চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নারীনিগ্রহ প্রতিরোধে চাই সামাজিক আন্দোলন

জুবায়ের আহমেদ

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:২৫ পূর্বাহ্ণ

দেশজুড়ে দিন দিন ধর্ষণ, জেনা-ব্যাভিচার বেড়েই চলছে। ধর্ষণ জোরপূর্বক হলেও জেনা-ব্যাভিচার নারী পুরুষের ইচ্ছাতেই সংঘটিত হয়, রাষ্ট্রীয় আইনে দু’জন প্রাপ্ত নারীপুরুষ উভয়ের সম্মতিক্রমে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে তা অপরাধ না হলেও পরবর্তীতে মনোমালিন্য ও বিরোধের সৃষ্টি হলে পূর্বের জেনা-ব্যাভিচারের বিষয়ে মামলা থেকে শুরু করে নানাপ্রকার সমস্যায় পতিত হয় সংশ্লিষ্টরা। বিবাহবহির্ভূত ইচ্ছাকৃত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন রাষ্ট্রীয় আইনে অপরাধ না হলেও ধর্মীয়ভাবে তা পুরোপুরি নিষিদ্ধ ও কবিরা গুণাহর অন্তর্ভূক্ত। পাশাপাশি দু’জন নারী-পুরুষ ইচ্ছাকৃতভাবে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হলেও পরবর্তীতে বনিবনা না হওয়াসহ নানাবিধ কারণে ইচ্ছাকৃত শারীরিক সম্পর্ককেও ধর্ষণ হিসেবে আখ্যায়িত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেশে ইচ্ছাকৃত কিংবা জোরপূর্বক ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করেছে।

ধর্ষণের বিরুদ্ধে সকলে একত্রে সোচ্চার হলেও জেনা-ব্যাভিচার নিয়ে দ্বিমত আছে মানুষের মধ্যে। তবে ধর্মীয় দৃষ্টিতে জেনা-ব্যাভিচারের ভয়াবহ ফলাফলের মধ্যে পারিবারিক কলহ, দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্ট হওয়া, সামাজিক মর্যাদার ক্ষুণœ হওয়াসহ নানা সমস্যা বিদ্যমান। ধর্মীয় দৃষ্টিতে বিবাহবহির্ভূতভাবে উভয়ের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্কই জেনা-ব্যাভিচার হিসেবে গণ্য হলেও ধর্ষণের ঘটনা তৈরী হয় মূলত পুরুষ কিংবা নারীর একক ইচ্ছাতে বলপ্রয়োগ কিংবা প্রতারণার আশ্রয়ের মাধ্যমে। ধর্ষণের ভয়ংকর থাবা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে, মায়ের কোলের শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, যা পত্রিকার পাতা খুললেই নিয়মিত চোখে পরে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীরাই বেশি ধর্ষণের শিকার হয়, যেখানে পুরুষ আবির্ভূত হয় ধর্ষক হিসেবে, নারীরা হয় নির্যাতিতা। শরীরে যৌন অনুভূতি না আসা কিংবা যৌন অনুভূতির বয়স পেরিয়ে বৃদ্ধাবস্থায় পতিত হওয়া মেয়ে শিশু-মহিলারাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নিয়মিত, যেখানে পুরুষের বিকৃত যৌনলালসা এবং মনুষত্মহীনতাই প্রকাশ পায়। ধর্ষণ প্রতিরোধের জন্য রাষ্ট্র-সমাজ কর্তৃক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও থামছে না ধর্ষণ, পাশাপাশি ধর্ষণের মামলাগুলোতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হওয়ার কারণেও ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।

নৈতিক অবক্ষয়ের ফলেই বহু পুরুষ পশুতে পরিণত হয়, যাদের দ্বারা ঘটে ধর্ষণের মতো জঘন্য ও অমানবিক ঘটনা, যার শিকারে পরিণত হয়ে সম্ভ্রম হারানোসহ মৃত্যুবরণ করে বহু শিশু-কিশোরী-নারী। ধর্ষকরা রাষ্ট্রীয় আইনকে তোয়াক্কা না করার পাশাপাশি ধর্মীয় বিধানকেও উড়িয়ে দিয়ে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হন। রাষ্ট্রীয় আইনে ধর্ষণের জন্য ধর্ষণ, জেনা-ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়ার শাস্তি জাহান্নাম হলেও মানুষরূপী পশুগুলো নিজেদের যৌনলালসা চরিতার্থ করতে হিংস্র বাঘের মতো ঝাপিয়ে পড়েন নারীদের উপর। ধর্মীয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আইনে ধর্ষণ ও জেনা-ব্যভিচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও মানুষরূপী পশুরা মানছে না ধর্মের বাণী, মানছে না সামাজিকতা, মানছে না রাষ্ট্রীয় আইন।
ধর্মীয়ভাবে ধর্ষণ, জেনা-ব্যভিচারের কঠোর শাস্তির বিপরীতে ধর্ষণ, জেনা-ব্যভিচার পরিহারকারীর জন্য সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে এসেছে ‘ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেয়া হবে।’ সুরা যুমার, আয়াত ১০। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ‘তুমি যদি আল্লাহর ভয়ে কোন কিছু ছেড়ে দাও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন।’ (তিরমিজী)। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের দায়িত্ব নিবে, আমি তার জান্নাতের দায়িত্ব নিলাম। (সহীহ বুখারী-৬৪৭৪)।

ধর্মীয়ভাবে ধর্ষণের শাস্তি ও পুরস্কার ঘোষণার বিপরীতে রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্ষণ জঘন্য অপরাধের পাশাপাশি ধর্ষণ, জেনা-ব্যভিচারে কুলষিত হয় সমাজ, ধর্ষিতার মৃত্যু হওয়া ছাড়াও নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়।
ধর্ষণ, জেনা-ব্যভিচারের ফলে সুখের সংসারে নেমে আসে অন্ধকারের কালো ছায়া। একজন পুরুষের কাছে তার নিজ মেয়ে, স্ত্রী, মা-বোন যেমন নিরাপদ তেমনি অন্যের স্ত্রী, মা-বোন, শিশুটিও যেনো নিরাপদ থাকে। ধর্ষণসহ জেনা-ব্যভিচারের মতো জঘন্য অপরাধের যথাযথ শাস্তি প্রয়োগ এবং ধর্ষকরা সমাজেরই একজন, তাদেরও দায়িত্ব আছে সমাজের মানুষগুলোর নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ বসবাস নিশ্চিতকরণের। ধর্ষণ, জেনা-ব্যভিচার শান্তি বয়ে আনে না, বরং একাধিক জীবন অন্ধকারে পতিত হয়, এ সত্যটিকে ধারণ করে ধর্ষণ, জেনা-ব্যভিচার পরিহার করা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট