চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

হেথা নয়, হোথা নয় এবার অন্যখানে চলোরে মন

নিজাম উদ্দিন লাভলু হ রামগড়

৫ জানুয়ারি, ২০২০ | ২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

মন ভালো নেইতো? বেড়িয়ে আসুন। হেথা নয়, হোথা নয়, এবার অন্য কোথা, ভোলামন এবার অন্যখানে-চলো! অর্থাৎ চিত্তের রসদ যোগাতে ভ্রমণ বিলাসী সৌন্দর্য পিপাসুরা এই শীতে বেড়িয়ে আসুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অলকাপুরী পার্বত্য রামগড়ে। প্রকৃতির দেহে যে রূপ-বৈচিত্র্য, মনোমুগ্ধকর ছন্দ স্বাভাবিকভাবে বর্তমান, অরণ্য-দুহিতা পার্বত্য এলাকার অঙ্গে অঙ্গে তা নিবিড়ভাবে পরিষ্পুট। এ পার্বত্য অঞ্চলের এইপ্রান্ত থেকে ওইপ্রান্ত যেদিকে দৃষ্টি ফেলুন, চোখের সামনে ফুটে উঠবে এক শ্যামল সুন্দর দৃশ্যাবলী। এ অরণ্যাঞ্চলের এক রহস্যময় রূপ আছে, যা শুধু কেবল বিস্মিত করে না, চিত্তলোকে এনে দেয় গাম্ভীর্য, এনে দেয় বাক্যহীন স্তব্দতা। অজানা অচেনা গাছগাছালি হাত বাড়িয়ে বন্ধুর মতো যেন আহ্বান জানায়, ‘এসো বন্ধু, বসো আমার সুশীতল ছায়াতলে।’ পাহাড়ের বুক চিরে চলে গেছে পাহাড়ি ঝর্ণা-ছড়া। পর্বত দুহিতার এ অগণিত ঝর্ণা, ছড়া পার্বত্য এলাকার নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে দিয়েছে এক স্বতন্দ্র রূপ। অরণ্যের কোলে লালিত, বর্ধিত অরণ্য সৌন্দর্যে ভরপুর পাহাড়িয়া জীবনযাপন, পাহাড়ি সংস্কৃতি, কৃষ্টি ঐতিহ্যও অরণ্যের সঙ্গে একাত্ম অভিন্ন।

প্রাচীন সাবেক মহকুমা ও সীমান্ত শহর রামগড় বঙ্গ জননীর অপরূপ শোভায় শোভিত এক আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। রামগড়ের প্রবেশদ্বারের রয়েছে সুবিশাল চা বাগান। ফেনী খাগড়াছড়ি কালো পিচের সড়কটি এ চা বাগানের সবুজ বুক চিরে চলে এসেছে রামগড়ে। প্রতিদিনই এ সড়কে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রী এক পলকে ভোগ করেন চা বাগানের শান্ত সবুজাভ অপার সৌন্দর্য। চা বাগানের কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে এক বিশাল প্রাকৃতিক লেক। হাজার হাজার অতিথি পাখির ছোটাছুটি, খুনসুটি, সুমধুর কলতানে মুগ্ধ হন যে কেউ। রামগড় শহরের উপকন্ঠে লেক পার্কটিও আকর্ষণীয়। এখানে রয়েছে একটি চমৎকার ঝুলন্ত ব্রিজ। আর আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিভাস্কর্য ‘বিজয়’। এ লেক পার্কের কাছেই ভারত সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির জন্মস্মৃতি স্তম্ভ। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন এ স্মৃতি সৌধে লেখা রয়েছে ১৭৯৫ সালে রামগড়ে এ সীমান্তরক্ষীবাহিনীর গোড়াপত্তনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। রয়েছে পোড়ামাটির টেরাকোটায় এ বাহিনীর বিভিন্ন বির্বতনের অবয়ব। এর একটু দূরেই সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর কিনারায় অবস্থিত প্রাচীন এসডিও বাংলোটিও বেশ সুন্দর। পৌর শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে রয়েছে কলসীমুখ নামে এক আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। কলসীর আকৃতিতে এঁকেবেঁকে যাওয়া সীমান্তবর্তী ফেনী নদী, এর মাঝে দ্বীপভূমির সদৃশ একটি পাহাড়ি গ্রাম। যার উত্তরে ভারতের বৈষ্ণবপুর, পূর্বে ছোট সাব্রুম ও পশ্চিমে জোরকুম্বা। এভাবে তিন দিকেই ঘিরে আছে ভারত। প্রায় ৪০০ একর আয়তনের ফেনী নদীর কোলের এ কলসীমুখ গ্রামে বসবাস করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মারমা সম্প্রদায়ের অর্ধশত পরিবার। শিল্পীর রংতুলিতে আঁকা কোন মনকাড়া ছবির মতই এমন নৈসর্গিক দৃশ্য দেখা যায় নদী থেকে ৫-৬শ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত বিজিবির ক্যাম্প থেকে। উপজেলা সদরের অদূরেই পাহাড়াঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এবং এর একটু দূরে অবস্থিত হর্টিকালচার সেন্টারের (স্থানীয়ভাবে যথাক্রমে সয়েল বাগান ও পাইলট বাগান নামে
পরিচিত) মনলোভন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সৌন্দর্য পিপাসুদের। রামগড় থেকে মাত্র দেড়,দুই ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে যাওয়া যায় খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট ‘আলুটিলা’য়। এটি এ জেলাবাসীর কল্পনার দার্জিলিং। জেলার সর্বোচ্চ পাহাড় এ আলুটিলার বুকচিরে সর্পিল আকারে চলে গেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী মহাসড়কটি। রাস্তার দু’ধারে সবুজ বনাঞ্চলে ঢাকা সারি সারি উঁচু-নীচু পাহাড়। পাহাড়ের গা ঘেঁষে ভাসমান মেঘের লুকোচুরি খেলা, কোথাও আবার পাহাড়ের ঢালে ফল-ফলাদি ও রাবার বাগান আর পাহাড়িদের জুম ফসলের ক্ষেত। আলুটিলা বটমূল তথা পর্যটন স্পটে রয়েছে প্রকৃতির অপূর্ব রূপ সৌন্দর্যকে উপভোগ করার সুন্দর ব্যবস্থা। আছে বসার পাকা বেঞ্চ এবং একাধিক অবজারভেশন টাওয়ার। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে পুলিশ। কয়েকটি টি স্টল আছে। এখানে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিশালায়তনের একটি রহস্যময় সুরঙ্গ। আলুটিলার আরেক আকর্ষণ হচ্ছে ‘রিছং ঝর্না।’ এটিও প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট। আলুটিলার চূড়ায় অবস্থিত বৌদ্ধ মন্দিরটিও বেশ সুন্দর। এককথায় পুরো আলুটিলাটিই যেন স্বপ্নপুরী। এর অপূর্ব সৌন্দর্য দেখে মনে হয় ¯্রষ্টা যেন এ পাহাড়জুড়ে আপন সৌন্দর্যের মাধুরী মিশিয়ে এক অপূর্ব বৈচিত্র্যময় লীলাক্ষেত্র তৈরি করেছেন তার শ্রেষ্ঠ জীব মানবকুলের জন্য। আলুটিলার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মুগ্ধ খাগড়াছড়ির সাবেক জেলা প্রশাসক খোরশেদ আনসার খান লিখেছেন, ‘ক্লান্ত পথিক ক্ষণেক বসিও আলুটিলা বটমূলে, নয়ন ভরিয়া দেখিও মোরে চেঙ্গীনদীর কূলে।’ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে দেখা যাবে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ এখানকার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবন চিত্র ও তাদের বর্ণিল কৃষ্টি ও সংস্কৃতি।

যেভাবে যেতে হবে: ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা ফেনী থেকে সহজেই যাত্রীবাহী কোচ বা বাসযোগে যাওয়া যায় রামগড় ও খাগড়াছড়িতে। ঢাকার কমলাপুর, ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ প্রভৃতি স্থানে রয়েছে খাগড়াছড়ির বাস কাউন্টার। এসব স্থান থেকে সেন্টমার্টিন, ঈগল, শ্যামলী, এস আলম, শান্তি পরিবহন প্রভৃতি চেয়ারকোচের নৈশ ও দিবা সার্ভিস রযেছে। রাত সাড়ে ১০টা হতে ১২টা এবং সকাল ৭টা হতে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে এসব কোচ যাত্রা করে। খাগড়াছড়ি থেকেও এসব কোচের দিবা ও নৈশ সার্ভিস রয়েছে। এসব কোচে ঢাকা থেকে রামগড় আসা যায়। রামগড় ভ্রমণশেষে এখান থেকে বাস ছাড়াও সিএনজি চালিত অটোরিক্সা কিংবা চাঁদেরগাড়ি, পিকআপ রির্জাভ করে আলুটিলায় যাওয়া যায়। ফেনীর মহিপাল এবং চট্টগ্রামের অক্সিজেন বাস টার্মিনাল থেকে রামগড় ও খাগড়াছড়ির বাস ছেড়ে আসে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট