চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও আমাদের বাঁচার উপায়

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

২২ নভেম্বর, ২০২০ | ৪:৫১ অপরাহ্ণ

হঠাৎ করে দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, সাথে আক্রান্তের সংখ্যাও। ১৭ নভেম্বর সরকারি হিসাব অনুযায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির বিষয়। মৃত্যুর সংখ্যা সামনে আরোও বাড়তে পারে-এটা বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

আমরা যেন করোনা নামক প্রাণঘাতি ভাইরাসটিকে মনে-প্রাণে ভালোবেসে ফেলেছি, বসবাস করছি শান্ত সুবোধ বালকের মতন। স্বাস্থ্য-বিধিকে মোটেই পাত্তা দিচ্ছি না অথবা তোয়াক্কা করছি না। হাটে-বাজারে, লঞ্চ-বাস টার্মিনালে, এয়ারপোর্ট, অফিস-আদালত-সব জায়গায় যেন আমরা একাকার হয়ে গেছি। কারো মুখে কোনো মাস্ক নেই, পিপিই তো দূরের কথা। কেউ বা পেটের দায়ে, কেউ বা ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর হয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য মজুরী করতে বেরিয়েছে নিজস্ব গতিতে-এ গতি যেন থামবার নয়। আমরা বাঙালি জাতি সইবার পাত্র বটে।

সবকিছু আমরা নিজেদের আয়ত্তে আনতে পারি- এটা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি। করোনার লাল চক্ষুকে উপেক্ষা করে আমরা চলছি মেঠো পথ ধরে- কোন সতর্কতা ছাড়াই, এটা আমাদেরকে নিদেনপক্ষে গভীর খাদের কিনারায় নিয়ে যাবে-পা ফস্কে পড়লেই তো আর কোন রেহাই নেই। আর এখন এ ঝুঁকিটা ধেয়ে আসছে অতি দ্রুততার সাথে। বিয়ে উৎসবটাও যেন বসে নেই। দেদারছে চলছে বিয়ের রঙ্গ-কাহিনী। বর-কনের পসরা সাজিয়ে বসেছে কমিউনিটি সেন্টারগুলো আর শপিংমলে ব্যস্ততা বেড়েছে উঠতি তরুণ-তরুণীদের-এ এক ভয়ানক অবস্থা। দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বার বার তাগাদা দেয়া হচ্ছে মাস্ক পরিধান করার গুরুত্বের উপর-এটা যেন চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনীর মতন অবস্থা।

আমরা সবাই কম বেশি বেখেয়ালি হয়ে পড়েছি। অসচেতনতাই করোনা ঝুঁকির দ্বিতীয় ঢেউয়ের বড় কারণ হতে পারে। করোনার প্রাথমিক সংক্রমণের পর থেকে গত ৭ মাসে আমরা ৬ হাজারের অধিক বাংলার দামাল সন্তানদের হারিয়েছি-হারিয়েছি প্রথিতযশা আলেম-বুজুর্গানে দ্বীন, খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি, সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, শিল্পপতিসহ অগুনতি মানুষ। এ করোনা শিক্ষা দিয়েছে আমাদের-এ সমাজে যেন বিশ্বমানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল্-কোরআনকে বার বার ডাকা হয়। কোরআনের প্রতিটি বর্ণকে আকাশ জমিনের মালিক মহান আল্লাহতায়ালার জমিনে প্রতিষ্ঠা করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।

ক্ষণস্থায়ী জীবনকে পায়ের তলায় পিষে ফেলে স্থায়ী জীবনের জন্যে মরণপ্রাণ লড়াই করার শিক্ষা করোনা-ই দিয়েছে। করোনা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে সহনশীল মানবতাবাদী মানুষ হওয়ার, সৃষ্টিশীল মানুষ হওয়ার ও একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবন বিধানকে রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করার। শরীরের সমস্ত ময়লা আবর্জনা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে আল্লাহর একজন নিখাদ বান্দা হওয়ার। করোনার প্রথম ঢেউয়ে আমরা কেউ নড়েচড়ে বসিনি। আসমান জমিনের সমুদয় শক্তি যাঁর হাতে তাঁর পক্ষ থেকে করোনা নামক বিশ্বব্যাপী আণুবিক্ষনিক ভাইরাস অথচ মরণঘাতি করোনা নামক হার্ড ম্যাসেজটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিইনি। আমাদের মাঝে পরিবর্তনের ঢেউ আসেনি। সেজন্যে আবারও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের উপর আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

করোনা থেকে আমরা যেমন শিক্ষা নিচ্ছি না তেমনি এর ভয়াবহতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বোঝা যাচ্ছে। বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যে ফাটল, ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ, অনড়-অসাড় ইসলামী সম্মেলন সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তা আজ মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্ততপক্ষে করোনাকে ভয় করে আমরা যেন ঐক্যের সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হই-সেটা বোঝার সময়টা এসেছে। করোনা শিক্ষা ব্যবস্থার বারোটা বাঝিয়েছে। শিশু-কিশোরদের মেধাবৃত্তি চর্চার অধঃপতন হয়েছে।

হ্যাঁ, করোনা আমাদেরকে পরিশুদ্ধ করেনি। প্রথম নয়, দ্বিতীয় নয়, হয়তো বা হাজারো করোনার ঢেউ আমাদেরকে পারবেনা খাঁটি ঈমানদার বানাতে, খাঁটি মুমিন বানাতে, মহাবিশ্বের মহাগ্রন্থ আল্-কোরআনকে বোঝার এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা করার সেই আশা জাগানিয়া আশংকাও হয়তো হবে না এ কস্মিনকালেও। আফ্সোস এ বাংলার অবাধ্য সন্তানদের, আমরা সবাই যেন অসহায় ইতর প্রাণী এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণুটির কাছে।

 

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক সভাপতি,

রাউজান ক্লাব; সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি)।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট