চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নানুপুর আবু সোবহান উচ্চ বিদ্যালয় ৭৮ বছর ধরে এলাকায় জ্ঞানের আলোকবর্তিকা

এসএম মোরশেদ মুন্না হ নাজিরহাট

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:৩০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভা-ারী ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী জামাল উদ্দিন আহমদসহ বহু কৃতী শিক্ষার্থীর স্মৃতি বিজড়িত স্কুল ফটিকছড়ির নানুপুর আবু সোবহান উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে স্কুলটির শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮’শ। দীর্ঘ ৭৮ বছর ধরে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা হিসাবে কাজ করছে বিদ্যালয়টি।

বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে চোখে পড়ে স্কুলের সুবিশাল মাঠ। যে মাঠে ৯০ দশকে খেলেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার মোহামেডান ক্লাবের স্ট্রাইকার মো. সাব্বির ও আবাহনী লিমিটেডের প্রয়াত মতিউর মুন্না। অবহেলিত অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে এলাকার মানুষের শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে নানুপুরের স্থায়ী বাসিন্দা জমিদার মির্জা আবু আহমদ ১৯৪২ সালে নিজের এবং নানা আব্দুস সোবহানের কিছু জায়গার ওপর স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন।
স্কুলের নাম রেখেছিলেন নিজের এবং নানার নামের সাথে মিল রেখে নানুপুর আবু সোবহান উচ্চ বিদ্যালয়। উপজেলার শিক্ষা বিস্তারে স্কুলটির অনেক ভূমিকা রয়েছে। একসময় স্কুলের অভাবে দূর-দূরান্ত হতে পায়ে হেঁটে আসতো শিক্ষার্থীরা। এই স্কুলের পাস করা শিক্ষার্থীরা আজ দেশ-বিদেশে ভাল অবস্থানে রয়েছে।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, ১৯৪২ সালের আগে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪২ সালে স্কুলটি মাধ্যমিক স্তরে পৌঁছায়, এই কারণে ওই সালটি প্রতিষ্ঠা সাল হিসাবে ধরা হয়। শিক্ষা বিকাশে সুস্থ শরীর ও মনের ভূমিকা অপরিসীম তাই বিদ্যালয়ে খেলাধুলার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চাও করা হয়। প্রথম ১৯৪৪ সালে স্কুলের ৮ জন শিক্ষার্থী মেট্টিকুলেশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯২। বর্তমান স্কুলে ২০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা পাঠদান করছেন। জানা যায়, ১৯৯৮ সালে ১ তলাবিশিষ্ট ফ্যাসিলিটিস ভবন ছাড়া অদ্যবধি স্কুলের জন্য সরকারি কোন বরাদ্দ আসেনি। স্কুলে রয়েছে ভবন সঙ্কট, নেই সীমানা প্রাচীর, টয়লেট আর আসবাবপত্রের স্বল্পতার কথাও জানিয়েছেন স্কুল সংশ্লিষ্টরা। উপজেলায় অতিপ্রাচীন যে ক’টি হাট রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো এক সময়ের নানুপুর কালু মুন্সির হাট (বর্তমান নানুপুর বাজার)। মুরব্বিদের কাছে এখনো বাজারটি কালু মুন্সির হাট নামে পরিচিত। বাজারের ঠিক মধ্যখানে স্কুলটির অবস্থান।

দীর্ঘ ৭৮ বছরে বিদ্যালয়টির অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও এখনো আগের মতোই আছে বিদ্যালয়ের মধ্যখানের ভবনটি। প্রাক্তনরা এখনো ভবনটি দেখলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, আর মুহুর্তেই মনটা ফিরে যায় সেই অতীতের দিকে। যেখানে ছিল নানান দুরন্তপনা, শিক্ষকের নানান কড়াকড়ি, স্কুল পালানো, টেবিলে কলম খেলা, বেত্রাঘাতের ভয়, কান ধরে উঠবস করা, বন্ধুদের সাথে খুনসুটি, বার্ষিক বনভোজন, এসেম্বলি না করে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা, আইসক্রিম খাওয়া, ৭ম ঘন্টা থেকে বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষা আর ছুটিশেষে দৌঁড়ে ঘরে ফেরার প্রতিযোগিতা। একসময় স্কুলটির লেখাপড়ার মান উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেরাদের মধ্যে ছিল। পরবর্তীতে স্কুলের পড়ালেখার মান নিয়ে নানান কথা শোনা গেলেও চলতি জেএসসির ফলাফলে স্কুলটি আবারো ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
১৯৯৬ সালের স্কুলশিক্ষার্থী মো. আলী সরোয়ার জানান, স্কুলে আমাদের সময়কার পড়াশুনা আর বর্তমানের মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি। প্রয়াত প্রধান শিক্ষক ইফতেখার মুন্সি স্যার প্রশাসনিক দক্ষতায় সবদিকে স্কুলটির অবস্থান একবারেই টগবগে ছিল। আমাদের সময় স্যারদের শাসন ক্ষমতা ছিল খুবই কড়াকড়ি। নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল, দৈনন্দিন ছাত্রদের উপস্থিতি বেশি ছিল। স্কুল পালানো সেতো অসম্ভব একটি ব্যাপার ছিল। বর্তমান মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিশোর গ্যাংয়ের একটি নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে যা শিক্ষাকে ধ্বংস করছে। আমি মনে করি স্কুলটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে প্রশাসনিক দক্ষতা, শাসন ক্ষমতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সচেতনতা বাড়াতে হবে ইত্যাদি। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আ.লীগ নেতা সৈয়দ মো. বাকের বলেন, আমি নিজেও এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। দায়িত্ববোধ থেকে স্কুলের দায়িত্ব নিয়েছি। অনেককিছুর বোঝা নিয়ে স্কুলের দায়িত্ব নিতে হয়েছে।

দায়িত্বে থাকাবস্থায় স্কুলের চলতি জেএসসি ফলাফল খুবই সন্তোষকজনক ছিল। আগামীতে স্কুলের ভাল ফলাফল, শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন উপস্থিতি, পাঠদানে গাফেলতি রোধসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আমরা নতুন পরিচালনা কমিটি কাজ করছি। ২০২১ সাল থেকে ছাত্রদের পাশাপাশি স্কুলে ছাত্রী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা আছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান বলেন, ১৯৮৯ সালের জুন মাস থেকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে স্কুলের সাথে আমি সম্পৃক্ত। ২০১২ সাল হতে অদ্যবধি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছি। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি স্কুলের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে। আমার স্কুল পড়ালেখার পাশাপাশি উপজেলা ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অনেক কৃতিত্ব অর্জন করেছে। যে কয়েকটি সমস্যা রয়েছে তা সমাধান হলে স্কুলটি আরো বেশি বেগবান হবে বলে আশা প্রকাশ করছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট