চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ নেই রস, সেই রসের কলস

জাহেদুল আলম হ রাউজান

২২ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

শীতের আগমনে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস আহরণে খেজুর গাছ পরিচর্যায় গাছিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীত শুরুর সাথে সাথে গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করে রস আহরণ শুরু করেছেন। নতুন ধানের পাশাপাশি খেজুরের রস ও খেজুর গুড়ের পাটালি দিয়ে তৈরি বাংলার ঐতিহ্য পিঠা-পায়েস শীতের দিনে অন্যতম আকর্ষণীয়। তাই প্রত্যন্ত এলাকায় গাছিরা খেজুর গাছ তৈরিশেষে রস সংগ্রহ শুরু করেছে।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক এই মধুবৃক্ষ বা খেজুর গাছ ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। পেশাদার গাছির পাশাপাশি মৌসুমী গাছিরাও রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ সময় খেজুর গাছে শোভা পায় রসের হাঁড়ি। আর খেজুর রস দিয়ে নতুন আমন ধানের পিঠাপুলি তৈরির পাশাপাশি খেজুর গুড় দিয়ে মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া তৈরির ধুম পড়ে এই শীতে। এ সময় গাছিরা মাসব্যাপী খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে সংসারের খরচ মেটায়। উপজেলার পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের গাছি নুরুল ইসলাম জানান, রাউজানে খেজুর গাছ আর আগের মতো নেই। রাস্তার ধারে কিংবা বিলের আলে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা কিছু খেজুর গাছ রয়েছে। এখন আগের মতো বাণিজ্যিকভাবে খেজুর রস সংগ্রহ করা যায় না। বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকলেও গাছের অভাবে রস সংগ্রহ করা যাচ্ছে না।

ব্রিকফিল্ডে কাঠ হিসেবে পোড়ানো এবং আরো বিভিন্নভাবে বিলুপ্ত হওয়ায় খেজুর গাছের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। নির্বিচারে খেজুর গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। মূলত নতুনভাবে রোপণ না করার কারণেই খেজুর গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা গাছও কেটে ফেলা হলে আমাদের এ পেশা ছেড়ে দিতে হবে। অনেকেই রস সংগ্রহ করা ছেড়ে দিয়েছে গাছ কমে যাওয়ার কারণে। খেজুর গাছ কম, আর গাছ কেটে প্রস্তুত করাও বেশ কষ্টের। রসও তেমন পাওয়া যায় না। খেজুর গাছ খুব অবহেলিত । কেউ এসব গাছের পরিচর্যা করে না।
ফলে, অপরিপুষ্ট ও রুগ্ন হয়ে পড়া অধিকাংশ গাছ থেকে রস পাওয়া যায় না। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাভবান হওয়া দূরের কথা, শ্রমের দামও উঠে না। এছাড়াও গুড় তৈরির উপকরণের দাম অনেক বেশি। সেই হিসেবে গুড়ের দাম পাওয়া যায় না। তার চেয়ে রসের ভালো দাম পাওয়া যায়। শীতের ভাপা পিঠার জন্যে এ এলাকায় রসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ধীরে ধীরে এই খেজুরের গাছ হারিয়ে যাবে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট