চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফ্লাইওভার দুর্ঘটনা রুখতে হবে

আজহার মাহমুদ

৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ

যান জট নিরস নের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ফ্লাইওভার। এটা বলা যায় দেশের এবং দেশের মানুষের জন্যই একটি প্রকল্প। কিন্তু সেই প্রকল্প থেকেই যেন মৃত্যুর সংখ্যা বেশি আসছে বর্তমান সময়ে। এসব ফ্লাইওভারগুলো চালুর পর থেকে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানি। রোজ কেড়ে নিচ্ছে কারও না কারও প্রাণ। কেউ বাবা, কেউবা ভাই আবার কেউ স্বজন হারাচ্ছেন এসব ফ্লাইওভারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলোর উপর দিয়ে অধিক গতির ভারী যানবাহন ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের বেপরোয়া চলাচল অন্যান্য যানবাহন চলাচলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের মতে, প্রতিটা ফ্লাইওভারে ডিভাইডার দেয়া জরুরি। এছাড়া স্পিড ব্রেকার না থাকলেও ফিউশন ব্রেকার (সীমিত গতিরোধক) দেয়া উচিত। তা না হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যাবে।

একটি আধুনিক ও নিরাপদ ফ্লাইওভারের জন্য দক্ষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক আইন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের যথাযথ আইনের আওতায় আনা জরুরি। কিন্তু চট্টগ্রামের ফ্লাইওভারগুলোয় পরিকল্পিত কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নেই। এছাড়া, নগরীর ফ্লাইওভারগুলোতে পর্যাপ্ত ডিভাইডার ও নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। নেই ট্রাফিক সাইন। ফলে ফ্লাইওভারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কোনো দিক-নির্দেশনা না থাকায় এর উপর দিয়ে যানবাহনগুলোও চলছে বেপরোয়াভাবে। অধিকাংশ সময়ই এসব ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালায় চালকরা। যানবাহন চলাচল তুলনামূলক কম থাকায় ওভারটেকিংয়ের প্রবণতাও বেশি। যার কারণে দুর্ঘটনার হারও প্রতিদিন বাড়ছে।

গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে এসব ফ্লাইওভারে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় পড়েছে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার। চট্টগ্রামের যে কয়টা ফ্লাইওভার আছে, তার মধ্যে সব থেকে দীর্ঘ ও ঝুকিপূর্ণ আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার। এই ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনার মূল কারণ ভারী যানবাহন, ট্রাক, লরিসহ বালি পাথর বোঝাই ট্রলিগুলো প্রায় ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াত করে।এসব গাড়ির উচ্চ গতি থাকায় এবং ফ্লাইওভারে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটে খুব সহজেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার চালুর প্রায় তিন বছর পর সিডিএ ফ্লাইওভারটিতে ৩০০ মিটারের র‌্যাম্প নির্মাণ করে। তবে মূল ডিজাইনের বাইরে র‌্যাম্প নির্মাণ করায় বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের সঙ্গে র‌্যাম্পটি কৌণিকভাবে সংযুক্ত হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে সড়কের যে কোনো সংযুক্তি অর্ধবৃত্তাকার হওয়ার কথা থাকলেও কৌণিক অবস্থানের কারণে ফ্লাইওভারটিতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন তারা। এছাড়া কদমতলী ফ্লাইওভারটিও যেন মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে। ফ্লাইওভারের রাস্তায় ছোটবড় গর্ত সৃষ্টি এবং যানবাহনের অস্বাভাবিক গতির কারণে এখানে প্রতি মাসে একটি করে দুর্ঘটনা ঘটে। সেইসাথে নিত্য যানজটও লেগে থাকছে সেখানে। ফ্লাইওভারের উপর থেকে নামার সময় হঠাৎ সামনে গাড়ি এসে পড়ে। আবার সড়ক থেকে ফ্লাইওভারে উঠতে গিয়ে প্রথমে বোঝা যায়না উপর থেকে কোন গাড়ি আসছে কিনা। কিছুদূর উঠার পর দেখা যায় দ্রুতগতিতে আসছে কোন বাস বা ট্রাক।

শুধু উচ্চগতি নয়, এসব ফ্লাইওভারে নির্দিষ্ট লেইনে না গিয়ে উল্টো লেইন ধরে গাড়ি চালায় চালকরা। যার মধ্যে মোটরসাইকেলর সংখ্যাই বেশি। তাই উঠানামার পথে প্রায়ই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। আর এসব দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য সেখানে নেই কোন ট্রাফিক পুলিশও। তবে এতোসব অনিয়মের মধ্যে সচেতনতা একটি জরুরী বিষয়। ফ্লাইওভারে একের পর এক দুর্ঘটনার জন্য আত্মসচেতনতাকেও দায়ী করা যেতে পারে। আসুন, নিজে সচেতন হই এবং অন্যকে আগে সচেতন করি। এরপর যে সমস্যাগুলো থাকবে সেটা নিয়ে আমরা আন্দোলন করি। তবেই আমরা আমাদের সোনার বাংলা গড়তে পারবো।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট