চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

টেকনাফে খাটো জাতের গাছে থোকায় থোকায় ডাব-নারকেল

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম হক

৩ মে, ২০১৯ | ৫:০৮ অপরাহ্ণ

সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের কৃষি অফিস সংলগ্ন কোয়ারেন্টাইন (সংগনিরোদ কীটতত্ত্ববিদ) অফিস প্রাঙ্গণে রোপিত গাছে শোভা পাচ্ছে নারকেল গাছটি। টেকনাফ উপজেলা কৃষি বিভাগের তৎপরতায় ক্রমে জনপ্রিয়তা লাভ করছে এই খাটো জাতের নারকেল গাছ। অবিশ^াস্য হলেও সত্যি, দ্রুত বর্ধনশীল খাটো জাতের নারকেল গাছে ১৮ মাসের মধ্যেই ফুল চলে আসে ও তিন বছরের মাথায় ফল পরিপূর্ণ হতে শুরু করে। ৭ এপ্রিল সরেজমিন পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুরুতে পরীক্ষামূলক ২টি লাগানো হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে মোট ১৪টি চারা লাগানো হয়েছে। প্রথমে কেউ বিশ^াসই করেনি। কিন্ত বাস্তবে দেখা গেছে চারা লাগানোর আড়াই বছরের মধ্যেই গাছে ফুল এসেছে। প্রথম লাগানো ২টি গাছে থোকায় থোকায় ডাব-নারকেলে ভরতি। কোয়ারেন্টাইন অফিসার স্বয়ং পরম যতেœ দেখাশোনা ও মনোরঞ্জন নামে একজন কর্মচারী পরিচর্যা করেন।
জানা যায়, ভিয়েতনামের নারকেল গাছের এই প্রজাতির নাম ‘ডুয়া এক্সিম লু’। এ জাতটি আবার দু’ধরনের। ‘সিয়াম গ্রিন কোকোনাট’ ও ‘সিয়াম ব্লু কোকোনাট’। সারা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত দ্রুত নারকেল আসে এমন জাতের যেসব গাছের উদ্ভাবন ও চাষাবাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে ভিয়েতনামের এই জাতটি সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই গাছ একটানা ৭০/৮০ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে। স্বাদে-গন্ধে, আকার ও পুষ্টিমানে এটি অসাধারণ। এর পানি অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু।
এছাড়া ভারতের ‘গঙ্গাবন্ধন’ জাতের নারকেল গাছেও দ্রুত ফল আসে। টেকনাফ উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জানান, ‘এই খাটো জাতের হাইব্রিড নারিকেল গাছের চাষে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। নিয়মমতে রোপন ও যথাযথ পরিচর্যা করা হলে এ নারকেল গাছ সনাতনী গাছের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি ফল দেবে। গাছ ২ থেকে ৪ ফুট হলেই ফল ধরে। মাটিতে ছুঁই ছুঁই নারকেল মাটিতে বসেই পাড়া যাবে। লবণ সহিষ্ণু এই গাছ সব ধরনের মাটিতে চাষের উপযোগী। চারা পরিচর্যা করা সহজ। ঝড়ে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কম ক্ষতি হয়।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মধ্য দিয়ে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত জাতের এ নারকেলের জাতটি দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ। ভিয়েতনাম ও ভারত দুই দেশ থেকে খাটো দুই জাতের নারকেলের চারা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সিয়াম গ্রিন কোকোনাট ডাব হিসেবে ব্যবহারের জন্য অতি জনপ্রিয়। এ জাতের রং সবুজ, আকার কিছুটা ছোট, প্রতিটির ওজন ১ কেজি ২০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি। ডাবে পানির পরিমাণ ২৫০ থেকে ৩০০ মিলি। গাছে প্রতিবছরে ১৫০ থেকে ২০০টি ফল ধরে।
এছাড়া সিয়াম ব্লু কোকোনাটও অতি জনপ্রিয় জাত। এটা ২০০৫ সালে উদ্ভাবন করা হয়।
এটা কৃষকের খুব পছন্দের জাত। চারা রোপণের আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যেই ফল ধরে। ফলের রং হলুদ। ওজন ১ কেজি ২০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি। ডাবের পানির পরিমাণ ২৫০ থেকে ৩০০ মিলি। ডাবের পানি অতি মিষ্টি ও জীবনী শক্তি বেশি হওয়ার কারণে এ জাতের ডাব বিদেশে রপ্তানি করা যায়। গাছে প্রতিবছরে ফল ধরে ১৫০ থেকে ২০০টি। প্রায় সব ধরনের মাটি নারকেল চাষের জন্য উপযোগী। তবে অতি শক্ত, কাঁকর শিলাময় মাটি হলে প্রায় দেড় মিটার চওড়া ও দেড় মিটার গভীর করে তৈরি গর্তে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ উপরিভাগের মাটি ও সার দিয়ে ভরাট করে গাছ লাগালে গাছ সুন্দরভাবে বেড়ে উঠবে ও শুকনো মৌসুমে সেচের সুবিধা থাকলে অথবা বসতবাড়িতে সারা বছরই রোপণ করা যাবে। চারা রোপণের পরে প্রতি তিন মাস পর পর সার প্রয়োগ করতে হবে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট