চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চন্দনাইশের শুক্লাম্বর দীঘির মেলা

ধর্মীয় ও সামাজিক ঐতিহ্যের বিশাল সম্মীলন

এস কফিল হ চন্দনাইশ

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:৩০ পূর্বাহ্ণ

দেশের আাচার অনুষ্ঠান লোকজ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মৈত্রীর মিলনমেলা হিসেবে বহুল পরিচিত চন্দনাইশের বরমা-বাইনজুরীর ঐতিহাসিক শুক্লাম্বর দীঘির মেলা। যা পাঁচ শতাধিক বছরের প্রাচীন। এটি মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব। এর আনুষ্ঠানিক নাম শ্রীশ্রী শুক্লাম্বর ভট্টাচার্য দীঘির মেলা ও পূণ্য¯œান।
মেলার প্রবর্তন করেন সাধক শ্রীশ্রী শুক্লাম্বর ভট্টাচার্য্য। প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তি উত্তরায়ন তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়। ১২-১৫ একর জমি ও ৩-৪ সড়ক জুড়ে এ মেলা বসে।

প্রতি বছরের মতো গত ১৫ জানুয়ারি শুক্লাম্বর দীঘির মেলা ও পূণ্যস্নান সম্পন্ন হল। এদিন মানুষের উপচে পড়া ভিড় জমে। কোথাও তীল ধারণের ঠাঁইছিল না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চন্দনাইশ থানা পুলিশ ছাড়াও জেলা পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স দায়িত্ব পালন করে। সনাতন বা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠান হলেও মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদেরও সমাবেশ ঘটে। বিশেষ করে নারীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়।
অনেকই বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র ও মালামাল ক্রয় বিক্রয় করেন। মেলায় নাগরদোলাসহ বিভিন্ন ধরনের রাইড থাকে। প্লাস্টিক, পাইবার, এলুমিনিয়াম, লৌহ, পিতল, মাটির তৈরি জিনিসপত্রসহ নানা সামগ্রী ইত্যাদির বিকিকিনি চলে। দিন-রাতজমে উঠে প্রাণের উৎসব।

পার্শ্ববতী ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন মানত নিয়ে এ পীঠমন্দিরে আসেন। মেলায় যারা বিভিন্ন মনোবাসনা নিয়ে আসেন তা পূর্ণ হয় বলে তাদের বিশ্বাস। তাছাড়া সারাবছর প্রতিদিন বিভিন্ন মানস করে এবং তা পূরণের লক্ষ্যে দীঘিতে দুধ উৎসর্গ, পাঠাবলি ও কবুতর, ফল-ফলাদি ইত্যাদি ভোগ দেন। তাদের মতে দীঘির পানিতে উৎসর্গীত দুধ পানির সঙ্গে না মিশে দীঘিতে তলিয়ে যায়। এ রকম বহু উপাখ্যান আছে এ দীঘিকে ঘিরে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সাধন চন্দ্র দেব জানান, শ্রীশ্রী শুক্লাম্বর ভট্টাচার্য্য ভারতের নবদ্বীপ থেকে চট্টগ্রামের বরমা বাইনজুরীতে আগমন করেছিলেন। তিনি শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করে সাধনা শুরু করেন। ওখানেই তিনি সিদ্ধি লাভ করেন। কথিত আছে, তার অলৌকিক শক্তিতে শঙ্খনদীর গতিও ফেরান। ওই সমস্ত মালামাল ব্যবহারের পর সাধকের নিকট ফেরত দিলে, সাধকতা দীঘিতে ফেলে দিতেন। প্রতিবছর এ দিনে শুক্লাম্বর ভট্টাচার্য দীঘিতে হাজার হাজার হিন্দু নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর দীঘিতে ¯œান করেন জীবনের পাপ মোচনের প্রত্যাশায়। মেলায় আগত পূণ্যার্থীরা শুক্লাম্বর দীঘিরপাড়স্থ অশ্বত্থবৃক্ষের ঢালে বিভিন্ন মানস করে সুতারগিট বেঁধে দেন। অশ্বত্থবৃক্ষে কবুতর উৎসর্গ করেন। তাদের বিশ্বাস পাপ মোচনে ¯œান করা হয়। পূণ্যার্থীরা অনেকই গরু বাচ্চা দিলে প্রথম দুধ দীঘিতে দিয়ে থাকেন। এমনকি কোনগাছে প্রথম ফল ধরলে এখানে দিয়ে থাকেন।

এ মেলার প্রতিটি পর্বে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রতিটিতে রয়েছে ধর্মীয় মর্যাদা এবং ভাবগাম্ভীর্যতা। পুরো মেলা ও সকল কর্মসূচিতে প্রশাসন, দিঘি কমিটি, মেলা কমিটি, পুরহিত-সেবক ও স্থানীয়রা তীর্থযাত্রী-পূণ্যার্থীদের সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন।

মেলা চলাকালে সুশৃঙ্খল, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানের জন্য পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক তদারকি করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ ন ম বদরুদ্দোজা, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রবাল চক্রবর্তী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিবেদিতা চাকমা, থানার অফিসার ইনচার্জ কেশব চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমদ জুনু, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ইন্সপেক্টর ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী, মেলা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম, দীঘির উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হারাধন দেব, সাবেক সভাপতি মাস্টার বিজন ভট্টাচার্য্য, সাধারণ সম্পাদক নৃপেন্দু দত্ত, অর্থ সম্পাদক আশীষ দেব, দক্ষিণ জেলাপূজা উদযাপন পরিষদের সেক্রেটারি পরিমল দেব, মেলার সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দত্ত, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক পরিমল মহাজন, বরমা ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান আবু জাফর, বরমা প্রাথমিক বিদ্যালয় পিটিএ সভাপতি সাংবাদিক সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল, মেম্বার হারুনুর রশীদ, অমর কান্তি ভট্টাচার্য্য, পুরহিত অসীম ভট্টাচার্য, কমিউনিটি নেতা অরুপ রতন চক্রবর্তী, ডা. কাজল কান্তি বৈদ্য, বিপ্লব চৌধুরী, ডা. বিধান ধর, এডভোকেট রতন সেন, পলাশ দাশ, প্রদীপ দেব, কুইন সাবানের মালিক রুবেল দেব, মেম্বার সোনা দেব, রামপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, বাদল ধর, রঞ্জন দাশ প্রমুখ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট