চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অরক্ষিত হতশ্রী হয়ে পড়েছে রামগড় পর্যটন পার্ক

শ্যামল রুদ্র, খাগড়াছড়ি

১২ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠ, বিজয় ভাস্কর্য, শহীদ মিনার, বসার বেঞ্চ, ছোটখাটো একটা হ্রদও আছে পার্কে। তবে সুষ্ঠু দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এর এখন হতশ্রী চেহারা। ইতোমধ্যে বেহাত হয়েছে বেশকিছু মূল্যবান জিনিস, প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। যাকে গো-চারণ ভূমি বানিয়েছেন আশপাশের লোকজন। এলাকাবাসী বলছেন, এ দুরাবস্থা লাঘবে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ জরুরি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগাম উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া উদ্যোগী হয়ে ঐতিহ্যবাহী সাবেক মহকুমা রামগড়ের হারিয়ে যাওয়া জৌলুস উজ্জীবিত করতে উপজেলা সদরে বিনোদন পার্কটি গড়ে তোলেন। প্রায় ৭ একর জমির ওপর লেকসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরিতে ওইসময় প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্মারকমূলে নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ২০০৪ সালের ৩০ মার্চ পার্কের জমি পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেয়ার পর খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে এই জমিতে একটি চিত্তাকর্ষক বিনোদন পার্ক গড়ে নিয়মিত রাজস্ব আয়ের ব্যবস্থা করা হয়। তখন দূর-দুরান্তের পর্যটকদের আগমনে সবসময় মুখড়িত হয়ে থাকতো পুরো পার্ক এলাকা। বাগান পরিচর্যাসহ যাবতীয় কাজ পৌর কর্তৃপক্ষ সুচারুভাবে সম্পন্ন করায় অল্প সময়ের মধ্যেই ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় চিত্তাকর্ষক স্থান হিসাবে পরিচিতি পায়। কিন্তু ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় উপজেলা প্রশাসন পার্কের মালিকানা দাবি করে সাইন বোর্ড টানিয়ে দেয়। সেই থেকেই উপজেলা ও পৌর প্রশাসনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।

এ প্রসঙ্গে লেখক একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার (সাবেক ইউএনও অলি উল্ল্যাহ ও রায়হান কাউসার) সঙ্গে ওই সময় কথা বলেছিলেন। তাদের ভাষ্যমতে, জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ছিল। সরকারি খাস জমির মালিক ভূমি মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। এখানে এর ব্যত্যয় ঘটায় জমির প্রশ্নে জটিলতা দেখা দেয়। পৌর কর্র্তৃপক্ষ বলেন, উপজেলার পক্ষে মালিকানা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি সাঁটানোয় তারা এ জমিতে যাননি। দুই প্রশাসনের দড়ি টানাটানির সুযোগ নেন সুযোগসন্ধানী দুষ্টচক্র। শোভাবর্ধক ২০০ বাতির সবগুলো চুরি হয়ে যায়। হৃদে নামার কাঠ-লোহার তৈরি ঘাট ও ঝুলন্ত সেতুর পাটাতন ভেঙে নষ্ট হয়। বেঞ্চের এসএস পাইপ (স্টেইনলেস স্টিল) ও পাইপের রেলিং খুলে নিয়ে যায় এবং মারা যায় নানা প্রজাতির গাছগাছালি। চার লাখ টাকার প্যাডেল বোট হৃদে ডুবে নষ্ট হয়। সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোজাম্মেল হোসেন বাবলু বলেন, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পার্ক রক্ষায় ওইসময় লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।

রামগড় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আলমগীর পার্কের মূল্যবান জিনিস চুরি এবং নষ্ট হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, রামগড়বাসীর বিনোদনের চমৎকার একটি পার্ক চোখের সামনে কীভাবে ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হচ্ছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এটি রক্ষায় অবিলম্বে উদ্যোগ প্রয়োজন।
সরকারি মালিকাধীন হওয়া সত্ত্বেও পার্কটির হতশ্রী চেহারায় মনে হয় এটি এখন অভিভাবকহীন। পার্কের ভেতর স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য ‘বিজয়’ ও শহীদ মিনার চত্বরে অবাধে গরু ও ছাগল বিচরণ করছে। আশপাশের লোকজন পার্কটি গো-চারণ ভূমি বানিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, লোহার গেইটসহ অন্যান্য জিনিস চুরি হয়ে যাওয়ায় পুরো এলাকাটিই এখন অরক্ষিত। নজরদারির অভাবে ইভটিজার এবং মাদকাসক্তদের আনাগোনা বেড়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ইসরাত বলেন, রামগড়ের একমাত্র বিনোদন পার্কের হতশ্রী চেহারায় মন খারাপ হয়। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কারবারি বলেন, পার্কটি সংস্কার করে কিভাবে পূর্বাস্থায় ফেরানো যায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নেবেন। পর্যটন নগরী হিসাবে রামগড়কে গড়ে তোলা হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট