চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কর্ণফুলীর দোনার খাল সেতু নির্মাণ শীঘ্রই

দীর্ঘ আঁধারশেষে আলো হাসবে ডাঙারচরে

মোর্শেদ নয়ন হ কর্ণফুলী

১৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:০১ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী নদীর একতীরে দেশের অর্থনীতির হৃদপি- চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর। অন্যতীরে সুবিধাবঞ্চিত জনপদ ডাঙারচরের অবস্থান। বন্দরের বাতির আলো পড়লেও উন্নয়নের আলোতে বেশ পিছিয়ে রয়েছে বিচ্ছিন্ন এ জনপদটি। কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের ডাঙারচরের ১, ২ ও ৩ ওয়ার্ডের জনসাধারণকে লেখাপড়া ও জীবিকার প্রয়োজনে যাতায়াত করতে হয় চট্টগ্রাম শহরে। সড়কপথে চট্টগ্রাম নগরীতে যেতে অন্তত ১৩ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। তাই এখানকার অন্তত হাজার বিশেক লোকের ভরসা ডাঙারচর-সল্টগোলা ঘাটটি। ওই ঘাটে প্রায়ই প্রাণহানি ঘটে। ঘাটটিতে গত ১০ বছরে তিন দুর্ঘটনায় আটজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ কারণে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ডাঙারচর থেকে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর ডায়মন্ড সিমেন্ট ফ্যাক্টরির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া দোনার খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করার। গ্রামবাসীর ধারণা, দোনার খালের ওপর একটি পাকা সেতু নির্মিত হলে যোগাযোগে নতুন দিগন্ত সূচনা হবে। বিছিন্নতা ঘুচে বদলে যাবে নগরের উপকন্ঠে অবস্থিত সুবিধাবঞ্চিত জনপদ ডাঙারচরের চিত্র।

অবশেষে ডাঙারচরবাসীর দাবি পূরণ হতে চলছে। স্থানীয় সাংসদ ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি’র ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে দোনার খালে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে বলে দৈনিক পূর্বকোণকে জানিয়েছেন দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, দোনার খালে সেতু নির্মাণের জন্য সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দেন কর্ণফুলী-আনোয়ারা আসনের সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ওই ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ডোনার খালের ওপর পাকা সেতুসহ সড়ক নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সয়েল টেস্ট, সার্ভে সম্পন্ন ও সেতুর ডিজাইন চূড়ান্ত করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১০.২৫ মিটার ও প্রস্থ হবে ৪৪ মিটার। সেতুটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি টাকা।

স্থানীয় ডাঙারচরের বাসিন্দা ও জুলধা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম হৃদয় বলেন, ডাঙারচর থেকে সড়কপথে ফকিরনীরহাট-শিকলবাহা ক্রসিং এবং মইজ্জ্যারটেক হয়ে শাহ আমানত সেতু দিয়ে নগরে যেতে হয়। এতে ডাঙারচর থেকে মইজ্জ্যারটেক পর্যন্ত সড়কের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। কিন্তু দোনার খালে সেতু হলে মইজ্জ্যারটেক পর্যন্ত দূরত্ব দাঁড়াবে মাত্র সাড়ে চার কিলোমিটার। এতে দূরত্ব কমবে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার। ফলে সেতুটি নির্মাণ হলে ডাঙারচর এলাকার জনসাধারণের চট্টগ্রাম নগরীতে যাতায়াতে একদিকে সময় বাঁচবে অন্যদিকে কমে আসবে দূরত্বও। এতে করে নৌপথে যাতায়াত কমে আসবে আর দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমে আসবে স্বাভাবিকভাবে। এলাকাবাসীর সুবিধার্থে সেতুটি দ্রুত নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

জুলধা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও ডাঙারচরের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বদি বলেন, দোনার খালের ওপর একটি পাকার সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। ডাঙারচরবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ডোনার খালের এ সেতুটি নির্মিত হলে বিচ্ছিন্নতা ঘুচবে নগরের উপকণ্ঠে অবস্থিত এ জনপদের। বদলে যাবে পুরো ডাঙারচর এলাকার চিত্র। এ ব্যাপারে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগ সভাপতি ফারুক চৌধুরী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ডাঙারচরে সাধারণ মানুষের বসবাস ছাড়াও নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভারি শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। কিন্তু সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি চট্টগ্রাম বন্দরের বিপরীতে অবস্থিত সম্ভাবনাময় এলাকার উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দোনার খালের ওপর পাকা সেতুসহ একটি সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তার ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে সেতু নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করেছে সওজ। সেতুটি নির্মাণ হলে শিল্পায়নের বিকাশ ঘটবে। পাল্টে যাবে পুরো এলাকার দৃশ্যপট।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভূমিমন্ত্রী মহোদয়ের ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে দোনার খালের ওপর একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সয়েল টেস্ট, সার্ভে সম্পন্ন ও সেতুর ডিজাইন চূড়ান্ত করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত সেতু নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট