চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

রুখতে হবে নারীর প্রতি সহিংসতা

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী

২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০৪ পূর্বাহ্ণ

না রীর প্রতি সহিং সতা যে নো কমছেই না। এই সহিংসতা মাঝে মাঝে এমন লাগাম ছেড়ে যায় যে, রাষ্ট্রযন্ত্রও অনেক সময় খেই হারিয়ে ফেলে। প্রকৃতপক্ষে নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। প্রায়সময় পথে ঘাটে দেখা যায় মেয়েদের প্রতি বখাটেদের উৎপীড়ন। এদের দমানো যেমন রাষ্ট্রের কর্তব্য তেমনি এদের রুখে দেওয়াও আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। মূলত বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি নারী। তাদেরকে বাদ দিয়ে এদেশের উন্নয়ন মোটেও সম্ভব নয়। উপরন্তু এদের প্রতি সহিংসতা তাদের কর্মস্পৃহাকে মলিন করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রথম দিকে এদেশে নারীদের কর্মক্ষেত্রে তেমন একটা দেখা যায়নি। সে সময়ের রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থা নারীদের ঘরে এক প্রকার বন্দি করে রেখেছিল। বর্তমানে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বিপুল সংখ্যক নারী এখন কর্মক্ষেত্রে তাদের অবদান রেখে চলেছে। এসময় নারীর প্রতি সহিংসতা আমাদের অর্থনীতিকেই স্থবির করে দেবে। বর্তমানে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরগুলোতে ব্যাপক সংখ্যক নারী কাজ করে। তাদের সুরক্ষা আইন জরুরিভাবে প্রণয়ন করা প্রয়োজন। প্রতিটি মহিলা কলেজ, মাদ্রাসা এবং স্কুলে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নজরদারি বাড়াতে হবে। একটা বিষয় স্পষ্ট যে, নারীর প্রতি সহিংস আচরণকারীদের সংখ্যা অতি নগণ্য। এদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করাটাই হলো আসল চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি হাইকোর্টের

একটি বেঞ্চ নারীর সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাত দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন ১। ধর্ষণ ও ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইনের নির্ধারিত সময়সীমা অর্থাৎ ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। ২। মামলার শুনানী শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কার্যদিবসে একটা না একটা মামলা পরিচালনা করতে হবে। ৩। ধার্য তারিখে সাক্ষীর উপস্থিতি ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। ৪। কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে মাসে মাসে সুপ্রিমকোর্ট, স্বরাষ্ট্র এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। ৫। সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে মনিটরিং কমিটিকে জবাবদিহি করতে হবে। ৬। সরকারি সাক্ষীরা অর্থাৎ ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডাক্তার বা অন্য বিশেষজ্ঞরা সন্তোষজনক কারণ ছাড়া সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দিতে হবে। ৭। আদালত প্রত্যাশা করছে সরকার অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ করে আদালত এমন নির্দেশনা দিলো কেনো। তথ্য এবং উপাত্ত বলছে দেশে নারীর প্রতি সহিংস আচরণ বেড়ে গেছে। বিশ্লেষক মহলের অভিযোগ নারী নির্যাতন মামলাগুলোর বিচার হচ্ছে না। আর এই কারণেই দিন দিন নারী নির্যাতন বেড়েই চলেছে। আদালতের নির্দেশনায় এই চিত্রই ফুটে ওঠেছে। প্রকৃতপক্ষে আদালতে এইসব নির্দেশনার যথেষ্ট যুক্তি আছে বরে সাধারণ জনগণ মনে করছেন। কারণ চলতি বছরে মার্চ মাস পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতনের যে চিত্র ফুটে ওঠেছে তাতে আদালতের নির্দেশনার যৌক্তিকতাকে আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩৬ হাজার মামলা বিচারাধীন প্রায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে। এর বাইরেও প্রায় হাজার খানেক মামলার বিচার স্থগিত আছে উচ্চ আদালতের আদেশে। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সেসব মামলা বিচারাধীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি বড় সংখ্যা হলো ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন। আবার কোনো কোনো মামলা ২০-২৫ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় আছে। এই যদি হয় নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ক মামলা গুলোর অবস্থা তাহলে বিচার প্রার্থীদের মনের জোড় থাকলো কোথায়? আমরা সবাই একথা খুব ভালো করে জানি যে, নারীর প্রতি সহিংসতার বিচারগুলোতে সহজে সাক্ষী পাওয়া যায় না অনেক সময় কেউ কেউ সাক্ষী দিতে আদালতে আসলেও তা দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া সাক্ষীদের হুমকি ধমকির কারণেও অনেকেই সাক্ষী দিতে চান না। এমতাবস্থায় নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে প্রয়োজন আইনের কঠোর বাস্তবায়ন।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট