চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

নারী দিবসে কী ভাবছেন

৮ মার্চ, ২০২০ | ২:৪২ পূর্বাহ্ণ

বেগম রোকেয়ার স্বপ্নকন্যারা!
ডেইজী মউদুদ
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। জাতিসংঘের কল্যাণে দিবসটি প্রতি বছর এক একটি প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশে^র বিভিন্ন দেশে পালিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য সমতা’। আজ থেকে দেড়শত বছরেরও আগে অনগ্রসর নারী সমাজকে সমাজের
কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার কঠিন ব্রত হাতে নিয়েছিলেন সে সময়ের দুঃসাহসী, মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া। নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে তিনি নারী জাতিকে শিক্ষিত করে তোলার পথ সুগম করেন। তখন নারী দিবস পালন ছিল না, ছিল না জাতিসংঘ, ছিল না কোন উল্লেখযোগ্য সাহসী নারী নেত্রী। তাঁর সংগ্রামের পর দিন পাল্টেছে, নারীরাও এগিয়েছে। আজ আমরা অতিক্রম করেছি অনেক দূর। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, আজ বেগম রোকেয়ার স্বপ্নের অবরোধবাসিনীরা কেমন আছেন? এত বছর পর তাঁর স্বপ্নকন্যাদের অধিকার আর মর্যাদা কতটুকু বেড়েছে, না ধূলায় ভূলুণ্ঠিত! তা জানতে মুখোমুখি হয়েছিলাম নগরীর বিশিষ্ট কয়েকজন নারীর। প্রিয় পাঠক, চলুন এবারের নারী দিবসে তাঁদের স্বপ্নের কথা, তাদের প্রত্যাশার কথা, আনন্দ বেদনার কথা শুনি তাঁদেরই মুখে।

ফেরদৌস আরা আলীম
প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক
সেই বেগম রোকেয়ার কাল থেকেই আমরা কেবল বলে আসছি, আমরা নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ চাই, নারীর সম অধিকার চাই, নারীর মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি চাই। কিন্তু, এখন আর নারীর অধিকার চাই না, নারী তার অধিকার নিজেই আদায় করতে শিখেছে। আমরা এখন চাই নারীর মর্যাদা। নারী হিসাবে বেঁচে থাকার সম্মানটা। কারণ, নারীর মর্যাদা আজ একেবারে ভূলুণ্ঠিত,
পুরুষতন্ত্র আজ এমন এক অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, নারী কেবল তাদের কাছে ভোগ্যপণ্য হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। প্রশাসন থেকে সমাজপতি সর্বত্রই আজ সুশিক্ষার অভাব, অভাব প্রকৃত মানবিক শিক্ষার। ফলে, কোথাও নারী আজ নিরাপদে নেই। আর এই অবস্থার জন্য নষ্ট সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী কিছু নারীও দায়ী। মূল কথা হলো, নারীর মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করতে অত্যন্ত জরুরি সুস্থ মানবিকগুণ সম্পন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা।
সুশিক্ষিত হতে হবে এবং মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষ হতে হবে নারী পুরুষ সকলকে।

আমেনা বেগম
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অর্থ ও প্রশাসন)
আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারীবান্ধব। নারীর মেধা ও মননের বিকাশ ঘটাতে তিনি বহুমুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। তাঁর আন্তরিক প্রয়াসে দেশের তৃণমূল থেকে শুরু করে নারী সমাজ আজ নানা সুফল ভোগ করছেন। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও তাঁর সুদূরপ্রসারী চিন্তারই প্রতিফলন। আমাদের দেশের নারী সমাজের উচিৎ সরকারের সুযোগ সুবিধাগুলোকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অবস্থান ও ভিত মজবুত করা। তবে, এখন আমরা আর নারীর অধিকার চাই না। এমন এক অবস্থানে আছি অধিকারের জন্য আর লড়াই করতে হচ্ছে না। আমরা চাই সমতা সম্মান আর মর্যাদায়।
এবারের নারী দিবসে সকলকে জানাই শুভেচ্ছা।

ডা. রওশন মোরশেদ
গাইনি কনসালটেন্ট, সিএসসিআর
দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের নারী সমাজ সামনের দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলেও নারীর প্রতি সমাজের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক। অনেক ক্ষেত্রে নারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন, হচ্ছেন সহিংসতার শিকার। ধর্ষণ থেকে শুরু করে পারিবারিক নিগ্রহেরও শিকার হচ্ছেন। কর্মজীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজিক অবস্থান, নেতৃত্বের অধিকার সবকিছুই নির্ধারণ করছে পুরুষ সমাজ। অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের বৈষম্য এখনো রয়ে গেছে পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইনে। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য কেবল একটি স্লোগান নয়, এটি মানব সভ্যতার শোভন অগ্রগতির আবশ্যিক প্রাথমিক শর্ত। সমানভাবে ভাবলেই সমাজের চৌকষভাবে এগিয়ে চলার পথ প্রশস্ত হতে পারে, সমাজ বদলের জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবনের জানালা খুলে যেতে পারে। তাই চাই, শিক্ষা ও সংস্কৃতির জাগরণ, যা আমাদের সমাজকে সবধরনের অন্ধত্ব, অনাচার ও কুমন্ত্রনা থেকে মুক্ত করে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, যেখানে নারী পুরষের কোন বৈষম্য থাকবে না। নারী নিজেকে অসহায় ও দুর্বল ভাববে না। জনগোষ্ঠীর অর্ধেক অংশ নারীকে পেছনে ফেলে রেখে, আমরা কি সামনে এগিয়ে যেতে পারবো?

ছন্দা দাশ
কবি ও লেখক
নারী দিবস নিয়ে অনেক লেখা, বক্তব্য, সভা সেমিনার, মিছিল মির্টিং হচ্ছে বহুদিন ধরেই। কিন্তু বাস্তবে তার কতটুকুই প্রতিফলন হচ্ছে? বর্তমান সময়টা যেন নারী নির্যাতনের নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ। কাজেই, নারী দিবস পালনের যথার্থতা আমার কাছে প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়।

রিফাত মোস্তফা
অতিথি প্রযোজক, বিটিভি, চট্টগ্রাম
প্রতিবছর ৮মার্চ আসলে আমরা নারী দিবস পালন করি। দিবসটি পালনের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। ইতিহাসটুকু যখন থেকে জেনেছি, তখন থেকেই দিবসের প্রবক্তা ক্লারা জেটকিন এর চিন্তার প্রভাব আমাকে প্রেরণা দিয়েছে। ছোটবেলা থেকে আমার মা (চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য) আমাকে নারী মুক্তির অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জীবন জানতে সহযোগিতা করেছিলেন বলেই নারীর দৃঢ়তা আর পরিবর্তনের চেতনা আমার মাঝে আন্দোলিত হয়েছিল। এখনো মেয়েরা ভালো কিছু করতে গেলেই পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয়। কিন্তু, বাংলার নারীরা যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তা বিশে^ বিরল। আমাদের এই চট্টগ্রামের কথাই যদি বলি, বাংলার প্রথম শহীদ নারীই হলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। এটি আমাদের চট্টগ্রামের নারীদের জন্য তো বটে, বিশে^র সকল নারীর শক্তির উৎস। পরে পরাধীন দেশে জাতির জনকের ডাকে হাজারো নারী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রমাণ করেছেন বাঙালি নারী ভয়ে কাতর নয়। জাতির জনকের অসমাপ্ত কাজ একের পর এক সম্পন্ন করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারী সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য তিনি অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে নারী উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছে বলেই দেশ আজ উন্নত বিশে^ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। আমাদের নারী সমাজের অর্জনগুলোকে কাজে লাগিয়ে সকল বাধা ও প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমরা যদি এগিয়ে যাই, তবেই সার্থক হবে নারী দিবস পালন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট