০ | ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ

ইবাদাতের বসন্তকাল বলা হয় মাহে রমজানকে। মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্তই ফজিলতপূর্ণ। তার মধ্যে বেশি ফজিলতপূর্ণ হল তার শেষ দশক। পবিত্র রমজানের উৎকৃষ্ট ও শ্রেষ্ঠাংশ হচ্ছে তার শেষ দশক। একে রমজানের সারাংশ ও তার শীর্ষ চূড়া বলেও অভিহিত করা যায়।

এ দিনগুলোতে দয়াময়ের পক্ষ থেকে করুণার বারিধারা ও মার্জনার প্রতিশ্রুতি এবং মুক্তির কাঙ্ক্ষিত ঘোষণা মুমিন হৃদয়কে ব্যাকুল করে তোলে। এ জন্যই মহানবী (সা.) সাহাবায়ে কেরাম ও বুযুর্গানেদ্বীন এই দশকে ইবাদাতের ব্যাপারে সর্বোচ্চ যত্নবান থাকতেন।

হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন:“রমজানের শেষ দশকে প্রিয় নবী যত পরিশ্রম করতেন, অন্য দশকে তা করতেন না” অর্থাৎ, তিন দশকের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি পরিশ্রম করতেন শেষ দশকে, আর তা অবশ্যই ইবাদতের মাধ্যমে। (মুসলিম শরীফ: ১১৭৫) আম্মাজান আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা অন্য বর্ণনায় বলেন: “শেষ দশক আরম্ভ হলে প্রিয় নবী পূর্ণরাত জেগে থাকতেন, পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে দিতেন এবং নিজে কোমর-বেঁধে ইবাদতে মগ্ন হতেন”। (বুখারী শরীফ: ২০২৪)

রমজানের শেষ দশকে রয়েছে শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল কদর। শুধু এ রাতটির কারণেই এ দশককে অনায়াসে রমজানের রাজমুকুট বলা যায়। কুরআনে মহিমান্বিত এ রজনীর মর্যাদা ও মহাত্ম বর্ণনা করে স্বতন্ত্র একটি সূরাহ অবতীর্ণ হয়েছে।

আল্লাহ বলেন, শবে কদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এ রাতে ফেরেশতারা এবং রূহ (অর্থাৎ জিবরাঈল আ.) প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হন। সে রাত আদ্যোপান্ত শান্তি- ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরাহ আল ক্বাদর)

মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কদর রজনিতে ঈমান ও ইখলাস সহকারে ইবাদাত করবে, তার পূর্ব পাপসমূহ মিটিয়ে দেওয়া হবে। (বুখারি, ২/৭০)

এ রাতে নূরের ফেরেশতারা মাটির পৃথিবীতে নেমে আসেন। মুমিনদের ইবাদাত প্রত্যক্ষ করেন। তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। এমনিভাবে সারা বছরের ভাগ্যলিপি এ রাতে আল্লাহ ফেরেশতাদের ওপর ন্যস্ত করেন। তারা যথাসময়ে তা কার্যকর করেন।

লাইলাতুল কদর কোনটি?

কুদরতের অপার রহস্যে এ রাতটি অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। কদরের রাত নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। সাহাবা কিরামের মাঝে এ ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। কারও মতে, ২১ রমজান, কারও মতে ২৩, আর কেউ বলেন, ২৭ রমজান।

লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে পরস্পর বিরোধী কিন্তু বলিষ্ঠ প্রমাণ সমৃদ্ধ মতামত সমূহের সমাধান পাওয়া যায় সাহাবী আবু কিলাবা (রা.) এর বক্তব্যে। তিনি বলেন, শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর আবর্তিত হতে থাকে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক,৭৬৯৯)

মহানবী (সা.) এর নির্দেশনা আমাদের জন্য শিরোধার্য। তিনি বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করো। (বুখারি, ১৮৭৬)

কদরের রাত কেন অনির্দিষ্ট থেকে গেল?

হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর অস্পষ্ট ও অনির্দিষ্ট থেকে যাওয়ার পেছনে রয়েছে দুই মুসলমানের কলহ-বিবাদ।

উবাদা ইবনু সামেত (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) আমাদেরকে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানাতে বেরিয়ে আসলেন। এমন সময় দুজন মুসলমান কলহে লিপ্ত হলো। তা দেখে রাসূল (সা.) বললেন, আমি বেরিয়েছিলাম তোমাদেরকে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে খবর দেওয়ার জন্য। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তির ঝগড়ার কারণে আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। (বুখারি, ১৮৮২)

লাইলাতুল কদরের দোয়া

দোয়া কবুল হওয়ার সর্বাধিক আশাপ্রদ রাত লাইলাতুল কদর। মনের সব আশা আকাঙ্ক্ষা প্রভুর সমীপে পেশ করার সর্বোত্তম রজনী। প্রাণ খুলে এ রাতে দোয়া করুন। তবে নবী করিম (সা.) এর শেখানো ভাষায় দোয়া করলে তা কতই না উত্তম!

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, আমি বললাম ইয়া রাসুলাল্লাহ, বলুন তো যদি আমি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই তাহলে কী দোয়া করব? তিনি বললেন, তুমি বলবে, হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করা আপনার পছন্দ, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিযী, ৩৫১৩)

ইতিকাফ
ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা, আটকে রাখা, নিজেকে বন্দি করা, মসজিদে অবস্থান করা ইত্যাদি। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ইবাদতের উদ্দেশ্যে রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফ রমজানের শেষ দশকের বিশেষ আমল। তবে ইতিকাফ যেকোন সময় করা যায়। ভোগবাদী দুনিয়ার মিথ্যে মায়া ত্যাগ করে, পরিবার-পরিজন, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি বর্জন করে কেবল মনিবের সন্তুষ্টির জন্য একান্তে বসে ইবাদত বন্দেগি করা উচ্চ মানসম্পন্ন মুমিনের পরিচয়। আয়েশা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন, যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাঁকে ওফাত দান করেন। তাঁর পরে তাঁর স্ত্রীরা এভাবে ইতিকাফ করতেন। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবছর রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। যে বছর তাঁকে তুলে নেওয়া হয়, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। (সহিহ বুখারি)

পূর্বকোণ/ আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট