চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

নারী : সমাজ মানস ও দৃষ্টিভঙ্গি

(গত সংখ্যার পর)

বেগম জাহান আরা

৩ মে, ২০১৯ | ৫:১৬ অপরাহ্ণ

মধ্যবিত্ত পরিবারে ঘরে কাজের লোক তো থাকেই। আজকাল ছোটো সংসারের গৃহিণীরা কাজের বুয়া বা মেয়েই পছন্দ করেন। তাদের সঙ্গে একটু মানবিক ব্যবহার করতে কোনো বাড়তি অর্থ ব্যয় হয় না। তবু দেখা যায়, গৃহিণীদের কেউ কেউ কাজের মেয়ের প্রতি সামান্য কারণে দুর্ব্যবহার করেন। নির্যাতন করেন। এমনকি কোনো কোনো বাসাতে পুরুষ সদস্যরা তার সম্ভ্রমও বিপদগ্রস্ত করে তোলেন। এসব ক্ষেত্রে আইনের চেয়ে ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা এবং সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় কথা, কাজের লোককে নির্যাতন করলে বাড়ির পরিবেশ খারাপ হয়। সন্তান-সন্ততি সেগুলো শেখে এবং ভবিষ্যৎ জীবনে খুব স্বাভাবিকভাবেই সেগুলো রিপ্লে করে।
নারী হলো মায়ের জাত। আমরা বলি, ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা, সব শিশুদের অন্তরে। এই শিশু এবং পিতা শব্দ দুটি বুঝিয়ে দেয় যে আমরা পুত্রসন্তানের কথাই বলতে চেয়েছি। পাশাপাশি তাহলে বলা উচিত, ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর মাতা, সব মায়েরই অন্তরে’। এক কন্যারই তো চার রূপ। পরিবার পরিকল্পনার বরাতে এখন ছোটো ছোটো পরিবারে নানী-দাদিদেরও একটা ভূমিকা দেখা যায়।
সেটা অর্থবহ এবং সম্মানের। যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়ার পর এটা আবার গড়ে উঠছে শিশুদের কল্যাণেই। কাজেই দেখা যায় মেয়েদের কোনো ভূমিকাই কিন্তু ছোটো নয়। তাই মায়ের জাতকে সম্মান ও গুরুত্বের সঙ্গে গড়ে তুলতে হবে আমাদের। সেজন্য চাই ব্যাপক এবং জীবনঘনিষ্ঠ নারী শিক্ষা। সর্বস্তরের নাগরিক তথা মানুষের মধ্যে নারীশিক্ষা প্রসারের সচেতনতা জাগাতে হবে। শিক্ষিত নারীকেও ভাবতে হবে যে, পুরুষ পক্ষ তার সম্পূরক, প্রতিপক্ষ নয়। বেগম রোকেয়া এক শতাব্দী আগে বলেছেন, নারী শিক্ষা এবং নারী মুক্তি ছাড়া সামাজের কল্যাণ সম্ভব নয়। গৃহ থেকেও শুরু হয় সন্তানের শিক্ষা।
জীবনের নানাবিধ আচরণিক শিক্ষা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষিত মায়ের বিকল্প শিক্ষক নেই। আর নারী শিক্ষার সুফল তো সবচেয়ে বেশি পায় পরিবার। এসব দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি বোনদের জন্য সমাজের নারী-পুরুষ উভয়কেই মমতা ও সম্মানের মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। পথেঘাটে বোনের চলাচলে নিরাপত্তা দিতে হবে।
কর্মী বোনদের জন্য পোষণ করতে হবে সহযোগিতা এবং সহমর্মিতা। হিং¯্রতা কিংবা রিপুবশ আচরণে সমাজের সার্বিক ক্ষতিই হয়। নারীকে তাই মানুষের ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাহলে আমরা পাব স্বস্তি এবং শান্তির জীবন। এই কাজ কারো একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এমন সামাজিক মন মানসিকতা গড়ে তোলার জন্য চাই আমার, আপনার সবার আন্তরিক সহযোগিতা। চাই সকলের সংস্কারমুক্ত সুস্থ মনের সবল সমর্থন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট