চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

একঝাঁক তরুণ উদ্যোক্তা বদলে দিচ্ছে দ্বীপের চিত্র

আরফাতুল মজিদ ■ কক্সবাজার

১ মার্চ, ২০২০ | ৩:৩৭ পূর্বাহ্ণ

মহেশখালীর গোরঘাটার দিদারুল ইসলাম এবং হোয়ানকের মারুফা নাসরিন লোপা। তারা দুইজনই তরুণ উদ্যোক্তা। তাদের মতো আরো ৯ জন উদ্যোক্তা মিলে ই-কমার্সের মাধ্যমে মহেশখালীর বিষমুক্ত শুঁটকি সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাতে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী, পাশাপাশি এলাকার অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। সংখ্যা বাড়ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তার। এক সময়ের পিছিয়ে থাকা মহেশখালী স্বপ্নের মতো করে এগুচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য দ্বীপের ৯ জন শুঁটকি ব্যবসায়ীর প্রতিজনকে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা করে অফেরতযোগ্য আর্থিক অনুদান প্রদান করেছে আইওএম। এসব লোকদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সবাই শুঁটকিতে নিজেদের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন খুঁজে পেয়েছে।
উদ্যোক্তা মারুফা নাসরিন লোপা জানান, মৎস্য আহরণকারীরা বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন করে। তারা প্রথমে মৎস্যজীবীদের সুশিক্ষা দিচ্ছে। তারপর তাদের কাছ থেকে বিষমুক্ত শুঁটকি নিয়ে ই-কমার্সের মাধ্যমে তা সারাদেশে বিক্রি করছে। এসবই সম্ভব হয়েছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট গতির মাধ্যমে ই-সেবা দিয়ে মহেশখালীকে ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসার কারণে। ডিজিটাল আইল্যান্ড হিসেবে মহেশখালীকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই সেবা দেয়া হচ্ছে।

২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিলে কক্সবাজারের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মহেশখালীকে দেশের প্রথম ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ হিসেবে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ডিজিটাল দ্বীপ প্রকল্পে উচ্চগতির ইন্টারনেট এবং তথ্যপ্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট যাবতীয় ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ চলছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ প্রকল্পটি দেশের দ্রুততম ইন্টারনেট গতির মাধ্যমে মহেশখালীকে একটি বিচ্ছিন্ন উপদ্বীপ থেকে একটি উদীয়মান প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসাবে রূপান্তর করতে সহায়তা করছে। এই প্রকল্পটি আইওএম বাংলাদেশ মিশনের প্রথম পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্প।
সংস্থাটির ডিজিটাল আইল্যান্ডের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার এমডি রেজাউল আল মাসুম, ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ জানান, তথ্য প্রযুক্তির সেবা তৃণমূলে পৌঁছে দিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে মহেশখালী দ্বীপকেই বেছে নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ই-সেবা শুরু করেছে বর্তমান সরকার।
কীটনাশক এবং সংরক্ষণকারী রাসায়নিক উপকরণগুলোর ব্যবহার কমিয়ে স্থানীয়দের জৈব কৃষি এবং অর্গানিক পদ্ধতিতে মাছ শুকানোতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্সের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় বাড়ানো ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য দূর করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আইওএম -এর ট্রানজিশন রিকভারি ডিভিশন (টিআরডি)’র প্রধান পেট্রিক শেরিগনন জানান, মহেশখালী দ্বীপটিকে এই প্রকল্পের জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। কারণ এটি বাংলাদেশের অন্যতম স্বল্পোন্নত জনগোষ্ঠী। এখানে নিরক্ষরতার হার বেশি এবং মাটির লবণাক্ততা কৃষিফলনকে বাধাগ্রস্ত করে। স্থানীয় যুবসমাজ দ্বীপ থেকে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এর ফলে এই দ্বীপের ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ডিজিটাল দ্বীপ প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বিদ্যমান জনসুবিধাদির আরো প্রসার ঘটিয়ে মহেশখালীর বাসিন্দাদের জন্য সুযোগ তৈরি করা।

মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকছুদ মিয়া জানান, শুধু দোকানে পসরা বসিয়ে ব্যবসা নয়, মহেশখালীতে পাল্টেছে সেই পুরনো ধ্যান-ধারণা। দিনদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি। বদলাচ্ছে ব্যবসার চিন্তাধারা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটালে এগোচ্ছে বাংলাদেশও। ই-কমার্স, ই-সেবা ছড়িয়ে যাচ্ছে গ্রামেগঞ্জে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড একটি বহুমুখী প্রকল্প যা বাংলাদেশের অন্যতম বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীটিকে দেশের দ্রুততম গতির ইন্টারনেট মাধ্যমে বিশ্বের সাথে যুক্ত করেছে।’
তিনি আরো বলেন, দ্রুততর ইন্টারনেট কর্মসংস্থানের পরিষেবাগুলো নিশ্চিতে ভূমিকা রাখছে। স্থানীয় শুঁটকি উৎপাদনকারীদের উৎপাদিত শুঁটকি বিক্রয়ের জন্য ই-কমার্সের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ডিজিটাল আইল্যান্ড দ্বীপ উদ্যোগও বাংলাদেশের অগ্রগতির একটি অংশ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট