চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ

শাহিদা আক্তার জাহান

৮ মার্চ, ২০২০ | ২:৩২ পূর্বাহ্ণ

যুগ যুগ ধরে মানব সমাজে পুরুষের তুলনায় নারীরা অনেক হীন অবস্থায় রয়েছে। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নারীর স্বাধীনতা, নারী ক্ষমতায়ন, নারীর সামাজিক মুক্তি ও অধিকারের প্রশ্নটি সামনে চলে আসে। উনিশ কিংবা বিশ শতক থেকে ‘রাজনীতিতে নারী, ক্ষমতায়নে নারী’ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে উঠে আসে। ৭০ দশকে এই ইস্যুটি বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে আবির্ভুত হয়। এর মূল কারণ ছিল ৬০ দশকে নারী মুক্তির আন্দোলনের প্রভাব। এর পূর্বে রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নারীকে গুরুত্ব দেওয়া হতো না। সবাই মনে করতো নারীরা এ কাজগুলোতে দক্ষ নয়, আগ্রহী নয়। নারীরা থাকবে ঘরের কাজে ব্যস্ত। ক্রমান্বয়ে সমাজ ব্যবস্থায় যারা অধিষ্টিত তারাই বুঝতে পারলো উন্নত দেশ গুলোতে নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারীর অধিকার, নারী জাগরণের সূচনা হয়ছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা তাদের নায্য অধিকার দাবি করেছে, এবং জাতিসংঘ নারীর এই দাবিকে গুরুত্ব সহকারে যৌক্তিকতার সাথে স্বীকার করে নিয়েছেন। এই নারী জাগরণ ও নারী চিন্তাজগতের অন্যতম হলেন মেরি ওলস্টোন ক্র্যাফট। তার সময়ে নারীদের কোন অবস্থান ছিলো না কিছুতে। তাই তিনি নারী অধিকার আদায়ের লক্ষে আমূল পরিবর্তনের কথা চিন্তা করছেন। মেরি ওলস্টোন এক গরীব চাষির পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার স্বৈরাচারী পিতা তার মাকে নির্যাতন করতে দেখে তিনি প্রতিবাদ জানান। পরিবার থেকেই প্রথম প্রতিবাদ শুরু করেন। মেরি ছিলেন রুশোর অনুরাগী, তাই তিনি রুশোর সাথে নারী অধিকার নিয়ে আলোচনা করেন, তাতে রুশোর সাথে মেরির চরম বিরোধিতা লেগে যায়। কারণ হিসেবে যা পেয়েছি তা হল, রুশোর মতেÑ ‘পুরুষেরা যুক্তি শিখবে’ নারীরা নয়। নারী পুরুষের শিক্ষণীয় বিষয় হবে ভিন্ন। নারীরা হবে মমতাময়ী, আবেগময়ী কোমল-নমনীয়-সংযমী, সৌন্দর্যময়। সত্যিকার অর্থে নারীরা এ গুণাবলীগুলো অর্জন করবে। মেরি এর সম্পুর্ণ বিরোধিতা করেন। রুশোর এই বৈষম্যমূলক শিক্ষা কখনো নারী পুরুষের সহায়ক হতে পারে না। বরং পরিবারের, সমাজের, জাতির বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। নারীর শিক্ষা, নারীর সচেতনতা শুধু নারীর জন্য নয় বরং সামগ্রিকভাবে সমাজের, পরিবারের ও দেশের কল্যাণের জন্য একান্ত প্রয়োজন। নারী সমাজও দেশের একটি বিরাট অংশ, ওরা যদি শিক্ষাদীক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকে, যুক্তিহীন ভাবে বেড়ে উঠে তাহলে গোটা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। পুরুষের মতো নারীরও মেধা ও কর্মদক্ষতা রয়েছে, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। আর ‘ক্ষমতায়ন’ হচ্ছে মানুষের যে অধিকার অর্জিত হওয়া যায়, যার দ্বারা নিজের জীবনের পাশাপাশি সামাজিক-পারিপার্শ্বিক ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। আবার শুধু ক্ষমতা থাকলে হবে না, ক্ষমতার কঠোর প্রয়োগ ও থাকতে হবে। নারীকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ও দেওয়ার, বাস্তবায়নের, সম্পদ অর্জনের ক্ষমতা, আতেœাপলদ্ধি গ্রহণ, নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক হতে হবে, নারীকে রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নস্বাধীনসত্ত্বা হিসেবে দেখতে হবে।
ক্ষমতাহীনতার গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বেশির ভাগ নারী অর্থনৈতিক ভাবে পুরুষের উপর নির্ভরশীল। দরিদ্রতা নারীর ক্ষমতাহীনতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বাংলাদেশে বেশিভাগ নারী দারিদ্র্যের শিকার। আর নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের প্রথম যাত্রা শুরু হয় পরিবারের আপনজন দ্বারা।
নারীর রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নারীদেরকেও প্রদত্ত মেধা দিয়ে মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তাই নারীকে যথাযোগ্য শিক্ষার মাধ্যমে যোগ্য করে তুলতে হবে, সঠিক ভাবে যুক্তি শেখাতে হবে। যে যুক্তি দিয়ে নারীকে পুরুষের অন্তরাল থেকে বের করে আনতে হবে।
নারী সচেতনতার ও নারীর গুণাবলীগুলো অর্জন করতে হবে। যুক্তি সহকারে অধিকার আদার করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, চট্টগ্রামের মেয়ে। ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য
অবলীলায় মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলেন, প্রীতিলতা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন, প্রয়োজনে নারীরা দেশের জন্য যোক্তিক দাবি আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন। ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীরা পুরুষের মতই যুদ্ধসংশ্লিষ্ট সকল সেক্টরে কর্মরত ছিলেন। সশস্ত্র যুদ্ধ থেকে শুরু করে কুটনৈতিক দায়িত্ব পালন সহ সব ধরণের ভূমিকা ইতিহাসে ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে আছে, থাকবে। জাতি শ্রদ্ধা ভরে চিরদিন স্বরণ করবে।
যুগের পরিবর্তনে জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নারীর অংশগ্রহণ আগের তুলনায় দৃশ্যমান।
বর্তমানে মন্ত্রীসভায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদেও আছেন নারীরা। দেশে প্রথমবারের মতো স্পীকার নারী। উপনেতা এবং বিরোধী দলীয় নেতা নারী, জাতীয় সংসদের হুইপ পদেও নারী, এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও নারী। জাতীয় সংসদে ৭০ জন নারী, যা জাতীয় সংসদে ২০ ভাগ। সংসদেও ২০ জন নির্বাচিত নারী নিবার্চিত হয়েছেন। সততার সাথে, যোগ্যতা, দক্ষতা ও জবাবদিহিতার সাথে নারী নেতৃত্বের বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন নারী প্রতিনিনিধিরা। জেলাপরিষদে ১ জন সদস্য ৩টি উপজেলার অধিক ইউনিয়ন নিয়ে জন প্রতিনিধিদের ভোটে নিবার্চিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদে এক জন করে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিবার্চিত হয়েছে। ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে ৩ জন করে নারী নির্বাচিত সদস্য রয়েছে। প্রথমবারের সচিব, অতিরিক্ত সচিব পদে নারী, রাষ্টদূত পদে, জেলা প্রশাসক পদে, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশবাহিনী সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে নারী, হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি পদে নারী, ইউএনও নারী, বাংলাদেশ ব্যাংক এর ডেপুটি গভর্ণর পদে নারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি পদে নারী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি নারী, ডিসি নারী, বিভিন্ন থানায় ওসি পদে, দেশের আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা দক্ষতা ও সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। হাজার বছরের কুসংস্কার ও গৃহবন্দী দশা থেকে নারীদের বেরিয়ে আসতে হলে বা সমানতালে এগিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন নারীর ক্ষমতায়ন। বাস্তবতা হচ্ছে রাজনৈতিক জীবনে অংশীদার হওয়ার ব্যাপারে নারীর জন্য আইনগত প্রতিবন্ধকতাগুলো অনেক কমে গেলেও সামাজিক সাংস্কৃতিক নিয়মাচার এখনও রাজনীতিকে মনে করে পুরুষের কাজ, এমপি, মন্ত্রী হবেন পুরুষরা। আর প্রচলিত রাজনৈতিক ধারায় এখনো নারীরা রাজনৈতিক পদের ক্ষেত্রে পুরুষবাচক শব্দ শুনেই অভ্যস্থ। তবে স্বীকার করতে হবে, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পীকার, সংসদ সদস্যরা দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্ষুধামুুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। নারীরা এ সব পদে এসে ধীরে ধীরে শব্দগুলোর অর্থই পাল্টে দিচ্ছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়ন বললে একজন মামতাময়ী নারীর ছবি আমাদের চোখে ভেসে উঠে তা হলো বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বিশ্বের নন্দিত নেত্রী, মানবতার মা, নারী ক্ষমতায়নের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিছবি।
তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন, আপাত দৃশ্যমানতা থাকলেও প্রকৃত অর্থে
প্রচলিত রাজনীতিতে এই দৃশ্যমানতা বড় কোন গভীর বা ব্যাপক পরিবর্তন তৈরি করতে পারেনি। এজন্য পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। নারীকে নারীর পরিবর্তে মানুষ হিসেবে চিন্তা করার মানসিকতা নারীকে তৈরি করতে হবে।
তবে সারা পৃথিবী জুড়েই দেখা য়ায়, সাধারণভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ, অভিজ্ঞতা অর্জন বা নেতৃত্বের বিকাশে সে সব নারীই সফল হতে পারেন যারা প্রচ- আতœবিশ্বাসী, সহসী সততা-দক্ষতা, এবং নিজ জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার রাখে, একই সাথে পরিবারের কাজ থেকে যারা সার্বিক সহযোগিতা পান। সাধারণত দেখা যায় শৈশব ও কৈশোরে রাজনৈতিক বিভিন্ন অভিজ্ঞাতার মধ্য দিয়ে বড় হয়ে উঠেন, শিক্ষাগত প্রশিক্ষণ যাদের থাকে এবং পাশাপাশি থাকে নিষ্ঠা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। তারা রাজনৈতিকভাবে দৃঢ় মনোভাবের অধিকারী হন এবং কৌশলী ও প্রজ্ঞাবান হিসাবে খ্যাতি পান তারাই।
আবার পক্ষান্তরে এ সব গুণাবলী সম্পন্ন হওয়ার পরও রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য না হাওয়ায়, কালো টাকার মালিক না হাওয়ায় অনেকে সুযোগ ও নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। নিরাপওাহীনতা ও আর্থিক কারণেই বাংলাদেশের নারীরা রাজনীতি, ক্ষমতায়ন ও নির্বাচনে অংশগ্রহণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে না। আর ভূমিকা রাখতে না পারার কারণে রাজনীতিতে নারীর নিজস্ব পরিচয় গড়ে উঠে না। আবার দেখা যায় নারীকে দেখানো হয়, কারো স্ত্রী, কারো বোন, কারো মেয়ে এসব পরিচয়ে। ফলে ওদের ভিতরে রাজনৈতিক মেধা-প্রজ্ঞা, সততা-যোগ্যতা থাকলে ও প্রচলিত রাজনীতির ¯্রােতে সে সব পরিচয় হারিয়ে যায়। তারা আর নিজস্ব পরিচয়ে উঠে আসতে পারে না।
আমাদের দেশে রাজনীতিতে দলের ভেতরেই নারীর অবদান সঠিক ভাবে মূল্যায়িত হয় না, অনেক দিন মাঠে আন্দোলন সংগ্রাম, রাজনীতি করার পরও নেতা-নেত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নেতার মেয়েদেরকে, সহধর্মীনীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। মাঠে থাকা পরিক্ষিত কর্মীরা উপেক্ষিত হয়, ফলে সাধারণ পরিবারের সন্তানরা রাজনীতিতে অসহায় হয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এমন বাস্তবতা দেখা যায় নির্বাচনের সময় মনোনয়ন নিয়েও। প্রভাবশালী প্রার্থীর কারণে, নেতা মেয়ে কিংবা সহর্ধমনী হাওয়ায় দলের নিবেদিত প্রাণ কর্মী বা নেত্রিরা মনোনয়ন পায় না।
আবার এমনও দেখা যায় নারী হাওয়ার কারণে ব্যক্তিজীবনে স্কুলে সমাজে প্রথম শুরু থেকে নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা রাজনৈতিক বোধ, রাজনৈতিক জ্ঞান, রাজনৈতিক এ্যামবিশন গড়ে উঠে না। নারীদেরকে এসব বিষয়ে আরো এগিয়ে যেথে হবে। আমরা দেখি নারীরা নির্বাচনে সাংসদ-মেয়র-চেয়ারম্যান পদে অংশ নিলেও সমাজে, পরিবারে, গণমাধ্যমে খুব একটা প্রচার হয় না, এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের সব দেশে নারীদের অবস্থা অনেকটা এরকম। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, সমাজে নারীদেরকে গৌণভাবে গুরুত্বহীন ভাবে উপস্থাপনা করা হয়। নারীর যোগ্যতা দক্ষতা, মেধাকে সঠিক ভাবে উপস্থাপনা করা হয় না। অনেকে মনে করে একজন নারী কি ভাবে রাজনীতিবিদ হবে। তার সব নেতিবাচক দিকগুলো উপস্থাপন করা হয়, অনেক রকম আলোচিত হয়, সমালোচিত হয়। যা একজন পুরুষ রাজনীতিবিদকে এই ধরনের কোন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় না। পেশাগত দক্ষতার চাইতে নারীদেরকে ব্যক্তিগত পারিবারিক বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। একজন মার্কিন অধ্যাপক গবেষক এরিকা ফক্স তাঁর লেখা বই ‘ওম্যান ফর প্রেসিডেন্ট: মিডিয়া বায়াস ইন এইট ক্যাম্পেইনস’ বইয়ে দেখিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পদে যখন হিলারি ক্লিনটন এবং বারাক ওবামা দুইজনেই প্রতিযোগিতা করার আগ্রহ দেখালেন, তখন মার্কিন মিডিয়ায় ওবামা যতখানি গুরুত্ব পেয়েছিলেন, হিলারি ততখানি পান নি। নারীদের দক্ষাতার চাইতে শারীরিকভাবে বেশি বর্ণনা দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে নারী প্রার্থীদের একটু রক্ষণশীল পোশাক পরাই উত্তম। তবে আমাদের দেশে নারী প্রার্থীরা সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগতভাবে শালীন পোশাক পরতে অভ্যস্ত, বিশেষ করে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় শালীন পোশাক পরেন।
নারীদেরকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য
মিডিয়া প্রচারণা বাড়ানো। প্রচারণা কৌশলের পরিকল্পনা। পুরুষের পাশাপাশি নারী প্রার্থী থাকলে তাকে নারী হিসেবে বিবেচনা না করে এক জন প্রার্থী হিসেবে, দক্ষতা যোগ্যতা, ও জনসমর্থন সামনে রেখে খবর প্রচার, প্রচরণা করতে হবে। প্রার্থীকে দেশের ইতিহাস ও রাজনীতি সম্পর্কে একটা পরিস্কার বাস্তব ধারণা থাকতে হরে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে। নারীদেরকে নারী নয়, প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়েও বেশি নেতা হিসেবে ভাবতে হবে। নেতা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে, চরিত্রে নেতৃত্বের গুণাবলীগুলো অর্জন করতে হবে। কথায় নয় কাজে আচরণে যথাসম্ভব সৎ ও স্বচ্ছ থাকতে হবে, জনগণর কাছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি করার মানসিকতা থাকতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। কারণ অংশীদারত্ব ছাড়া অংশগ্রহণ কার্যকর হয় না। নারী ক্ষমতা এবং রাজনীতি আরো পরিপূর্ণ ভাবে প্রতিষ্টিত করতে হলে ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নারী পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজ সমাজ অনেক পরিবর্তন হয়েছে। রাজনীতিরও অনেক পরিবর্তন ঘটছে। অদৃশ্য নারী এখন দৃশ্যমান। সেই দৃশ্যমানতাকে সমাজের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব আপনার আমার সবার। জয় হোক নারীর সুন্দর পদচারণা, নারী থাকুক সবার কাছে সুরক্ষিত।

লেখক- সদস্য, জেলা পরিষদ, চট্টগ্রাম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট