চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নৈতিক অবক্ষয়

সাইমুম চৌধুরী

১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:১১ পূর্বাহ্ণ

আজ কের শিশু আগা মী দিনের বাংলা দেশ। শুনতে এবং ভাবতে বড়ই ভাল লাগে। কিন্তু আমাদের শিশুদের বিশেষ করে কন্যা শিশুদের স্কুলে যারা পাঠদান করান (বিশেষ করে পুরুষ শিক্ষক) তাঁরা কেমন চরিত্রের তা কোন অভিভাবকই তলিয়ে দেখি না। ২২ জুলাই একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নৈতিক চরিত্র নিয়ে দীর্ঘ একটি কলাম প্রকাশিত হয়। সম্মানীয় ওই কলাম লেখক হলেন নাছিমা বেগম, সাবেক সিনিয়র সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ইদানিং কন্যা শিশু শিক্ষার্থীরা তাঁদেরই শিক্ষকদের হাতে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বিষয়টি খুবই অশোভন, লজ্জাস্কর এবং বেদনাদায়ক। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের এক শিক্ষক গত ৫ বছরে ২০ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেছে বলে পত্রিকায় প্রকাশ। ওই শিক্ষকের ধর্ষণজনিত খবর তখনই প্রকাশ পায় যখনই ওই শিক্ষক বিগত ২৫ জুন স্কুলের এক শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব (ধর্ষণ) দেয়ার পর শিক্ষার্থী সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করে। মেয়েটি বাসায় গিয়ে তার পরিবারকে জানায়। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে এলাকাবাসী ওই শিক্ষককে গণপিটুনি দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। উল্লেখ্য ওই শিক্ষক জিজ্ঞাসাবাদে তার অপকর্মের কথা স্বীকার করে। নারায়ণগঞ্জের বাইতুল হুদা ক্যাটেড মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে ১২ জন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। নেত্রোকোনার কেন্দুয়ার আঠারোবাড়ীর এক মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৮ জন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করেছে শিক্ষক। এভাবে সারা দেশের স্কুল, মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের দ্বার যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা অনুমান করা কঠিন নয়। অনেক সময় ভয়ে শিশু শিক্ষার্থীরা মা বাবার কাছে ঘটনা প্রকাশ করতে ভয় পায়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে মা বাবাও জেনেও চুপ থাকেন চক্ষু লজ্জার ভয়ে।

১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারী আমার একটি লেখায় আমি আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে একটি তথ্য প্রকাশ করেছিলাম। তাতে উল্লেখ করেছিলাম দেশে ৭২টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩টি মামলা বিচারাধীন। এখন ২০১৯ সালে নিশ্চয়ই অনেক বেড়েছে। সম্প্রতি সোনাগাজীর নুসরাত হত্যার কথা এখনো অনেকের মন থেকে মুছে যায় নি।
নুসরাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কুপ্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় তাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। কোন শিশু বা ছাত্রী যখনি এরূপ কাজে (ধর্ষণ) শিকার হয় বা সম্ভাবনা থাকে তখনি তাদের প্রথম কাজ হল অভিভাবকদের জানানো। একে লজ্জার কিছু নেই বরং চরিত্রহীন শিক্ষকদের মুখোশ খুলে যাবে। অন্যদিকে কন্যা শিশুরা অপমান ও কলুষিত জীবন থেকে রক্ষা পাবে।
কন্যা শিশু ধর্ষণ শুধু বাংলাদেশে নয়। বিশে^র বিভিন্ন দেশে কন্যা শিশুরা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। কিছু দেশে কন্যা শিশুদের যৌন নিপীড়ন থেকে রক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন হয়েছে।

ইউক্রেন সরকার এ বছরের ১১জুলাই সে দেশের পার্লামেন্টে শিশু ধর্ষকদের নপুংষুক করে দেয়ার আইন পাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আলাবাম রাজ্যে ১৩ বছরের কমবয়ষী কন্যা শিশুকে ধর্ষণ করলে ওই একই ধরনের শাস্তির বিধান করা হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্র কাজাখস্থানে ধর্ষকদের রাসায়নিকভাবে খোঁজা (নপুংষুক)করে দেয়ার বিধান আছে।

অনুরূপভাবে আমাদের দেশেও শিশু ধর্ষকদের কঠিন শাস্তির বিধান করে করে নেয়া এখন সময়ের দাবি।

প্রত্যেক শিশু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ আপনার শিশু যখনি এরূপ ঘটনার শিকার হয় তখনি ওই সব চরিত্রহীনদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও আইনি পদক্ষেপ নিন। এতে লজ্জার কিছু নেই। আইনি পদক্ষেপ নিন, আরো দশ শিশুকে ধর্ষকদের হাত থেকে রক্ষায় এগিয়ে আসুন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট