চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বিস্ময়কর সমুদ্র রহস্য বৃহৎ ফিস অ্যাকুরিয়ামে

রায়হান আজাদ হ কক্সবাজার

১৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:০১ পূর্বাহ্ণ

বিস্ময়ের সীমানা ছাড়িয়ে যায় সমুদ্রতলের অপার রহস্য। হরেক প্রজাতির মৎস্য ও জীবজন্তুর জীবন্ত চলাফেরা দৃষ্টিনন্দন ঠেকে ! মাছেরাও ফিডার খায় ! গহীন সমুদ্রের বিস্তীর্ণ জলরাশিতে জীব বৈচিত্র্যের দুর্লভ অভয়ারণ্যের অপর নাম কক্সবাজার রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড। এটি দেশের একমাত্র সর্ববৃহৎ ফিশ একোরিয়াম। এই একুরিয়াম যেমনি পর্যটন স্পটে নবসংযোজন তেমনি সমুদ্র বিজ্ঞানের অজানা রহস্য উদ্ভাবনে দিগন্ত উন্মোচন। সৌন্দর্য পিপাসু যেকারো মন ভরে যাবে শত শত প্রজাতির মৎস্য ও সাগরজীবের রং-ঢং ও অবাধ বিচরণ দেখে। শুধু তাই না, এখানে রয়েছে আবহমান গ্রামবাংলার শত শত নদ-নদী, হাওড়-বাওড়, খাল-বিল ও পুকুর-দিঘির রকমফের মাছের কৃত্রিম ফিশারী। আছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ জাতীয় ম্যানগ্রোব একখ- সুন্দরবন।
সাগরের তলদেশে যেমনি হাজার প্রজাতির মনোহারী গাছ-গাছালি, পাহাড়-পর্বত, ঝরণা-ঝিরি, লতা-গুল্ম আছে তেমনিভাবে রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডেও কৃত্রিমভাবে সেরূপ একটি অবিকল সমুদ্রজগত সাজানো হয়েছে। এখানে মাছেদের নৃত্য ও দৌড়াদৌড়ি শুকনো হৃদয়ে প্রাণের সঞ্চার করে। মৎস্য ও সমুদ্রজীবের জন্য যেরকম পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা থাকা প্রয়োজন তার সবই আছে এখানে। অত্যন্ত যতেœর সাথে সমুদ্র সম্পদ সংরক্ষণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সাইয়েন্স ফ্যাকাল্টির প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দীন মুন্নার দিক-নির্দেশনায় গড়ে উঠা এ ফিশ ওয়ার্ল্ড সমুদ্রজগতের একটি বিম্বিত মহাসমারোহ হিসেবে দৃশ্যমান হয়।
উইকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে দেশের লোনা জলে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এসব মাছ থেকে রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ একুরিয়ামে সংগৃহীত করা হয়েছে। তাছাড়া এখানে সুস্বাদু পানির প্রায় সব মাছেরই উপস্থিতি দেখা গেছে। আছে কাছিম-কাঁকড়া-শামুকের নানান প্রজাতি। এসবের এত রূপ তা দেখা তো দূরের কথা, আমি আগে জানতামও না।
পানির ভেতর ডানা মেলে কচ্ছপের উড়াল দেখে আমার বিষ্ময় লেগেছে। ফিশ ওয়ার্ল্ডে সমুদ্র ভেদিয়া সুড়ঙ্গ করা হয়েছে, যার তিনপাশের একুরিয়ামে হরেক রকম মাছের বিচরণ দেখে যে কারো হৃদয়ে দারুণ দোলা দেবে। পাহাড়িয়া ঝরণা থেকে অনবরত দর দর বেগে পানি পড়ছে আর নদীতটে জীব বৈচিত্র আমাদের প্রিয় জন্মভূমি নদীমাতৃক বাংলাদেশের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।
রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডে রয়েছে সমুদ্রের নীল জলে উড়াল মাছের ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ানোর অপরূপ রোমাঞ্চকর দৃশ্য অবলোকনের দুর্লভ সুযোগ। যত মাছের নাম আমরা জানি না, এখানে সেসবের নাম তো জানা যাবে সাথে সাথে তাদের স্বভাব-চরিত্রও নিজ চোখে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। এতে দু‘শতাধিক সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রাণির যে সমাহার রয়েছে তন্মধ্যে অক্টোপাশ, জেলিপিস, পীতাম্বরি, হাউসপাতা, পানপাতা, স্টার ফিশ, সামুদ্রিক বাইন, স্টোন ফিশ, হাঙ্গর, কোরাল, বিদ্যুৎ মাছ, বিশতারা, দাতিনা, লইট্টা, ফাইস্যা, রূপচাঁদা, টেকচাঁদা ও পইচাঁদা উল্লেখযোগ্য। স্বাদু পানির মাছের রয়েছে রুই, কাতাল, মাগুর, বোয়াল, মহাশোল, পাঙ্গাস, সরপুঁটি, চোষক মাছসহ আরো অনেক। এছাড়াও রয়েছে সোনালী মাছ, প্যারট ফিশ, চিকলিড, গোরামি, আর্চার ফিশসহ অনেক দৃষ্টিনন্দন মাছ। রয়েছে হরেক রকমের কাঁকড়া, যেমন লাল কাঁকড়া, শীলা কাঁকড়া, মাইট্টা কাঁকড়া, লজ্জাবতী কাঁকড়া, রাজ কাঁকড়া, সন্ন্যাসী কাঁকড়া ও বিষধর সামুদ্রিক সাপ। এখানে প্রতিদিন স্বাদু ও লোনা পানির বিচিত্র বাহারি অনেক নতুন নতুন প্রজাতির মাছ ও প্রাণী যুক্ত হচ্ছে। রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড রেডিয়েন্ট গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ও গবেষণা উইং ‘রেডিয়েন্ট ওশান রিসার্চ এন্ড এডুকেশন সেন্টার’ (জঙজঊঈ)। দেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক ঝাউতলায় অবস্থিত একসিলেন্ট সী একুরিয়াম ছাড়াও এ প্রতিষ্ঠানের সেবার মধ্যে রয়েছে সমুদ্রতলের পরিবেশ বিষয়ক ডকুমেন্টারি ৩উ ্ ৯উ মুভি, ডিজিটাল কালার ল্যাব, সুভিনির শপ, লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্ট, কনভেনশন হল, কপি শপ, রুপটপ বার বি কিউ ও চাইল্ড পার্ক।
এ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার রেডিয়েন্ট গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, আমি স্বপরিবারে জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর নানান দেশ ভ্রমণ করেছি, সেখানে সমুদ্রজগতের অপার সৃষ্টি রহস্য নিয়ে নানান সাইয়েন্টিফিক প্রজেক্ট দেখে আমি সত্যিকার অর্থে অভিভূত হয়ে পড়ি। পরবর্তীতে আমার স্ত্রীর আন্তরিক পরামর্শ ও সহায়তায় এ ধরণের মিরাকল ও ব্যয়বহুল উদ্যোগ গ্রহণে সিদ্ধান্ত নিই। এ প্রজেক্ট উদ্বোধনের দুয়েক বছরের ব্যবধানে ব্যাপক সাড়া মিলছে। এখানে আজতক ২২ জন মন্ত্রী ও এমপি এসে সী একুরিয়াম উপভোগ করে আমাদেরকে এপ্রিসিয়েট করেছেন। গত ৩০ বছর ধরে কক্সবাজারে মৎস্য আহরণ, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার সুবাদে আমার যে লব্ধ অভিজ্ঞতা রয়েছে সেটার আলোকে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র তলদেশের জীব বৈচিত্র সংরক্ষণের পাশাপাশি আমি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে আগত দেশী-বিদেশী পর্যটকদের মুক্ত আনন্দ-বিনোদনে নতুন দিগন্ত উন্মোচনে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাব।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট